সরকার লোভের কারনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতকে অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছে: বিএনপি
আজ মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন ।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকার লোভের কারনে আজকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতকে অন্ধকারের পথে নিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।আজ মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন । সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার,বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান,ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত ১৮ জুলাই ২০২২ অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায়, বর্তমানে লোডশেডিং, বিদ্যুৎখাত ও জ¦ালানী খাতের ভয়াবহ সংকটের বিষয়ে আলোচনা হয। সভা মনে করে, সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থের জন্য পরিকল্পিতভাবে নিয়মনীতি বিসর্জন দিয়ে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের সুযোগ প্রদানের ভয়াবহ দূর্নীতির কারনে, ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রচুর অর্থ ব্যয় করার ফলে বর্তমানে এই অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে। এই সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি আইন তৈরী করে নজীরাবিহীন দূর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ২-৩ বৎসরে বন্ধ হবার কথা থাকলেও প্রয়োজন ব্যতিরেকে তা এখনো চলমান আছে। বেশ কিছু সংখ্যক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই ৩ বৎসর সরকারকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। গত এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গচ্ছা প্রায় ৮.৫৪ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুতের চাহিদা সঠিক ভাবে নির্ধারণ না করেই চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সাথে চুক্তি করে দূর্নীতি পরায়ণ ব্যবসায়ীদের লুঠ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে রাষ্ট্রীয় দায় দেনা ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিদেশী ঋণের পরিমান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে আগামী ৩০ বৎসরে সুদ সহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে যা জনগণের পকেট কেটে করা হবে।
সরকার লোডশেডিং শূন্য কোঠায় নিয়ে আসায় উৎসব করেছে আতশবাজি পুড়িয়ে অন্যদিকে এখন শহরে ২/৩ ঘন্টা এবং গ্রামঞ্চলে ৫/৬ ঘন্টা লোডশেডিং জন-জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। শিল্পে ও কৃষিতে উৎপাদন ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ওপর চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।
জ¦ালানী সরবরাহ নিশ্চিত না করেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সমস্যাকে জটিলতর করেছে। দেশে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির কোনও উদ্বোগ না নিয়ে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানীর লক্ষ্যই হচ্ছে চুরি এবং নিজস্ব দলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিজেদের দূর্নীতি ও অনৈতিক সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা। শুধুমাত্র লোভের কারনে আজকে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী খাতকে অন্ধকারের পথে নিয়ে গিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত বক্তব্য প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতির সামনে অতি শীঘ্রই নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। লোডশেডিং ও জ¦ালানী খাতে অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও অন্যান্য সকল মহানগর আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই এবং সকল জেলা পর্যায়ে আগামী ৩১শে জুলাই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সরকারকে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগের আহŸান জানানো হয়।
৩। সভায়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধিতে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, শাক-সবজী ও মাছ-মাংসে ক্রমবর্ধমান মূল্য বিষয়ে সরকারের অব্যবস্থাপনা ও সরকারের মদদ পুষ্ট সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্য ৩২ শতাংশ এবং পাম ওয়েলের দাম ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত কমলেও সরকার সমর্থিত লুটেরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের দেশী বাজারে আগের মূল্যে বিক্রি অব্যাহত রাখায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয়। দ্রব্যমূল্য হ্রাসের ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করা হয় এবং ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ দাবী জানানো হয়।
৪। সভায়, বিবিএস প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭৩৫৬ শতাংশে। যা নয় বৎসরে সর্বোচ্চ, আইএডপিআরআই এর হিসাব অনুযায়ী একেবারে নতুন করে ৫০ লাখ মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে পতিত হচ্ছে। এটা দারিদ্র সীমার নীচে বাসকারী শতকরা ৪২ঁ ভাগের অতিরিক্ত। এই অনির্বাচিত সরকারের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক নীতি যা শুধুমাত্র লুঠপাটের অর্থনীতি তৈরী করছে, সরকার দলীয় এক দলীয় এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ যদি আওয়ামী ব্যবসায়ীদের অস্বাভাবিক আয় বৃদ্ধি করছে ও অন্যদিকে মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্তি এবং কৃষক, শ্রমিকেরা আরও দরিদ্র হচ্ছে। প্রকট আয়ের বৈষম্য তৈরী হয়েছে। উদ্দেশ্য মূলক ভাবে এই বৈষম্যের সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে সভা মনে করে। এর ফলে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ব্যাপক ভাবে বিনষ্ট হচ্ছে।
৫। সভায় সম্প্রতি, ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশের সবাই অপরাধী মন্তব্যে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড এর মহাপরিচালক নিরব থাকায় তীব্র সমালোচনা করা হয়। সভা মনে করে সীমান্তে গুলি করে হত্যা মানবাধিকার লংঘন। কেউ অপরাধী হলেও তার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য দাবী করে সভা।
৬। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অপরাধে বরাবরের মত ছাত্রলীগ অভিযুক্ত হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের এই ধরনের ন্যাক্কার জনক, অসামাজিক কার্যকলাপকে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মদদ দেওয়া হয় বলে এই ঘটনা গুলো ঘটছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কার্যকলাপের অভয়ারন্যে পরিণত হয়েছে। অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানানো হয়।
৭। সভায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক ৪ জন গণতন্ত্র কর্মীকে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে গণতন্ত্রের সংগ্রামী মানুষকে মৃত্যুদন্ড প্রদান ও তা কার্যকর করা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার লংঘন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews