ইতিহাসের সবচেয়ে কৃপণ নারী

ইতিহাসের সবচেয়ে কৃপণ নারী

প্রথম নিউজ, অনলাইন :  সঞ্চয় করা ভালো। তাতে ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। কিন্তু সঞ্চয় যদি নেশায় পরিণত হয়, এক সময় তা মিতব্যয়ীতার গণ্ডি পেরিয়ে কৃপণতায় পরিণত হয়। কৃপণাতাও খুব খারাপ অভ্যাস—সেটা বলার উপায় নেই।
কিন্তু কৃপণতা যখন মাত্রা ছাড়িয়ে হাড় কৃপণে পরিণত হয়, তখন সেটাকে আর ভালো বলার উপায় নেই।

পৃথিবীর সবচেয়ে কৃপণ মানুষ কে, সে হিসাব কষতে বসলে অনেকেরেই নাম এসে যেতে পারে। কিন্তু যদি বলা সবচেয় কৃপণ নারী কে? তাহলে একটা নামই আসে ঘুরেফিরে— হেট্টি গ্রিন।

তাঁর হেনরিয়েটা হাওল্যান্ড গ্রিন।
তবে হেট্টি গ্রিন নামে পরিচিত। ১৮৩৪ সালের ২১ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

তিমি শিকার, শিপিং এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছিল তাঁর পরিবার। সেই ব্যবসার উত্তরাধিকার হয়েছিলেন হেট্টি গ্রিন।
 

শৈশব থেকেই হেট্টি ছিলেন ব্যবসা এবং বিনিয়োগে দক্ষ। মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি পারিবারিক অ্যাকাউন্টস পড়তে শুরু করেন। ১৩ বছর বয়সে তিনি বিনিয়োগের কৌশল শিখে ফেলেন। ১৮৬৫ সালে তার বাবা ও চাচার মৃত্যুতে প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ডলার সম্পদের উত্তরাধিকারী হন।

হেট্টি তার সম্পদ সঞ্চয়ের পাশাপাশি বন্ড, রিয়েল এস্টেট এবং রেলওয়ে শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন।
মার্কিন অর্থনীতির চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যেও তিনি তার সম্পদ নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের মাধ্যমে বাড়িয়ে তুলেছিলেন।
হেট্টি গ্রিন তার কৃপণতার জন্য আজও আলোচিত।

শোনা যায়, শীতকালে গরম পোশাক কেনার খরচ বাঁচাতে তিনি একটি পুরনো কালো পোশাকই বছরের পর বছর ব্যবহার করতেন। তাঁর ছেলে নেড একবার পায়ে চোট পান। হেট্টি বিনামূল্যে চিকিৎসার চেষ্টা করেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হয় তাঁর ভাবনা। চিকিৎসায় কার্পন্য ভালো চিকিৎসা পাননি নেড, ফলে তাঁর পা কেটে ফেলতে হয়।

একবার হেট্টি নিজেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তার না দেখিয়ে তিনি স্থানীয় ক্লিনিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার চেষ্টা করেন।

প্রতিদিনের খাবারের জন্য তিনি মাত্র দুই সেন্ট। এ পয়সা একটি পাই (Pie) কিনে খেতেন। খাবারের খরচ কমাতে তিনি দোকান থেকে ভাঙা বিস্কুট এবং অবশিষ্ট কেকও কিনতেন। কুকুরের জন্য দোকানদারের কাছ থেকে প্রতিদিন একটি ফ্রি হাড়ের জন্য তর্কতর্কি এমনকী ঝগড়া পর্যন্ত করতেন।

তেমনি সাবান খরচ বাঁচানোর পুরো পোশাক না ধুয়ে শুধু ময়লা অংশ ধুয়ে নিতেন। শীতকালে তিনি বাড়ি গরম হিটার ও ফায়ার প্লেস ব্যবহার করতেন না। খরচ বাঁচানোর জন্য শুধু একটি পুরনো কম্বল ব্যবহার করতেন।

নিজের আলাদা অফিসের ব্যয় বাঁচানোর জন্য তিনি পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে কাজ করতেন। কারণ সেখানে আলো ফ্রি ছিল। আলো জ্বালানোর বৈদ্যুতিক খরচও এভাবে বাঁচাতে তিনি।

এধ ধনী মানুষ, তবু তিনি বিলাসবহুল কোনো পরিবহন ব্যবহার করতেন না। সাধারণ ট্রেনের টিকিট কিনে যাতায়াত করতেন।

 

১৯১৬ সালে ৮১ বছর বয়সে তিনি মারা যান। মৃত্যুর সময় তার সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার। আজকের বাজারে সম্পদের মূল্য ৪ বিলিয়ন ডলারের সমান।

তাঁর ছেলে-মেয়েরা মায়ের মতো কৃপণ ছিলেন না। তাঁরা ধীরে ধীরে এই সম্পদ বিলাসী জীবনযাপন করে শেষ করে ফেলেন। তবে তাঁর মেয়ে সম্পদের কিছু অংশ দিয়ে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।

হেট্টি গ্রিনের জীবন ছিল কৃপণতা এবং আর্থিক দক্ষতার এক অদ্ভুত মিশ্রণ। যদিও তার মিতব্যয়িতা অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে, তবে আর্থিক সাফল্যের কারণে ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ করেছেন তিনি।

সূত্র: ব্রিটানিকা