“মিথ্যাচার করে, নাটক সাজিয়ে, ভিডিও বানিয়ে লাভ হবে না”
সত্যিকার ভিডিও মানুষের হাতে হাতে, সেটা সবাই দেখছে ও পড়ছে বলে দাবি করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: পরিকল্পিতভাবে গণ্ডগোল লাগিয়ে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড করার পাশাপাশি বাসে আগুন দেওয়ার পেছনে সরকারের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “মিথ্যাচার করে, নাটক সাজিয়ে, ভিডিও বানিয়ে লাভ হবে না।” সত্যিকার ভিডিও মানুষের হাতে হাতে, সেটা সবাই দেখছে ও পড়ছে বলে দাবি করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। মঙ্গলবার তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি। শনিবার সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে তৃতীয়বারের মতো অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলিতে অনেকে নিহত ও আহত হয়েছে দাবি করে তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও অবরোধ কর্মসূচিতে জনগণ ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে বলে দাবি তার।
এদিন তিনি আরও অভিযোগ করেন, “এদেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিকভাবেও সবাই জেনে গেছে এই সরকার জোর করে সুষ্ঠু ভোটকে পদদলিত করছে, নির্বাচনকে পদদলিত করেছে, গোটা জনগণকে শত্রু পক্ষ বানিয়ে জনগণকে বোকা বানানোর প্রচেষ্টায় আজকে জোর করে ক্ষমতায় রয়েছেন। “তাই মিথ্যাচার করে, নাটক সাজিয়ে, ভিডিও বানিয়ে লাভ হবে না। সত্যিকার ভিডিও মানুষের হাতে হাতে আছে সেটা সবাই দেখছে, সবাই পড়ছে।”
শনিবারের মহাসমাবেশের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘মিথ্যা’ বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে রিজভী বলেন, “আজকে (মঙ্গলবার) সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা নিছকই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) একটা মিথ্যা অনর্গল ধারা-বর্ষণ দিলেন। শ্রাবণের যেমন ধারাবর্ষণ হয়…ঝর ঝর করে পানি পড়ে। ঠিক ঝর ঝর করে প্রধানমন্ত্রী একের পর এক মিথ্যা কথা বলে গেলেন।
‘‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, সেদিন (২৮ অক্টোবর) যা ঘটানো হয়েছে আজ সব কিছুই ভিডিও করা হয়েছে। মানুষের হাতে হাতে ভিডিও পাবেন। টেকনোলজির যুগে কোনো ঘটনাই কিন্তু কারও দ্বারা অরক্ষিত থাকছে না, যা মানুষের অগোচরে থাকতে পারছে।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘আমি সরকারের লোকজনকে বলতে চাই সব কিছুর তথ্য কিন্তু আছে। মানুষের বিশাল সমাবেশ, সমাবেশের একদিক ফকিরাপুল পার হয়ে নটরডেম কলেজ পর্যন্ত, আরেক দিকে কাকরাইল মসজিদ পেরিয়ে শাহবাগের কাছে ছুঁইছুঁই। তাহলে সেখান দিয়ে আওয়ামী লীগের ট্রাক-বাস গেল কি করে কারা নিয়ে গেল?
হাই কোর্টের কাছে মঙ্গলবার বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘‘আজকেই যে ঘটনাটি হয়েছে, হাই কোর্টের জাতীয় ঈদগাহ মাঠের মধ্যে একটি গাড়িকে নিয়ে যেয়ে সব ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা আসে আর ড্রাইভার সিটে আগুন লাগালো। হাতে নাতে তো ধরা পড়লো।
‘‘প্রধানমন্ত্রী কই- এই বিষয়ে তো আপনি কিছুই বললেন না। এটা আপনার অগোচরে চলে গেল কিভাবে?
‘তোয়াজ সাংবাদিক’
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্ন করা নিয়েও সমালোচনা করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘‘একজনও সাংবাদিক হিসেবে সাংবাদিকতার প্রশ্ন আমি দেখলাম না। যারা প্রশ্ন করছেন, তোয়াজ করে কথা বলছেন। বেছে তোয়াজ করাদের নেওয়া হয়েছে। যারা সত্য কথা বলতে পারতেন তাদের আপনি দাওয়াত করেননি।
“তোয়াজ করাদেরকে দিয়ে প্রশ্ন করিয়ে নিজের খেয়াল খুশিমতো… চারিদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রটেকশনে ওইরকম নানা অসত্য কথা বলা যায়, কিন্তু সত্যকে ঢেকে রাখতে পারবেন না।”
‘যুবদলের নেতাকে নিয়ে নাটক’
রিজভী বলেন, ‘‘যুবদলের মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিবকে নিয়ে কত নাটকই না করছে। তার ফুটেজ ভাইরাল হচ্ছে, সব কিছু হচ্ছে। তার গায়ে একটা ড্রেস ছিল, সেটাতে প্রেস লেখা ছিল। অজস্র গোলাগুলি হচ্ছে, স্প্রিন্টারে অসংখ্য মানুষ… কান্না-কাটি করছে। সেক্ষেত্রে সে হয়ত কোনো সাংবাদিক বন্ধুর কাছ থেকে ড্রেসটা নিয়েছে স্প্রিন্টার থেকে বাঁচার জন্য। আর তাকে দিয়ে আপনারা নাটক শুরু করলেন তাকে আগুন সন্ত্রাসী বানাতে চেয়েছে।
‘‘কিন্তু কই সে কোথাও আগুন দিচ্ছে বা ঘটনা ঘটাচ্ছে সেটা তো আমরা এত কিছু করার পরেও কোনো ভিডিও দেখলাম না যে, সে নিজে কোথাও আগুন দিচ্ছে, কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে।”
সবকিছুই পরিকল্পিত নাটক সাজিয়ে মানুষের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।