ক্ষমতাসীনদের শোষণ আর লুণ্ঠনে দেশে দুর্বিসহ অবস্থা: মির্জা ফখরুল
তিনি বলেন, 'আজকে বাংলাদেশে শোষণ ছাড়া কিছু নেই। বাংলাদেশের শোষনটাকে দূর করতে হবে। দেশটাকে বাসযোগ্য করতে হবে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ক্ষমতাসীনদের শোষণ আর লুণ্ঠনে দেশে দুর্বিসহ এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এই অবস্থায় দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
দেশের মেগা প্রকল্পগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাঁচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি গ্রন্থ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট কালচারাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘মওলানা ভাসানী বিরচিত মাও সে তুঙ এর দেশে’ শীর্ষক গ্রন্থের নতুন সংস্করনের প্রকাশনার মোড়ক উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ‘শোভা প্রকাশনী’র এই গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন কবি আবদুল হাই শিকদার। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অবসরপ্রাপ্ত উধর্বতন সরকারি কর্মকর্তা সালেহ মাহমুদ রিয়াদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে একটি পত্রিকায় খবরের শিরোনাম হচ্ছে- ‘তরল গ্যাসে গরল হিসাব’। পড়েন রিপোর্টের ভেতরটা, লোম শিহরিয়ে উঠবে যে এতো হাজার হাজার কোটি টাকা কিভাবে বের করে নিয়ে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ১১ হাজার ৬শ ১০ কোটি টাকা গোন। প্রজেক্টটি হচ্ছে- মহেশখালী ভাসমান এলএমএনজি টার্মিনাল। এভাবে প্রত্যেকটা .. অল দিস প্রজেক্টস। একটা একটা করে প্রজেক্ট যদি ধরেন, দেখবেন যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার করে নিয়ে যাচ্ছে। এরকম একটা ভয়াবহ অবস্থা। এই অবস্থার পরিবর্তনে প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদেরকে মুক্তির পথটা খুঁজে বের করতে হবে- কোন পথে গেলে মুক্তি, কিভাবে গেলে মুক্তি আসবে। প্রথম দরকারটা হচ্ছে আমাদের অধিকারটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা লিবারেল ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করি সেজন্য আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। সেই নির্বাচনে যদি আমরা যেতে চাই তাহলে সুষ্ঠু, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার হবে।
ড. আকবর আলী খান তিনি কিন্তু বিএনপি করেন না। গতকাল তিনি বলেছেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এটা শুধু উনার কথা নয়, এটা অনেকেরই কথা। আজকে পাকিস্তানে এতো টারমোয়েলের পরেও দেখেন ওখানে নির্বাচন হবে। কার অধীনে হবে? তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনেই হবে। এই বিষয়গুলোকে বুঝে আমাদের সামনে এগুতে হবে। তিনি বলেন, আজকে আমাদের মুক্তির একটাই মাত্র পথ সামনে খোলা। যে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শহী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তারাও পূর্বে যাদের অবদান আছে তাদেরকে স্মরণ করে, তাদের পথে গিয়ে আমাদেরকে একটা ঘটনা ঘটাতে হবে। চীনের মতো একটা বিপ্লব আমাদের ঘটিয়ে ফেলতে হবে। আমরা জানি যে, সেটা হয়ত সমস্ত মানুষের যে মুক্তি সেই মুক্তির পথ হবে না। কিন্তু জাতীয় মুক্তি পথ খুলতে হবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমাদের স্বাধীনতার জন্যে, জনগনের অধিকারকে বাস্তবায়িত করবার জন্যে, আমরা সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন একটা অভ্যুত্থানের সৃষ্টি করি, যে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের মুক্তি অর্জন করতে পারবো, দেশের মানুষের মুক্তি অর্জন করতে পারবো।
