বেনজীর-আজিজকে নিয়ে সংসদে তুমুল সমালোচনা

স্বতন্ত্র এমপি আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও বিরোধী দলের চীফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু পয়েন্ট অব অর্ডারে তাদের নিয়ে কড়া বক্তব্য রাখেন।

বেনজীর-আজিজকে নিয়ে সংসদে তুমুল সমালোচনা

প্রথম নিউজ, অনলােইন : সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদকে নিয়ে সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনেই কথা বলেছেন দুই এমপি। স্বতন্ত্র এমপি আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও বিরোধী দলের চীফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু পয়েন্ট অব অর্ডারে তাদের নিয়ে কড়া বক্তব্য রাখেন। বেনজীর আহমেদের বিদেশে যাওয়া সরকার কেন জানলো না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু। সরকারি চাকরি করে তিনি কিভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হলেন তা নিয়েও প্রশ্ন করেন চুন্নু। এ সময় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আলেকজান্ডার এদেশ জয় করেন। তখন এদেশে কিছুদিন ছিলেন, এদেশের আলো বাতাস, মানুষের মনের গতিবিধি লক্ষ্য করে তার জেনারেল সেলুকাস তাকে বললেন যে কি বিচিত্র এদেশ সেলুকাস। আসলেই কি বিচিত্র। একটি পত্রিকার সম্পাদকীয়তে আছে আমাদের একজন সরকারি কর্মচারী ২০১০ সালের ১১ই অক্টোবর হাতে লেখা সবুজ পাসপোর্ট নবায়ন করতে যান যেটা সাধারণ পাবলিকের জন্য। সরকারি কর্মচারীদের জন্য নীল পাসপোর্ট।

এবং তিনি সেটা নবায়ন করেন। তিনি যখন ডিজি র‌্যাব তখনও সেই সবুজ পাসপোর্ট। সেইখানে কি লেখা পেশা হিসেবে প্রাইভেট সার্ভিস। ডিজি র‌্যাব একজন এডিশনাল আইজি তার পাসপোর্টে লেখা প্রাইভেট সার্ভিস। কি আশ্চর্য, এটা আমরা কেউ খেয়াল করলাম না। শুধু তাই নয়, আইজি থাকা অবস্থায় তার সেই সবুজ পাসপোর্ট এবং তিনি বিভিন্ন সময় বিদেশে গেছেন। ইমিগ্রেশনে এন্ট্রি আছে সবুজ পাসপোর্টের। প্রাইভেট সার্ভিস কি সর্বনাশা কথা। আমরা জানি যে আওয়ামী লীগ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন রেড পাসপোর্ট ছিল, সবুজ পাসপোর্ট ছিল, সবুজ পাসপোর্ট দিয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী সেদিন তাকে মন্ত্রীপরিষদ থেকে বাদ দিয়েছিলেন। আর একজন আইজি, ডিসিপ্লিনারি ফোর্সের চিফ। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এই ব্যক্তি যখন আইজি ছিলেন তখন কি সুন্দর বক্তব্য তার।

তিনি বলেছিলেন পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যদের উদ্দেশ্যে, এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তোমরা কেউ করাপশন করতে পারবে না, আমি আইজি, আমার নাম বেনজীর। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। জিরো টলারেন্স দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভালো কথা। সেই ব্যক্তিটি তার নামে তার পরিবারের নামে গোপালগঞ্জে রিসোর্ট, ৬ শ’ ২১ বিঘা জায়গায়, কিভাবে। তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে কিভাবে সম্ভব। তাই নয়, তিনি যখন ডিজি র‌্যাব, মহানগরের ডিএমপি কমিশনার এবং আইজি সেই সময়ের মধ্যে তিনি কিন্তু এই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। অবসর নেয়ার পর যদি তার পৈত্রিক ব্যবসা থাকে মালিক হন আপত্তি ছিলো না। কিন্তু চাকরি করাকালীন তিনি এই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। সারা দেশে এই ব্যক্তির কারণে ক্ষমতাসীন দলের এতো কাজ করার পরেও আজকে প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে।

২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি ডিজি এবং ডিএমপি কমিশনার থাকা অবস্থায় যে জমিগুলো কিনেছেন সে জমিগুলি বেশীর ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের। তারা অনেকেই সাক্ষী দিচ্ছেন এখন সাংবাদিকদের কাছে। কায়দা কৌশলে পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে সেই সমন্ত সম্পত্তি তিনি কিনেছেন। রাজধানীর গুলশানে বিলাসবহুল চারটা ফ্ল্যাট, এক হালি ফ্ল্যাট কিনেছে এক দিনে। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, উত্তরায় এবং বাড্ডায় ৭ তলা দুইটা বাড়ি, ভাওয়াল রিসোর্ট, যে রিসোর্টে অভিযোগ প্রায় ৩০/৪০ বিঘা জায়গা বনের। বন বিভাগ থেকে এখন বলা হচ্ছে বনের জায়গা দখল করে ভাওয়াল রিসোর্ট করা হয়েছে। সেখানে আমরা জানতে পারলাম ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে তিনি চলে গেলেন। চলে যাওয়ার আগে পত্রিকার নিউজ অনুযায়ী প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছেন। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, এই যে বেনজির তার পরিবারসহ বিদেশে গেলেন তিনি জানেন না। খুব কষ্ট পেলাম।

তিনি জানবেন না কেন? যেহেতু নিষেধাজ্ঞা নাই যেতে পারেন। কিন্তু জানবেন না কেন। কারণ তিনি এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন হয়ে গেছেন। ইমিগ্রেশনে তো ভিআইপি, সারা দেশে আলোচিত বেনজির তিনি ইমিগ্রেশন দিয়ে গেছেন আর ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট তার মন্ত্রণালয়কে জানাইনি। সরকারকে জানায়নি। যদি না জানিয়ে থাকে তাহলে ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের সাসপেন্ড করা দরকার। অনেকে বলছেন তার বিরুদ্ধে তো ওয়ারেন্ট নাই। ২৪শে এপ্রিল থেকে দুদক তার বিরুদ্ধে টিম করে বিভিন্ন তথ্য চাইছে। সারা দেশের মানুষ জানে। একজন রাজনৈতিক নেতা বিরোধী দলের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবে তাকে আপনারা বিমানবন্দরে আটকে দেন। দুই ঘণ্টা বসিয়ে রাখতে পারেন। এই রকম একজন ভিআইপি, যিনি সারা বাংলাদেশে কেনার বাকি রাখেন নাই তিনি চলে যাবেন দেশের বাইরে আর সরকার জানবে না এটা হতে পারে না।

একটা চেক নিয়ে পাঠাইলে ১০ লাখ, ২০ লাখ টাকার , ৭ দিনের নোটিশ লাগে। ৭০/৮০ কোটি টাকা তিনি কিভাবে উত্তোলন করলেন আমি জানি না। সরকারের এত বাহিনী, তারা কি খবরাখবর রাখে তারা কেন সরকারকে এসব জানাননি। দুই টন গম যদি ইউনিয়নের মেম্বার বিক্রি করে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যায়। একজন এমপি কাবিখার কাকে কি দিল সেটা পত্রিকায় ফলাও হয়ে যায়। মামলা হয়। আর কৃষককে ৫০হাজার টাকা লোনের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়। এই লোকটি এত কোটি কোটি টাকা, এত সম্পত্তি, কিভাবে সম্ভব হলো। কেন সরকার দেখলো না। যতই বলেন সরকারের দায় দায়িত্ব নাই। এই কথা বললে দেশের জনগণ মানবে না।

কারণ এই ব্যক্তিতো এই সরকারের আমলে প্রমোশন পেয়েছে। এই সরকারের আমলে চাকুরি থাকা অবস্থায় এই সমস্ত সম্পদ ক্রয় করেছে, দুর্নীতি করেছে। আর সেই বলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। বিষয়টিকে যদি গুরুত্ব দিয়ে সরকার ব্যবস্থা না নেয়, দুদক তদন্ত করছে, তদন্ত যদি বছরের পর বছর চলে, শেষ না হয়, কোর্টে যদি বিচার না হয়। তাহলে দেখা যাবে আরও যারা আছে বেনজির তারা আশকারা পাবে। যত আমলা আছে, সংসদ সদস্য আছে তাদেও হিসেব আপনি নেন। আমি আমার হিসেব এক ঘণ্টার মধ্যে দিবো। এই সরকারি কর্মচারীর এত দুর্নীতির কারণে প্রমাণ হয়েছে সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ।