অটোরিকশার সঙ্গে লেগুনার ধাক্কা, প্রতিশোধ নিতে রিকশা চালককে খুন
প্রথম নিউজ, ফরিদপুর: ফরিদপুরে চালককে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনার রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নাঈমসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি গামছা ও নিহত অটো রিকশা চালকের খোয়া যাওয়া দুটি মোবাইল ফোনের মধ্যে একটি ও অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার (১৫ জুলাই) ফরিদপুর সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়নের গজারিয়া পাটপাশা সেতু এলাকার দক্ষিণ পাশে মেহগনি বাগানের ভিতরে একটি খেজুর গাছের নিচে গলায় গামছা পেঁচানো অজ্ঞাত এক তরুণের (২৩) মৃতদেহ উদ্ধার করে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ। ওই দিন রাতে সদরপুর উপজেলার আকটেরচর ইউনিয়নের হালিম চৌধুরীডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা ইকলাছ মোল্লা ওই তরুণকে তার ছেলে রবিন মোল্লা হিসেবে শনাক্ত করেন। রবিন মোল্লা অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
এ ঘটনায় গত সোমবার (১৭ জুলাই) ইকলাছ মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় হত্যাসহ রিকশা ছিনতাই এর অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ বিন কালাম বলেন, নিহত অটোরিক্সা চালক রবিন মোল্লার দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ঘাতকচক্র। তার সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আজ বুধবার (১৯ জুলাই) ভোররাতে চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের বিএসডাঙ্গী এলাকা হতে এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নাঈম খানকে (৩১) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে মৃতের একটি মোবাইল জব্দ করা হয়। পরে তার সহায়তায় ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা ক্রেতা শেখ হালিমকে (৪২) চরভদ্রাসরে গাজীরটেক ইউনিয়নের চর অমরাপুর এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ছিনতাই হওয়া রিকশাটি তার জিম্মা থেকে উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, মৃত রবিন ও ঘাতক নাঈম পূর্বপরিচিত। রবিন অটোরিক্সা ও নাঈম লেগুনা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিছুদিন আগে নাঈমের লেগুনার সাথে রবিনের অটোরিক্সার ধাক্কা লাগলে রবিন নাঈমকে মারধর করে। এতে নাঈম ক্ষুব্ধ হন। পরে নাঈম রবিনের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত শনিবার (১৫ জুলাই) ফরিদপুর শহরের যৌন পল্লিতে যাওয়ার কথা বলে নাঈম ও রবিন একসাথে ফরিদপুরে রওনা দেয়। ফরিদপুরে আসার পথে গজারিয়া এলাকায় এলে অটো রিকশা শহরে নিয়ে গেলে পুলিশ ধরবে একথা বলে নাঈম রবিনকে ফরিদপুরে যেতে বলে এবং তিনি অটো রিকশাটি নিরাপদ জায়গায় রেখে পরে শহরে আসার কথা বলে রবিনকে ফরিদপুর পাঠিয়ে দেন। রবিন ফরিদপুর চলে গেলে নাঈম অটোরিকশাটি ১৫ হাজার টাকায় শেখ হালিমের কাছে বিক্রি করে ফরিদপুরে যৌনপল্লিতে রবিনের কাছে যায়। পরে তারা একটি লেগুনাতে করে ফেরার পথে গজারিয়া নামে। পরে নাঈম রিকশা দেওয়ার কথা বলে পাটপাশা সেতু এলাকার দক্ষিণ পাশে একটি মেহগনি বাগানের ভেতরে নিয়ে পিছনের দিক থেকে রবিনের গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) শৈলেন চাকমা, ফরিদপুর কোতয়ালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল, কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের, পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল গফ্ফার, এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া নাঈম ও শেখ হালিমকে বুধবার(১৯ জুলাই) দুপুরে আদালতে হাজির করা হবে। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন বলে জানিয়েছে। যদি জবানবন্দি না দেন তাহলে তাদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।