২০০২ সালে ততকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার চীন সফরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওই সফরে আমাদের সঙ্গে আজকের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও ছিলেন। গ্রেট হলের অনুষ্ঠানে গার্ড অব অনার দেয়ার পরে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পরিচয় পর্বে চাইনিজ প্রাইম মিস্টারকে নিয়ে ম্যাডাম যখন একেক করে এগুচ্ছেন। আমার পাশেই ছিলেন আমান উল্লাহ সাহেব, তার পাশেই ছিলেন তারেক রহমান সাহেব। ম্যাডাম যখন বললেন, হি ইজ মাই সান। তখন চীনের প্রধানমন্ত্রী হাত বাড়িয়ে অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে হাত ছাড়তেই বললেন, কেরি দ্যা ফ্লাগ অব ইউর ফাদার এন্ড মাদার। এই কথাটা আমি ভুলতে পারি না। এখন বাংলাদেশের গোটা জাতি বলছে তারেক রহমানকে বলছে, ক্যারি দ্যা ফ্লাগ অব ইউর ফাদার এন্ড মাদার। জিয়াউর রহমান সাহেব যে আদর্শ দিয়ে গেছেন এবং তার যে দর্শন সেটাকে বেগম খালেদা জিয়া সেই পতাকাকে বহন করে নিয়ে গেছেন। এটা এখন সেই পতাকা তুলে দেয়ার দায়িত্ব এসেছে তারেক রহমান সাহেবের ওপরে এবং সেই দায়িত্ব তিনি পালন করছে। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে তিনি তা পালন করতে সক্ষম হবেন।
দেশের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা সাদামাটায় যেটা বুঝি, আমাদের এটা দুঃসহ। এটা সহ্য করা যাচ্ছে না। অস্বাভাবিক দুঃসহ একটা যন্ত্রণা বাংলাদেশের মানুষের কাছে। এই যন্ত্রণা থেকে মানুষ মুক্তি চায়।
পাঠ্য বইয়ে একজনরই নাম বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন যে পাঠ্য বই করেছে স্কুলের বাচ্চাদের জন্য সেখানে কিন্তু একজন ব্যক্তি ছাড়া কারো নাম নাই। অর্থাৎ এদেশের স্বাধীনতা, এদেশের সংগ্রাম, এদেশের মানুষের পরিবর্তনের যে ব্যবস্থা এর কোনটাতেই কারো কোনো অবদান নেই শুধু একজন অবদান ছাড়া। আজকে কি হয়েছে? আজকে বাংলাদেশে শোষণ ছাড়া কিছু নেই। প্রতিটা ক্ষেত্রে হচ্ছে শোষন আর লুন্ঠন। বার বার বর্গীদের কথা মনে পড়ে। যখন এদেশে বর্গীরা আসলো এদেশের সব লুট করে নিয়ে যেতো। এখনো সেই একইভাবে লুন্ঠন চলছে, একইভাবে সব নিয়ে চলে যাচ্ছে। শুধু নিয়ে যাচ্ছে নয়, ভয়াবহভাবে নিয়ে যাচ্ছে।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর বর্ণাঢ্য জীবনের কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সরকার যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে তারা মওলানা ভাসানীকে স্বীকার করতে চায় না। একবারের জন্য কখনো স্বীকার করে না। ভাবতে অবাক লাগে এই মহান অসাধারণ একজন নেতা যিনি বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের খেটে খাওয়া মানুষের পরিবর্তনের জন্য তার সারাটা জীবন দিয়েছেন। তিনি আসামে আন্দোলন করেছেন সাধারণ মানুষের জন্যে। তিনি বাংলাদেশের জমিদারী প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। এক সময় মওলানা কংগ্রেস করেছেন, এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পরবর্তিকালে মুসলিম লীগ করেছেন, এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। অর্থাত তিনি প্রতিমুহুর্তে খোঁজ করেছেন যে কোথায় কোন সংগঠন করলে এই জনগনের মুক্তি হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচাযর্ অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নজমূল হক নান্নু, কবি আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, সাংবাদিক এলাহী নেওয়াজ খান ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews