ঐক্যবদ্ধ না হলে ধ্বংস কেউ ঠেকাতে পারবে না: লেখক-বুদ্ধিজীবী-শিল্পীরা
শনিবার (১৯ আগস্ট) প্রেস ক্লাবে রাষ্ট্রচিন্তার আয়োজনে ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতা: চিন্তক-চিন্তক-লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটাধিকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ না হলে আমাদের ধ্বংস কেউ ঠেকাতে পারবে না বলে জানিয়েছেন লেখক-বুদ্ধিজীবী-শিল্পীরা।
শনিবার (১৯ আগস্ট) প্রেস ক্লাবে রাষ্ট্রচিন্তার আয়োজনে ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতা: চিন্তক-চিন্তক-লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ, সাংবাদিক ও লেখক ফিরোজ আহমেদ, সাহিত্যিক রাখাল রাহা, শিক্ষক মোশরেকা অদিতি হক, শিক্ষক আর রাজী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব গোলাম শফিক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সালাহউদ্দীন শুভ্র, এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সেলিম খান, পরিকল্পনাবিদ খন্দকার নিয়াজ রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আবুল কালাম আল আজাদ, হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
আসিফ নজরুল বলেন, দেশ ও জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। সরকারপন্থিরা নির্লজ্জ ও ঐক্যবদ্ধ। আমরা কেন বিচ্ছিন্ন? আমাদের কেন আলাদা থাকতে হয়? আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকারের মিথ্যা বয়ানগুলো গুঁড়িয়ে দিতে হবে। আজকের আয়োজন ভীষণ জরুরি ও সময়োপযোগী।
তিনি বলেন, তারা (আওয়ামীপন্থি লেখক/বুদ্ধিজীবী) নির্লজ্জভাবে মিথ্যা বলে যে, সমস্ত খারাপ কিছু শুরু হয়েছে ৭৫ এর পরে। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতনমূলক ভূমিকা রেখেছে বঙ্গবন্ধু তাদেরকে পুনর্বাসিত করেছিলেন। তারা মিথ্যার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে আমরা সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি না কেন? সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সাহস দেখাতে হবে। আমাদের কথা প্রকাশ করার জন্য পত্রিকা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চুম্বক অংশগুলো প্রকাশ করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। জনপ্রিয় দল শয়তান হলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক কষ্ট। হীনমন্যতা ঝেড়ে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
মোশরেকা অদিতি হক বলেন, সংঘবদ্ধতার কোনো বিকল্প নেই। সংঘবদ্ধ হয়ে এক প্ল্যাটফর্মে না এলে আমাদের ধ্বংস কেউ ঠেকাতে পারবে না। বুদ্ধিজীবী একটা অবিরাম সংগ্রামের ব্যাপার। আমাদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করা হচ্ছে। শ্বাস কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
সালাহউদ্দিন শুভ্র বলেন, বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে লেখক, শিল্পীরা। এটা ন্যক্কারজনক। এই সরকারকে উৎখাতে বৃহত্তর মোর্চা গঠনের সময় এসেছে।
রাখাল রাহা বলেন, লেখক-বুদ্ধিজীবী-শিল্পী-সাহিত্যিকদের অন্তত দুটি বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে হবে। ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। এই দুই নূন্যতম দাবিতে কোনো ছাড় নয়। যে সরকার যে আদর্শ নিয়েই ক্ষমতায় আসুক এই দুটি জিনিস লঙ্ঘন করলে আমরা বসে থাকব না।
মাহবুব মোর্শেদ বলেন, বিদ্যমান বাস্তবতা আমরা সবাই জানি। এখন সময় অ্যাকশন প্ল্যানের। কর্মপন্থা নির্ধারণের। ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তৈরি করতে হবে। ইতিহাসের মুহূর্ত ধরা এবং মুহূর্ত তৈরি করা আমাদের কাজ। সেই কাজে বেশিরভাগ লেখক সাহিত্যিকরা মোটাদাগে নিশ্চুপ। কিন্তু আমাদেরকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকতে হবে। আওয়ামী বয়ানের ছায়াতল থেকে মুক্ত হতে হবে।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের সর্বোচ্চ দশা চলছে দেশে। খাদিজার মতো এক সাধারণ শিক্ষার্থী মাসের পর মাস জামিন পাচ্ছে না। আগে রাজনীতি করে ঘরে ফেরার ব্যাপারে কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। এখন ঘরে ফেরা যাবে কি না সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা নেই। পুরোনো বুদ্ধিজীবীদের আবেদন ফুরিয়ে গেছে। প্রত্যেক সময় তার নিজস্ব বুদ্ধিজীবী তৈরি করে, এখনকার বুদ্ধিজীবীদের প্রমোট করতে হবে যারা সময়ের বেদনাকে ধারণ করে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে চরম দুঃশাসন চলছে। যেকোনো সংকটে লেখক, সাহিত্যিকরা অগ্রসর থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে লেখক, সাহিত্যিকরা মোটাদাগে নিশ্চুপ আছে। তারা বর্তমান সরকারের বয়ানের মধ্য বাস করতে আরাম পায়। ঝুঁকি নিতে চায় না। এর মাশুল বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সৃষ্টির লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা। কিন্তু আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এগুলো কেড়ে নেয়া হয়েছে। ২০১৪ ও ১৮ সালে দুটি ভুয়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলোতে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার টিকে আছে মানুষের ভোট হরণ করে।