সাত্তারকে বিজয়ী করতে সরে দাঁড়ালেন আওয়ামী লীগের ৩ প্রার্থী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন

সাত্তারকে বিজয়ী করতে সরে দাঁড়ালেন আওয়ামী লীগের ৩ প্রার্থী
সাত্তারকে বিজয়ী করতে সরে দাঁড়ালেন আওয়ামী লীগের ৩ প্রার্থী

প্রথম নিউজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ৩ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। শনিবার দুপুরে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শাহগীর আলমের কাছে এ মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রত্যাহার করেছেন। তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা আবদুস সাত্তারকে বিজয়ী করতেই আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র। এদিকে আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করায়  ‘কপাল খুলছে’ সেই সাত্তারের।   এর আগে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রার্থীদের এক বৈঠকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হওয়া সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জানানো হয়, উপ-নির্বাচনের এক বছর পরই সেখানে হওয়া পরবর্তী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে যেন প্রার্থীরা সিদ্ধান্ত মেনে নেন।  এ অবস্থায় আসনটি কপাল খুলতে যাচ্ছে পদত্যাগ-পরবর্তী বহিষ্কার হওয়া বিএনপি’র সাবেক নেতা আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার! সংসদ থেকে বিএনপি’র পদত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সাত্তারকে সরকার নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন বলে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার দলের সঙ্গে জড়িত প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা করার বিষয়টি স্বীকার করেন। এবং তিনি বলেন, ‘এখানে যেহেতু দল কোনো প্রার্থী দেয়নি সেক্ষেত্রে দলের কথা বলে কেউ প্রার্থী হতে পারেন না।’ বিষয়টি  তাদেরকে বলার কারণে তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ৩ জনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় এখন এই আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৫ জন প্রার্থী। তারা হলেন, পদত্যাগ-পরবর্তী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়া, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল।

নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, মঈন উদ্দিন মঈন, ও অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এবং তাদের  প্রত্যাহারপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীকাল  রোববার ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন প্রার্থীরা।

আগামী ১লা ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের পর ওই সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়নি। সারা দেশে যখন আওয়ামী লীগের জোয়ার তখনো (২০১৮) জোটের মারপ্যাঁচে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় সেখানে নিজেদের প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ভরাডুবি হয়। নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া জয়লাভ করেন, যিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য। ব্যক্তিগত ও এলাকায় দলীয় অবস্থান বিবেচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে সামান্য ভোটে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. মঈন উদ্দিন মঈন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগের ওই নেতা হেরে যান বলে মনে করা হয়।

ভোটের আগে বেশ আলোচনায় আসেন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা পাঁচবারের সংসদ সদস্য ৮৪ বছর বয়সী আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করে ক্ষোভে দল থেকে পদত্যাগ করেন। তার নামে কেনা হয় মনোনয়নপত্র। এর পরপরই তাকে দল থেকে বহিষ্কারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। সর্বশেষ সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।

সরাইল উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে মোট ভোটার দুই লাখ ৩৭ হাজার ১৫৩ জন। আশুগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ভোট সংখ্যা এক লাখ ৩২ হাজার ৯৭০টি। বিগত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির তৎকালীন সংসদ সদস্য ও সরাইল বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার ভূইয়ার কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা ও আশুগঞ্জের বাসিন্দা স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈন। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে মঈন উদ্দিন সহজেই পার হতে পারতেন বলে মনে করা হয়। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: