আন্দোলন জোরদার করতে তৃণমূলে বিএনপি
চূড়ান্ত কর্মসূচির আগে জনসম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে চায় * স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তালিকা তৈরি, শিগগিরই বৈঠক
প্রথম নিউজ, অনলাইন : জনসম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে বিএনপি। বিদ্যুৎ-গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন আরও জোরদার করতে চায় দলটি। এজন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি দিয়েছে। ধাপে ধাপে উপজেলা ও জেলায়ও কর্মসূচি দেওয়া হবে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে চূড়ান্ত কর্মসূচি দেওয়ার আগ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আরও কাছে যেতে চায় বিএনপি।
এদিকে তৃণমূলের এসব কর্মসূচিতে দলের সব নেতার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে বিভিন্ন সময়ে রাগে, ক্ষোভে আর অভিমানে দূরে থাকা নেতাকর্মী কিংবা সমর্থকদেরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। অতীতে বিএনপির সমর্থনে বিজয়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একটি তালিকা তৈরি করছে। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর। এজন্য দশ সাংগঠনিক বিভাগে সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে পৃথক টিমও গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে দলসমর্থিত প্রায় ৪ হাজার জনপ্রতিনিধির খোঁজ পাওয়া গেছে। শিগগিরই তাদের নিয়ে বিভাগভিত্তিক ভার্চুয়াল বৈঠক করবে দলটির হাইকমান্ড। বিএনপি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘এই সরকারের পতনের জন্য জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার জন্য আমরা সব মানুষকে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে চাই। ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছি। এটা হচ্ছে জনগণের আরও কাছে যাওয়া। এর আগে বিভাগীয় সমাবেশ করেছি। জনগণের কাছে গিয়েছি। এতে তারা ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সমাবেশে এসেছে। এটা একটা বড় ধরনের সম্পৃক্ততা। আর এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচির মাধ্যমে একেবারে মানুষের দুয়ারে যাওয়া। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের একটা বহুমুখী চিন্তা আছে। যেহেতু এটা জনগণের দাবি ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন। এখানে তাদের (জনগণের) ভূমিকাটা সবচেয়ে মুখ্য মনে করছি। তাদের ভাবনার বিষয়কে চিন্তা করেই আমরা কর্মসূচিগুলো দিচ্ছি। সুতরাং জনসম্পৃক্ততা এখানে মুখ্য বিষয়। নেতাকর্মীরা তো যে কোনো সময় নামবে, আছে, থাকবে। এটা কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আন্দোলনটা হচ্ছে জনগণের, তাদের মুক্তির জন্য। তাদের সম্পৃক্ত করতে যে ধরনের কর্মসূচি দেওয়া দরকার বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সবাই মিলে সবকিছু ভেবেচিন্তে সেই কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।’
গত শনিবার নয়াপল্টনে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার নতুন কর্মসূচি দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এবার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে পদযাত্রা শুরু করব। এরপর ধীরে ধীরে উপজেলা, জেলা ও মহানগরে হবে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দিয়ে বর্তমান সরকারের ক্ষমতার মসনদ জনগণ দখল করে নেবে। জনগণের সরকার গঠন করবে।’ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, এটিই মূলত সরকার পতনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনের রোডম্যাপ। যা ধাপে ধাপে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জোট একইদিন পৃথকভাবে পালন করবে।
নেতারা বলেন, যারা জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে, তারা চায় সহিংসতা। কিন্তু সে ফাঁদে জনগণ পা দেবে না। দেশের মানুষ এটা চায় না। তারা চায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর, নির্বাচিত সরকার। সুতরাং আন্দোলন সেদিকেই চলছে। এটাই আন্দোলনের ধারা। জনশক্তির বিরুদ্ধে কোনো অপশক্তি থাকতে পারে না। এটা দেশের মানুষ সব সময় প্রমাণ করেছে। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের (সাধারণ জনগণ) উপস্থিতির মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, প্রথম দফার আন্দোলন নানা বাধা সত্ত্বেও সবকিছু উপেক্ষা করে সফল হয়েছে। প্রথম ধাপের আন্দোলনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে গেছে। ২০১৪ সালের এক মডেল ও ২০১৮ সালের আরেক মডেলের নির্বাচন করেছে। এবার আর কোনো মডেল কাজ করবে না। তার কোনো সুযোগ নেই। মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় নিতে হবে, ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তারা নির্বাচিত সংসদ দেখতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ ও বিদেশি যারা গণতান্ত্রিক শাক্তি আছে সবার কাছে এখন একটাই মডেল, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটা নিরপেক্ষ সংসদ গঠিত হবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, ‘বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ। এ রাজনীতির মাধ্যমেই দেশের অবৈধ দখলদার সরকারের পরিবর্তন হবে। এ পর্যন্ত আমাদের সব কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ। আর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যদি জনগণের সমর্থন থাকে, অংশগ্রহণ করে তাহলে অবৈধ সরকার পরিবর্তনের বিশ্বে অনেক নজির আছে। কিন্তু জনগণের সমর্থন নিয়ে আসতেই হবে। জনগণ বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যেভাবে এসেছে, তাতে প্রমাণ করে বিএনপির কর্মসূচিতে তারা সমর্থন করে। সরকারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গ্রেফতার, নির্যাতন-নিপীড়ন উপেক্ষা করে যে কর্মসূচি সফল হতে পারে, সেটা তো প্রমাণ হয়ে গেছে। যারা মনে করে অস্ত্র নিয়ে, পেশিশক্তির মাধ্যমে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান করে সফল হবে, তা কখনো হবে না। বিভাগীয় সমাবেশই তার প্রমাণ।’
সূত্র মতে, দেশের সব মহানগরের সাংগঠনিক শক্তি দেখতে ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। ঢাকা মহানগরে চার দিনের পদযাত্রাসহ অন্যান্য মহানগরেরও বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল। যা নিয়ে সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এখন দলটির চোখ তৃণমূলে। সেখানে ধাপে ধাপে কর্মসূচি পালন করে সাংগঠনিক শক্তি প্রমাণ করতে চায়। এরপর কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।
এদিকে সাবেক জনপ্রতিনিধিদের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি। এজন্য দলটির হাইকমান্ডের নির্দেশে অতীতে বিএনপির সমর্থনে বিজয়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এর সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। তিনি যুগান্তরকে বলেন, তৃণমূল থেকে দলকে সংগঠিত করতে এসব জনপ্রতিনিধির অনেক অবদান রয়েছে। এখন তাদের দলের কাজে সম্পৃক্ত করার নিয়মিত সাংগঠনিক প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এ সাংগঠনিক কার্যক্রম তারা পরিচালনা করছেন।