বর্তমান অবস্থায় নির্বাচনে যাবে না বামদলগুলো

গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পরপরই বাম গণতান্ত্রিক জোট তফসিল প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিক মশাল মিছিল করেছে।

বর্তমান অবস্থায় নির্বাচনে যাবে না বামদলগুলো

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিদ্যমান অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে না আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা বামদলগুলো। ইতিমধ্যে তারা তফসিল প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি পালন করছে। নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বাম গণতান্ত্রিক জোট বৃহস্পতিবার সারা দেশে অর্ধদিবস হরতাল পালন করেছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পরপরই বাম গণতান্ত্রিক জোট তফসিল প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিক মশাল মিছিল করেছে। আগামীতে দেশব্যাপী কালো পতাকা মিছিল, সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। 

চলতি বছরেই রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পায় শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বাধীন ‘বাংলাদেশ জাসদ’। নতুন নিবন্ধন পাওয়া দলটির প্রতীক নির্ধারণ করা হয়েছে মোটরগাড়ি (কার)। বাংলাদেশ জাসদের প্রধান শরীফ নুরুল আম্বিয়া মানবজমিনকে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে, অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই আমরা যাবো না। যেখানে জনগণের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা থাকে না, সেখানে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো অর্থ থাকে না। বাংলাদেশ জাসদ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক ছিল। কিন্তু তারা এখন সেই জোটে নেই। 

কয়েক বছর ধরে দলটি নিজস্ব কর্মসূচি পালন করে আসছে। এখন দলটি বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছে। যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে ঐক্য ন্যাপও।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আদর্শিক অবস্থান থেকে বাম জোট আওয়ামী লীগ-বিএনপির দ্বিদলীয় ধারার বাইরে একটি স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টি করতে চাইছে। ‘দুঃশাসন’ থেকে পরিত্রাণ পেতে আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন। বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের বদলে বিএনপি বা অন্যদের বসানো লক্ষ্য নয়। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা, ঐক্য ন্যাপ ও বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। জোট, মহাজোটের কোনো প্রশ্ন আমাদের নেই। আমরা চাই একটা বড় বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে। যাদের কাজ হবে, একটা নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলা।  

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ব্যবস্থা বদলের জন্য আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি জানাচ্ছি, সেগুলো আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে একই দাবি। আদতে তা নয়। আমরা বলছি, সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন করতে হবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনটি আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের প্রভাবমুক্ত রাখার কথা আমরা বলছি। 

এ ছাড়া বাসদ (মার্কসবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের নেতারাও নির্বাচন বর্জনের পক্ষে।  বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, এই ব্যবস্থার মধ্যে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। 

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা মানবজমিনকে বলেন, যেখানে ভোটের নিশ্চয়তা আসে না, সেই ব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেয়া জনসাধারণের সঙ্গেই প্রতারণা করা। 

২০১৮ সালের ১৮ই জুলাই বাম গণতান্ত্রিক জোট আত্মপ্রকাশ করে। এই জোটে ছিল বামধারার ৮টি রাজনৈতিক দল। সেগুলো হলো- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্‌সবাদী), বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। তবে গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এই দুই দল গণতন্ত্র মঞ্চের হয়ে বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। এখন সিপিবি-বাসদসহ বাম জোটে আছে ৬টি দল।