হাসিনার বিরুদ্ধে আরও মামলা

বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে এ মামলার আবেদন করেন নিহতের পিতা আবুল কালাম।

হাসিনার বিরুদ্ধে আরও মামলা

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অটোরিকশা চালক সাহাবুদ্দিনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে এ মামলার আবেদন করেন নিহতের পিতা আবুল কালাম। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য শেরেবাংলা নগর থানাকে নির্দেশ দেন।

গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা পঞ্চম মামলা এটি। এরমধ্যে ১৩ই আগস্ট একটি হত্যা ও ১৪ই আগস্ট দু’টি ও গতকাল দু’টি মামলা করা হয়। এরমধ্যে চারটি হত্যা এবং অন্যটি গুম-অপহরণের অভিযোগে করা হয়েছে।

অন্য ৯ আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি’র সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকার পতনের একদফা চলাকালে গত ৫ই আগস্ট সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হন সাহাবুদ্দিন। এদিন  পরিবারের সদস্যদের খাবার কিনতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। এ সময় শেরেবাংলা নগর থানার সামনে পৌঁছালে হঠাৎ তার মাথায় পুলিশের ছোড়া গুলি এসে লাগে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কিছু ব্যক্তি তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হেলিকপ্টার থেকে গুলির ঘটনায় মামলা
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের দারুন্নাজাত ইসলামিয়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জোবাইদ হোসেন ইমন (১২)কে র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। নিহত ইমনের মামা আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ ভূঁইয়া ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এ মামলা করেন।

আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মোহাম্মদপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র?্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ মহিদ উদ্দিন, ডিবি’র সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এবং হেলিকপ্টার টহল টিমের অজ্ঞাতনামা সদস্যরা।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯শে জুলাই আসামিদের নির্দেশে র?্যাব সদস্যরা হেলিকপ্টার থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় ভিক্টিম জোবাইদ হোসেন ইমনের বাম কানের ওপর দিয়ে গুলি প্রবেশ করে ডান কানের নিচ দিয়ে চোয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। গুলির আঘাতে ঘটনাস্থলেই জোবাইদ হোসেন ইমন মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় স্থানীয়সহ মামলার বাদী ও অন্য সাক্ষীরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা শেখ হাসিনার অবৈধ স্বৈরশাসনকে নিরঙ্কুশ ও দীর্ঘায়িত করার প্রয়াসে পরস্পরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে নির্মূল ও হত্যার পরিকল্পনা করে। আসামিরা তাদের অধীনস্থ পুলিশ, বিজিবি, র?্যাবসহ অন্য বাহিনীকে দিয়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের মাধ্যমে আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে নির্মূল করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই আলোকে নীলনকশা বাস্তবায়নের নিমিত্তে তারা পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড শুরু করে। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য ছাত্র, শিশু, সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষকে হত্যা ও আহত করে।