আনোয়ারুজ্জামানের মঞ্চে জাতীয় পার্টির নেতা এহিয়া
এতে তার ওপর ক্ষুব্ধ জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। এহিয়ার কর্মকান্ড নিয়ে তিনি দলের হাইকমান্ডের কাছে বিচারপ্রার্থীও হয়েছেন।
প্রথম নিউজ, সিলেট: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের মঞ্চে উপস্থিত হয়ে তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এতে তার ওপর ক্ষুব্ধ জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। এহিয়ার কর্মকান্ড নিয়ে তিনি দলের হাইকমান্ডের কাছে বিচারপ্রার্থীও হয়েছেন। এহিয়া সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের পর গত সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি তিনি গ্রহণ করেননি। সিলেট নগরের ১৮নং ওয়ার্ডের ঝেরঝেরি পাড়ার বাসিন্দা এহিয়া। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ ওয়ার্ড থেকে তার ছোটভাই কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অল্প ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তার ভাই।
এ কারণে এহিয়া কয়েক দিন ধরে সিলেটে অবস্থান করছেন। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেয়র প্রার্থীরা প্রতিদিনই নগরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মতবিনিময়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার রাতে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে ঝেরঝেরি পাড়া এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করতে সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এলাকাবাসীর পক্ষে দেয়া ব্যানারেও বিশেষ অতিথি হিসেবে নাম রাখা হয় এহিয়ার। এলাকাবাসীর সঙ্গে নৌকার প্রার্থীর মতবিনিময় সভায় যথাসময়েই হাজির হন এহিয়া। তাকে মঞ্চে নৌকার প্রার্থী আনোয়ারের বামপাশে বসানো হয়। এ ছাড়া রাজনৈতিক নেতা ও এলাকার মুরব্বিরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সিলেট-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইয়াহইয়া চৌধুরী। তবে গত নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়ে জামানত হারান। গত নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট-২ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তাদের দু’জনের বাড়িই একই এলাকায়। এদিকে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতাকালে সাবেক এমপি এহিয়া সিলেট নগরের উন্নয়নের স্বার্থে নৌকার পক্ষে ভোট চান। তিনি বলেন- ‘দলমত নির্বিশেষে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করে সিলেটের উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানকে বিজয়ী করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আনোয়ারুজ্জামান একজন ভালোমনের মানুষ। দীর্ঘদিন থেকে আমি তাকে চিনি। তিনি নগরবাসীর উন্নয়নে কাজ করতে বদ্ধপরিকর। আগামী ২১শে জুন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান তিনি।’ নৌকার প্রার্থীর পক্ষে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি’র উপস্থিতি ও বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে সিলেটে।
জাতীয় পার্টিতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত এ ঘটনা। এ ব্যাপারে গতকাল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি সাবেক এমপিকে মীরজাফরের সঙ্গে তুলনা করে বলেন- ‘আমি দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর বার বার এহিয়াকে ফোন দিয়েছি। আমার প্রোগ্রামে এসে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছি। তিনি আমার ফোন রিসিভ করে বার বারই বলেছেন, ঢাকায় আছেন। এসে যোগাযোগ করবেন। এখন দেখি তিনি নৌকার প্রার্থীর মঞ্চে ভোট চাইছেন। এটা কেবল মীরজাফরদের দ্বারাই সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বাবুল।’ তিনি বলেন- ‘এহিয়ার বক্তব্যের ভিডিওসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট আমি দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি এবং বলেছি; এ ধরনের মীরজাফররা দলের বিরুদ্ধে মাঠে থাকলে আমি নির্বাচন করবো না। পার্টির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে আমাকে সান্ত¡না দেয়া হয়েছে।
দলের হাইকমান্ড বিষয়টি দেখছেন বলে জানান তিনি।’ এ ব্যাপারে সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টি নেতা ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া জানিয়েছেন- ‘আমি বর্তমানে দলে কোন অবস্থায় আছি জানি না। এক বছর আগে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।’ তিনি বলেন- ‘আমি যদি দলের কেউ হতাম তাহলে তো সিলেটে মনোনয়ন দেয়ার আগে প্রার্থিতা সম্পর্কে অবগত করা হতো। কিংবা প্রার্থী নিজে এসে অবগত করতেন। কিন্তু কেউ আমাকে অবগত করেননি। গত দু’দিন আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তার এলাকায় গিয়ে মতবিনিময় করে গেছেন। এ মতবিনিময় সভার বিষয়টি তাকে জানানো হয়।’ এহিয়া জানান- ‘ঝেরঝেরি পাড়ার অনুষ্ঠানে আমি অতিথি ছিলাম। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আয়োজনে আমি গিয়েছি। আরও যেসব মেয়র প্রার্থী আছেন তারাও মতবিনিময় করতে চাইলে এলাকার লোক হিসেবে উপস্থিত থাকবো। এই উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান এহিয়া।’