পাটের বাম্পার ফলন, তবুও দুশ্চিন্তায় চাষিরা

বর্তমানে পাট কাটার উপযোগী হলেও পানির অভাবে জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার কৃষকরা।

পাটের বাম্পার ফলন, তবুও দুশ্চিন্তায় চাষিরা

প্রথম নিউজ, রাজবাড়ী: পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে রাজবাড়ীর পাটচাষিরা। শুধু তাই নয়, মৌসুমের শুরুতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলায় পাটের আবাদ ভালো হয়নি। বর্তমানে পাট কাটার উপযোগী হলেও পানির অভাবে জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার কৃষকরা।

একদিকে প্রচণ্ড রোদ আর বৃষ্টির অভাবে পাটগাছ বড় হওয়ার পর অনেক স্থানে গাছের পাতা শুকিয়ে মারা যাচ্ছে, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় আশপাশের খাল-বিল, ডোবায় পানি জমেনি। ফলে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। পানি না থাকায় অনেকে পাট কেটে তা ক্ষেতেই রেখে দিয়ে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন।এতে পাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে পাট কেটে জাগ দিতে দূরবর্তী স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। 

জানা গেছে, সোনালী আঁশ পাট বর্ষাকালীন ফসল। মূলত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পাট কাটার উপযোগী হয়। পদ্মাবিধৌত রাজবাড়ী জেলা পাট চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট পাটের প্রায় ৭ শতাংশ চাষ হয় রাজবাড়ীতে। এছাড়া জেলায় বেশ কয়েকটি পাটকল স্থাপন হওয়াতে পাটে সমৃদ্ধ পেয়েছে এ জেলা। কিন্তু এ বছর জেলার চাষিরা পাট নিয়ে বিপাকের মধ্যে রয়েছেন। বর্ষা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাঠে পানি জমেনি। খাল-বিল ও হাওরে পানি কম রয়েছে। ফলে পাট পচাতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, জেলার প্রায় প্রত্যেকটি উপজেলাতেই মাঠের পর মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে পাট। পাট কাটার উপযোগী হলেও পানির অভাবে বেশির ভাগ জমির পাট কাটা শুরু হয়নি। বৃষ্টি না হওয়াতে খাল-বিল, ডোবায় পানি জমেনি। রোদে পাট নষ্ট হয়ে যাওয়াতে অনেকে আবার পাট কেটে ক্ষেতেই রেখে দিচ্ছেন। অপেক্ষা করছেন বৃষ্টির জন্য।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছর রাজবাড়ী জেলার ৫ উপজেলায় ৪৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। তবে আবহাওয়া অনুকূল ও আগাম বন্যা না হওয়ায় চলতি বছর জেলার ৫ উপজেলায় ৪৯ হাজার ১২২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যা গতবারের থেকে প্রায় ১ হাজার ১০২ হেক্টর বেশি। আশা করা হচ্ছে, এ বছর জমিতে সোয়া লাখ মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হবে।

কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের পাটচাষি ইয়াকুব আলী মৃধা বলেন, এ বছর আমি দুই একর জমিতে পাট চাষ করেছি। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির কারণে পাটের আবাদ ভালো হয়নি। আবার এখন পাট কাটার সময় হয়ে গেলেও আশপাশে পানি নেই। পাট জাগ দিতে না পারায় রাস্তার ধারে রেখে দিয়েছি।

বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের কৃষক আকমল খান বলেন, এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু পানি না থাকায় তা কাটা হচ্ছে না। যা কর্তন করা হয়েছে সেগুলো জাগ দিতে না পাড়ায় রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে। সদর উপজেলার বাণিবহ ইউনিয়নের কৃষক রহিম মোল্লা বলেন, এ বছর বৃষ্টির অভাবে খাল-বিলে পানি নেই। তাই এখনো পাট কাটা শুরু করিনি। বৃষ্টি না থাকায় এবং প্রচণ্ড তাপদাহে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। তবে এ বছর পাটের ফলন ভালো হয়েছে।

জেলা পাট অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, বর্তমানে সরকারের কাছে পাট পচানোর আধুনিক কোনো ব্যবস্থা নেই। স্লুইসগেটের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি। রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম শহীদ নূর আকবর বলেন, এ বছর রাজবাড়ীতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বৃষ্টির অভাবে খাল-বিলে পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। এজন্য অনেকে বাড়তি টাকা খরচ করে দূরে নিয়ে জাগ (পচানো) দিচ্ছেন। এছাড়া একই পানিতে বার বার জাগ দেওয়ায় পাটের মান খারাপ হচ্ছে। ফলে বাজার দামও কম পাচ্ছে চাষিরা। পাট জাগ দেওয়ার বিষয়ে কৃষকদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom