কুমিল্লায় হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের মিছিলে বাধা-হামলা ঢাকায় বিক্ষোভ

গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় কর ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় অন্তত ৪ জন আহত হয়েছেন।

কুমিল্লায় হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের মিছিলে বাধা-হামলা ঢাকায় বিক্ষোভ

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: কুমিল্লায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধা ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় কর ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় অন্তত ৪ জন আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা বিকালে নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এ হামলার জন্য স্থানীয় এমপি’র অনুসারী মহানগর যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেন। 

কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পূজা উদ্‌যাপন নিয়ে সম্প্রতি এক সভা হয়। ওই সভায় সদর আসনের এমপি আকম বাহাউদ্দিন বাহার ‘মদমুক্ত পূজা’ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ই অক্টোবর বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এমপির বক্তব্যকে ‘সাম্প্রদায়িক উক্তি’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা টাউন হল মিলনায়তনে মহানগর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের ব্যানারে এক সভা হয়। পরিষদের সভাপতি শিব প্রসাদ রায়ের সভাপতিত্বে ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আকম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি। তিনি বলেন, তার এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক কারণে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন বিবৃতিতে তিনি হতবাক।

এ সময় কুমিল্লা মহানগর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি শিব প্রসাদ রায়, সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু, কান্তি রাহা, পাপড়ী বসুসহ নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে এমপির ‘মদমুক্ত পূজা’ উদ্‌যাপনের আহ্বানকে স্বাগত জানান এবং এমপির বক্তব্যকে বিকৃত করে বিবৃতি দেয়ার প্রতিবাদে ১০১ জন হিন্দু নেতার স্বাক্ষর সংবলিত একটি প্রতিবাদলিপি পড়ে শোনানো হয়। সভায় ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার মহানগর যুবলীগ-ছাত্রলীগের ব্যানারে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় মিছিল বের করে। এদিন সকালে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও ছাত্র ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা ও মহানগর শাখার ব্যানারে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় পূজার প্রাক্কালে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে প্রতিবাদ মানববন্ধন ও মিছিল করে। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। 

বিকালে নগরীর ঠাকুরপাড়া শ্মশান কালিবাড়ী মন্দির প্রাঙ্গণে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে। এর জন্য এমপি বাহাউদিন বাহারের অনুসারী নেতাকর্মীদের দায়ী করে পরিষদের কুমিল্লা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস বক্‌শী বলেন, মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালায়। এতে অদ্বৈত দাস, সুশীল দাস, তন্ময় দাসসহ ৩ জন আহত হন। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান। এ সময় পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে জানার জন্য কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ শহীদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। এমপির মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আহাম্মদ সনজুর মোর্শেদ বলেন, সংঘাত এড়াতে পুলিশ মিছিলটি কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বরে যেতে দেয়নি। কারণ, কান্দিরপাড়ে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলেন। এতে সংঘাত আরও বেড়ে যেতো। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বলেন, আহতদের বাসায় গিয়ে তাদের খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনাসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় সব ধরনের আইনি সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

কুমিল্লায় হামলার প্রতিবাদে শাহবাগে অবস্থান হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের
স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুমিল্লায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে পরিষদের নেতাকর্মীরা। গতকাল শাহবাগ থানার সামনে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। এদিন বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করেছে পরিষদ।
ঐক্য পরিষদের পূর্বঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে হচ্ছিলো। কর্মসূচি চলাকালে ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতারা মুঠোফোনে কুমিল্লায় হামলার খবর পান। কুমিল্লায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে জানায় পরিষদের নেতারা। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে যান পরিষদের নেতাকর্মীরা। শাহবাগ মোড়ে কিছু সময় অবস্থান করেন তারা। সেখানে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্য দেন। পরে পুলিশের অনুরোধে তারা শাহবাগ মোড় ছেড়ে শাহবাগ থানার ফটক থেকে কয়েক গজ দূরে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। শাহবাগে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লব আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাশকে সাম্প্রদায়িক গালি দেন। মৃণাল কান্তির বিরুদ্ধে জনসমক্ষে আরও নানান সাম্প্রদায়িক কটূক্তি করেন। সেদিনের ঘটনার তারা নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ফয়সালের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সাংগঠনিক, আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছিলেন তারা। ৪ঠা অক্টোবর কুমিল্লা জেলা পরিষদ কার্যালয়ে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে একটি সভা হয়। সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লাখ লাখ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন। ঐক্য পরিষদ প্রতিবাদ জানালে তিনি প্রতিহতের ঘোষণা দেন। অন্যদিকে কুড়িগ্রামে চারণকবি রাধাপদ রায়কে আহত করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের দাবির মুখে মূল হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পরিষদের এই নেতা আরও বলেন, তাদের ভোটে যারা সংসদ সদস্য হন, গাড়ি পান, আজকে তারাই তাদের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দুর্গাপূজা সামনে রেখে তারা বলে আসছিলেন, এই উৎসব যাতে শান্তিপূর্ণভাবে না হতে পারে, সে জন্য মহলবিশেষ চেষ্টা করছে। সাম্প্রদায়িক গালিগালাজ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, দুর্গাপূজার প্রাক্কালে মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের প্রতিবাদ, দুর্গাপূজার ছুটি ৩ দিন করাসহ নানা দাবিতে পরিষদ সারা দেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছিল। কর্মসূচি চলাকালে তারা কুমিল্লায় হামলার খবর পেলেন। আজকে তারা যন্ত্রণায় কাতর, তাদের অন্তর জ্বলছে। কুমিল্লায় হামলার ঘটনায় যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তত একজন গ্রেপ্তার না হবেন, ততক্ষণ তাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে। কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন পরিষদের নেতা মণীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, যুব ঐক্য পরিষদের নেতা শ্যামল দেবনাথ, দিলীপ ঘোষ প্রমুখ।