কাঁকড়া নদীর ওপর চার বছরেও হয়নি ১৫ কোটি টাকার সেতু, খোঁজ নেই ঠিকাদারের

প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২২ সালে এসেও সেতুর প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে দুই ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।

কাঁকড়া নদীর ওপর চার বছরেও হয়নি ১৫ কোটি টাকার সেতু, খোঁজ নেই ঠিকাদারের

প্রথম নিউজ, দিনাজপুর: দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় কাঁকড়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুর কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি।

জানা যায়, ভিয়াইল ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে কাঁকড়া নদী। নদীর পশ্চিম পাশে ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, ইউপি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও নদীর পূর্ব-উত্তরে চিররবন্দর উপজেলা শহর। নদীর পূর্ব পাশে ইউপি সেবা নিতে গেলে মানুষকে প্রায় সাত থেকে আট কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয় বা নৌকায় পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। নদীর পশ্চিম পাশের মানুষ উপজেলা শহর কিংবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের অক্টোবরে ১৭৫ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতুটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। ২০২২ সাল শেষ হতে চললেও সেতুর এখনো ৫০ ভাগ কাজ বাকি আছে।

দরপত্র আহ্বান করার পর সেতু নির্মাণকাজের দায়িত্ব পেয়েছিলে সুরমা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

উপজেলা ভিয়াইল গ্রামের রুবেল হোসেন বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে আছে। মাঝেমধ্যে ছয়-সাতজন শ্রমিক আসে আবার দুই থেকে তিন মাস খবর নাই। ২০১৯ সালে কাজ শেষ হওয়ার থাকলেও ২০২২ সাল চলে এখন। সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কোনো নমুনাই দেখা যায় না। তিনি আরও বলেন, এই ইউনিয়নের মানুষের সদরে যাতায়াতে এ নদীই প্রধান সমস্যা। এ ছাড়া ভিয়াইল ও পুন্ট্রি ইউনিয়নের মানুষের প্রয়োজনীয় কাজে, কষিপণ্য পরিবহনে এই নদীতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। এখানে বছরের প্রায় আট মাস পানি থাকে। বিশেষ করে বর্ষার সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় লক্ষাধিক মানুষকে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইমরান হাসান বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতিতে সেতুটি নির্মাণ প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এত দেরি হওয়ায় আমরা চিন্তিত। কবে এর কাজ শেষ হবে, কেউ বলতে পারছে না। নদীর দুই পারের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে খুবই সমস্যা হয়। সময়মতো নদী পার হতে না পারায় ক্লাসে যোগ দিতে দেরি হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী জবেদ আলী বলেন, সেতু নির্মাণে যেমন ঠিকাদারের গাফিলতি রয়েছে, সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের তদারকির চরম অভাব। এ কারণে দীর্ঘ কয়েক বছর সময় চলে গেলেও সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।

ভুক্তভোগী পরিমল রায় বলেন, ব্রিজ খান না হয়্যা খুব কষ্ট করির নাগোছে। নদী ওপারে ইউনিয়ন পরিষদ যেকোনো কাজে নদী পার হয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যাবার হয়। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকিলে টপ করি যাওয়া যায় না। মাত্র একখান নৌকা ঘাটে থাকায় সময় মতন পরিষদে যাবার পারি না।

চিরিরবন্দর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুক হাসান  বলেন, ঠিকাদারের বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ রাখায় সেতু নির্মাণকাজে কিছুটা দেরি হয়েছে। তাদের অনেকবার চিঠি দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। বর্ষা মৌসুমের পরেই তারা পুনরায় কোনো সাড়া না দিলে বাতিল আবেদন চেয়ে বাকি কাজ শুরু করা হবে। তবে সেতুটির পিলারসহ অন্যান্য কাজ মোটামুটি ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ঠিকাদারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুক হাসানের কাছে ঠিকাদারের নম্বর চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ঠিকাদারকে তিনিই খুঁজে পান না বলেও জানান তিনি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom