বিশ্বের সবচেয়ে ‘খারাপ’ শহর এখন পানির নিচে
গল্পের বইয়ে ছাপা অক্ষরে বা বড়পর্দায় জলদস্যুদের দেখে থাকলেও বাস্তবে পৃথিবীর বুকেই তাদের ঘাঁটি ছিল
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ ছবির সেই দৃশ্যটি মনে আছে? যেখানে ঝড়-জলের মধ্যে দিয়েও মাঝসমুদ্রে ভেসে রয়েছে দস্যুদের জাহাজ। গল্পের বইয়ে ছাপা অক্ষরে বা বড়পর্দায় জলদস্যুদের দেখে থাকলেও বাস্তবে পৃথিবীর বুকেই তাদের ঘাঁটি ছিল।
শুধু জলদস্যুই নয়, যৌনব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল সেই শহর। স্পেন থেকে শুরু করে ব্রিটেন— সব শাসকের নজরে ছিল ওই শহরের দিকেই।
জ্যামাইকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে পোর্ট রয়্যাল শহরটি দখল করার জন্য শাসকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রথম দিকে এই শহর স্পেনের দখলে ছিল।
ব্রিটিশ জেনারেল অলিভার ক্রমওয়েল পোর্ট রয়্যাল এলাকা দখল করতে লোক পাঠানোর পর লুঠপাটও চলে। ১৬০০ সাল নাগাদ জ্যামাইকার এই এলাকা পুরোপুরি ইংরেজদের দখলে চলে আসে।
এমনকি, বস্টনের পর সবাই পোর্ট রয়্যাল শহরটিকে ইউরোপের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে মনে করতেন। বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ শহর হিসেবে পরিচিতি ছিল পোর্ট রয়্যালের।
জলদস্যু ও যৌনব্যবসায়ীরা পোর্ট রয়্যালের মূল আকর্ষণ হলেও এখানে ইংরেজরা ভিড় জমাতেন আরও একটি কারণে। এই শহরে যারা থাকতেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল দাস শ্রেণির।
dhakapostএ শহর থেকে দাস কেনাবেচা করতেন ব্রিটিশরা। ১৬৬২ সালে পোর্ট রয়্যাল শহরের জনসংখ্যা ৭৪০ হলেও তিন দশক পর এখানকার জনসংখ্যা এক লাফে বেড়ে ১০ হাজারের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। এই জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ দাস ছিলেন।
ইংরেজরা আসার পর এই শহরে দু’হাজারের ওপর আবাসন গড়ে ওঠে। শহর জুড়ে মোট ৬টি দুর্গও তৈরি করেছিল ইংরেজরা।
সব মিলিয়ে, পোর্ট রয়্যাল শহরটি বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। কিন্তু ১৬৯২ সালের জুন মাসে পুরো শহরটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়।
dhakapost
৭ জুন সকালে ভয়ানক ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সারা শহর। কম্পনের তীব্রতা ছিল ৭.৫। দুর্গ থেকে শুরু করে শহরের বেশির ভাগ অংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়।
লেফটেন্যান্ট গভর্নর হেনরি মরগ্যানের কবরও পানির তলায় মিশে যায়। শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই এ দুর্ঘটনায় মারা যান।
দুর্ঘটনার পর শহরে চুরি-ডাকাতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। শুধু তা-ই নয়, পোর্ট রয়্যাল শহরে বার বার বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় লেগেই থাকে।
ধীরে ধীরে ১৭ শতাব্দীর এই শহর ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়। তবে এখনও ৪০ ফুট পানির নিচে প্রাচীন এই শহরের বহু চিহ্ন রয়ে গেছে।
১৯৫০ সাল থেকেই ডুবুরিরা এই শহরের খোঁজ করতে পানির নিচে ডুব দিয়েছেন। ১৯৯৯ সালে এই শহরটি জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় যুক্ত হয়।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews