‘আলোচনার মধ্য দিয়েই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে’
রোববার সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত ‘সমঝোতা নাকি সহিংসতা : কোন পথে আমরা?’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘাত এড়াতে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, আলাপ-আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। দুদলের অনড় অবস্থান দেশকে সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে সংলাপ-সমঝোতার পথ একেবারে রুদ্ধ হয়নি। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দুপক্ষের দ্রুত আলোচনার টেবিলে বসা প্রয়োজন। নিজেদেরই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সংকট সমাধানে কী করতে হবে, সেগুলো নিয়ে অতীতেও আলোচনা হয়েছে। বলা হচ্ছে-তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে ক্ষমতাসীনরা আর থাকবে না, আর তত্ত্বাবধায়ক না এলে যারা ক্ষমতায় আছে তারাই থাকবে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ভোটের তেমন পার্থক্য নেই, উনিশ-বিশ। কাজেই একটি দলকে বাইরে রেখে শাসনব্যবস্থা চলতে পারে না।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন, তারা ভাবছেন রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে বেশি বেশি টাকা-পয়সা কামানো যায়। উত্তরোত্তর ধনী হওয়ার প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের মিষ্টি কথায় সরানো যাবে না। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকট আছে, যেটার সমাধান দেখছি না। তবে বিশ্বাস করি, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কী করে দলগুলো আলোচনা করবে, সেটা বুঝতে পারছি না। দুই মেরুতে দুদল। এ নিয়ে সমঝোতার বিষয় আছে। কতগুলো বিষয় আরও আগে আমাদের ফোকাস করা উচিত ছিল। সমঝোতার বিষয়টি সংবিধানেও আছে।
মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সব পক্ষ ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার জন্য বিভোর। তারা বিকল্প চিন্তা করতে পারে না। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আসলেই চিন্তিত। দেশ এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির না, সুপার পাওয়ারগুলোর খেলার জায়গা। দুদলের দুটি শক্তিশালী গ্র“প আছে, যারা কোনো অবস্থাতেই সমঝোতার দিকে নিয়ে যেতে চান না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি। তিনি বলেন, সব সমস্যার সমাধান এক বসাতে হয়ে যাবে না। প্রতি ৫ বছর পরপর নির্বাচন এলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এককভাবে কোনো দলের পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির সাবেক সংসদ-সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, সমঝোতার ন্যূনতম লক্ষণ দেখছি না। রাজপথে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দাবি আদায় করতে হবে। এতে গৃহযুদ্ধ যদি নাও হয় প্রচুর রক্তপাতের শঙ্কা করছি।
জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সবার আগে সমঝোতা চাই, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসতে হবে। বিদেশিরা গণতন্ত্রকে শুদ্ধ করে দিতে পারবে না। তবে তাদের সহায়তা ছাড়া বিরোধীদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিও তৈরি হতো না।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ১৯৯৬ সালে যে পরিস্থিতির জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল, গত ২৭ বছরে সে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের লোকজন আরও বেশি দলীয়করণ হয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য ৩১ দফা ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে আলোচনা সম্ভব নয়।
বিরোধী দলগুলোর ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, যারা ৩১ দফা দিয়েছেন, ক্ষমতায় গেলে এই দফা তারা বাস্তবায়ন করবেন, এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে সুজনর জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক সেকান্দার খান বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। সাধারণ মানুষকে নিয়ে তারা চিন্তা করছে না। সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সচেষ্ট হলে নির্বাচন নিয়ে তাদের ভয় থাকত না।
সভায় সুজন’র পক্ষ থেকে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ১৭ দফার জাতীয় সনদের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার এটি পড়ে শোনান। জাতীয় সনদে সম্ভাব্য ঐকমত্যের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, কার্যকর জাতীয় সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, প্রশাসনিক সংস্কার, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংরক্ষণের মতো বিষয় রয়েছে।
এ বিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই বিষয়গুলো প্রাথমিক বিষয় হিসাবে ধরে নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। ঐকমত্য সৃষ্টির মাধ্যমে ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন ও স্বাক্ষর করা সম্ভব হলে রাজনীতিতে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হবে।