আধিপত্যের জেরে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা করা হয় শ্যামলকে
মুন্সিগঞ্জের সদর এলাকায় প্রবাসফেরত শ্যামল ব্যাপারীর সঙ্গে আধিপত্য, জমি-জমা ও বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলছিল
প্রথম নিউজ, মুন্সিগঞ্জ : মুন্সিগঞ্জের সদর এলাকায় প্রবাসফেরত শ্যামল ব্যাপারীর সঙ্গে আধিপত্য, জমি-জমা ও বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে শ্যামলের ভাইকে মারধরের ঘটনাও ঘটে। থানায় মামলাও হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় শাহাদাত। আত্মগোপনে থেকেই শ্যামল বেপারীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শাহাদাত।
পরিকল্পনা অনুযায়ী- গত ১৪ জুন রাত দেড়টার দিকে সহযোগীসহ ও ১৫-২০ জনকে সঙ্গে নিয়ে শাহাদাত শ্যামলের বাড়ি ঘেরাও করে হামলা চালায়। শ্যামলের ঘরে ঢুকে পা, বুক, পিঠ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে ও এলোপাতাড়িভাবে ধাড়ালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসহভাবে কুপিয়ে শ্যামলকে হত্যা করা হয়।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী শাহাদাত বেপারীসহ জড়িত তিনজনকে মুন্সিগঞ্জ সদর এলাকা থেকে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত ১৪ জুন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের পূর্বরাখি এলাকায় গভীর রাতে প্রবাস ফেরত শ্যামল নামক এক ব্যক্তিকে নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় নৃশংসহভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত করছিল র্যাব।
গতকাল বুধবার রাতে র্যাব গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর একটি দল মুন্সিগঞ্জ সদর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী শাহাদাত বেপারী (৪৫), তার ছেলে মহিউদ্দিন বেপারী (২০) ও হায়াতুন ইসলামকে (৪২) গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় ১টি বিদেশি পিস্তল ও গোলাবারুদ এবং দেশীয় অস্ত্র।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার মঈন বলেন, মুন্সিগঞ্জ এলাকায় ট্রলার ঘাটের ইজারা, নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে নিহত শ্যামলের নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে শাহাদাতের বিরোধ চলছিল। এরই প্রেক্ষিতে ৫ মাস পূর্বে নিহত শ্যামলের নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয় এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার শাহাদাতের বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়া হয়। এর জেরে নিহত শ্যামলের সঙ্গেও গ্রেপ্তার শাহাদাতের বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়া হয়।
পরবর্তীতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রেপ্তার শাহাদাতের পরিকল্পনায় ও উপস্থিতিতে শ্যামলের ভাইদের স্থানীয় বাজারে ফার্মেসিতে কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনায় নিহত শ্যামল বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় গ্রেপ্তার শাহাদাত ও তার ছেলে মহিউদ্দিনসহ অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। শাহাদাত বেপারী গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু তার ছেলে মহিউদ্দিন বেপারী ও তার এক সহযোগী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। পরবর্তীতে শাহাদাত বেপারী ও তার ছেলে আদালত থেকে জামিন পায়।
এদিকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় শাহাদাত বেপারী শ্যামলকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী- শাহাদাত আগে থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল ও ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ করে রাখে। গ্রেপ্তার শাহাদাতের বেশ কয়েকজন সহযোগী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর ১৫-২০ জন সদস্য শাহাদাতের নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
নিহত শ্যামল বেপারী সম্পর্কে কমান্ডার মঈন বলেন, ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থান করে চাকুরি করেন তিনি। পরবর্তীতে দেশে ফিরে এসে ২০১০ সালে পুনরায় মধ্যপ্রাচ্যের অন্য একটি দেশে গমন করেন। সে প্রবাসে চাকুরি করেন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রবাস থেকে তিনি দেশে ফেরেন।
গ্রেপ্তার শাহাদাত বেপারী এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য তার ছেলে গ্রেপ্তার মহিউদ্দিন বেপারীসহ ১৫-২০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করতেন। তিনি ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
শ্যামল হত্যাকাণ্ডের পর তিনি কিশোরগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি নিহত শ্যামলের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনার বিষয়ে তাদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন। আত্মগোপনে থাকাকালীন সময়ে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারও হন। তার বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ১০টি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন তিনি।
গ্রেপ্তার মহিউদ্দিন বেপারী শ্যামল হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার শাহাদাত বেপারীর ছেলে। এলাকায় তার নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে ওঠে। এই গ্রুপটি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিং ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন।
শ্যামল হত্যাকাণ্ডের পর তিনি কিশোরগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধেও মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ৫টি মামলা রয়েছে, বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগও করেছেন তিনি।
গ্রেপ্তার হায়াতুন গ্রেপ্তার শাহাদাতের সহযোগী। এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনি। তার বিরুদ্ধেও মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।