বয়স্ক ভাতার কার্ড সংগ্রহে লাগে ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা ঘুষ- সিপিডি
আজ রোববার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার ইনে আয়োজিত এক সংলাপে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। সেখানেই এসব তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: বয়স্ক ভাতা কার্ড করতে গিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেন ভাতাপ্রত্যাশীরা। কারণ, ঘুষ না দিলে ভাতা পাওয়ার তালিকায় তাঁদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয় না। প্রতিটি কার্ডের জন্য তাঁরা গড়ে ২ হাজার ৬৫৩ টাকা ঘুষ দেন। এমনকি ঘুষ দিতে না পারায় ভাতা কার্ড করাতে পারেননি, এমন ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ঘাটতি নিরূপণ ও এর কার্যকারিতা বৃদ্ধির বিষয়ে সম্প্রতি একটি জরিপ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আজ রোববার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার ইনে আয়োজিত এক সংলাপে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। সেখানেই এসব তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সিপিডির সংলাপে বক্তারা বলেছেন, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপযুক্ত বয়স্ক ও বিধবারা নির্দিষ্ট হারে ভাতা পান। তবে এ জন্য তাঁদেরকে কার্ড করতে হয়। কিন্তু এসব কার্ড করতে গিয়ে তাঁদেরকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিতে হয়। সিপিডির গবেষণায় উঠে আসে, স্থানীয় পর্যায়ে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা কার্ড করতে গিয়ে একজন উপকারভোগী সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়েছেন। আর এসব ঘুষ নিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও সরকারের কর্মকর্তারা।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আরমা দত্ত এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক মো. মোক্তার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বজলুল হক খোন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নুজহাত জেবিন বক্তব্য দেন।
গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও গবেষণা সহযোগী এ এস এম শামীম আলম শিবলী।
দারিদ্র্যের হার কমলেও বৈষম্য বেড়েছে
সিপিডির সংলাপে অংশ নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা আমাদের দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে আনতে পারলেও বৈষম্য এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যে এটা তুলনাহীন জায়গায় চলে গেছে। খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বৈষম্যের ব্যাপারটি আমাদের রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃত নয়।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাষ্ট্রটা এখন অতিক্ষুদ্র ধনিক গোষ্ঠী, সামরিক–বেসামরিক আমলাদের হাতের মধ্যে বন্দী হয়ে গেছে। এ কারণে বৈষম্য অনেক বেড়েছে। দারিদ্র্য কমেছে বলে আমরা উৎফুল্ল হতে পারি। কিন্তু বর্তমানে বৈষম্য এত বেশি যে সেখানে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।’ এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধি আরও বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।
অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধি বাড়াতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) থেকে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আরমা দত্ত। তিনি বলেন, এনজিওগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির চেয়ে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বেশি আগ্রহী। কিন্তু তারা যে মুনাফা করছে, সেখান থেকে ৫ শতাংশ এই খাতে দিতে পারে।
সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির ক্ষেত্রে আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ভাতা প্রদানের দায়িত্বে যেসব মন্ত্রণালয় রয়েছে, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের দুর্বলতা রয়েছে। এ জন্য দেখা যায়, অনেকে একাধিক ভাতা পাচ্ছেন, আবার অনেকে একটি ভাতাও পান না।
এ ছাড়া শহর এলাকাতেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ১৫০ টাকা মাসিক উপবৃত্তি দেওয়া হতো, এখনো তা–ই দেওয়া হয়। আমলাতন্ত্রে যাঁরা আছেন, তাঁদের বেতন এ সময় অনেক বেড়েছে। তাহলে উপকারভোগীদের ভাতার ক্ষেত্রে কেন মূল্যস্ফীতির হিসাব বিবেচনা করা হয় না?