কারখানার বিষাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, মরে যাচ্ছে মাছ
আশপাশের খাল-বিলের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মরে যাচ্ছে প্রাকৃতিক মাছ। কারখানার ঝুট-বয়লারের বিষাক্ত ধোঁয়ায় চর্ম ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রন্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী।
প্রথম নিউজ, গাজীপুর: গাজীপুর শ্রীপুরের সাটিয়াবাড়ী এলাকায় ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার বর্জ্য ও দূষিত পানিতে কৃষিজমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। আশপাশের খাল-বিলের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মরে যাচ্ছে প্রাকৃতিক মাছ। কারখানার ঝুট-বয়লারের বিষাক্ত ধোঁয়ায় চর্ম ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রন্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে ধলাদিয়া এলাকার কৃষক মফিজ উদ্দিন স্থানীয় ২০ জন কৃষকের সই করা একটি অভিযোগপত্র গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতর বরাবর জমা দেন। ওই পত্রের অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক (ডিসি), শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরও পাঠানো হয়।
কৃষক মফিজ উদ্দিন জানান, ডার্ড কম্পোজিট কারখানা শুরু থেকেই পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা করছে না। প্রতিষ্ঠানটির বয়লারের বিষাক্ত কোলো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কারখানার দূষিত পানি আশপাশের খাল-বিলের পানিতে মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মরে যাচ্ছে প্রাকৃতিক মাছ। এ কারণে এক হাজার একর কৃষিজমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না।
ধলাদিয়া (পশ্চিমপাড়া) এলাকার কৃষক কামাল হোসেন বলেন, ‘ডার্ড কম্পোজিট কারখানার পানি বিলের পানিতে মেশায় মাছ মরে যাচ্ছে। বিলে এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। আগে বিঘাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ মণ ধান পাওয়া যেতো। দূষিত পানির কারণে ১৫ মনের বেশি ধান ওঠানো সম্ভব হয় না। ধলাদিয়া (দক্ষিণ পাড়া) এলাকার কৃষক আব্দুল মতিন ও হেলাল উদ্দিন জানান, যখন ধানে ফুল আসে, তখন ধান গাছের গোড়া পচে মরে যায়। দেশীয় মাছ টেংরা, পুঁটি, কই, দরকিনা ও শিং মাছ এখন বিলে নেই বললেই চলে।
স্থানীয় ক্ষুদ্র ববসায়ী ও দোকানিরা জানান, ডার্ড কম্পোজিট কারখানার বর্জ্যের কারণে বিলের পানি পচে গেছে। পানির গন্ধে বাজারে ও দোকানে বসা যায় না। মসজিদে নামাজ পড়তেও সমস্যা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আগে বিলে শিশুসহ স্থানীয়রা পারুলি নদীতে (ধলাদিয়া দক্ষিণ পাড়া) গোসল করতো, বিভিন্ন কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতো, গরু-বাছুর গোসল করাতো। কিন্তু ডার্ড কম্পোজিট কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে নদীর পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর কোনও কাজে আসছে না। চরম বিপাকে আর ভোগান্তিতে আছে এ এলাকার মানুষ। এ বিষয়ে এলাকাবাসী পরিবেশ অধিদফতর, স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রতি কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় বিন্নাইদ ব্রিজের নিচ দিয়ে বড় পাইপ দিয়ে ওই কারখানার বিষাক্ত কালো পানি ফেলা হচ্ছে ফসলি জমিতে। সেই দূষিত পানি আশপাশের খাল-বিলে মিশে যাচ্ছে। ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আকাশ জানান, এসব বিষয়ে কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কোনও বক্তব্য দিতে পারবো না। তিনি সাংবাদিকেদর হেড অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
রাজাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসিনা মমতাজ বলেন, ‘আমি পাঁচ মাস আগে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নিয়েছি। ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার বর্জ্য ও দূষিত পানি আশপাশের কৃষিজমিতে ফেলায় ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, ‘ধলাদিয়া এলাকার কৃষক মফিজ উদ্দিন সাটিয়াবাড়ী এলাকার ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার বর্জ্য ও দূষিত পানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews