ধান ঘরে তুলতে দ্বিগুণ খরচ, দুশ্চিন্তায় কৃষক
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোরো ধান চাষে কৃষকের বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৩-১৪ হাজার টাকা। সেখানে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রতি বিঘায় উৎপাদিত ধান বিক্রি করে ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা।
প্রথম নিউজ, জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক না পাওয়ায় দেখা দিয়েছে সংকট। স্থানীয় শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি বেশ চড়া। জমির দূরত্ব অনুপাতে আগে প্রতি বিঘা ধান কাটা-মাড়াইয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হলেও বর্তমানে সাড়ে চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা লাগছে। ফলে কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টিতে জমিতে শুয়ে ও হেলে পড়া ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোরো ধান চাষে কৃষকের বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৩-১৪ হাজার টাকা। সেখানে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রতি বিঘায় উৎপাদিত ধান বিক্রি করে ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। এর ভেতর কয়েক মাসের পরিশ্রম যোগ করলে কৃষকের আয়-ব্যয় সমান হবে। ফলে ধানের বর্তমান বাজার মূল্য না বাড়লে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার চলতি ২০২১-২০২২ রবি ফসল উৎপাদন মৌসুমে ৬৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ হাজার ৪২৫ হেক্টর। কিন্তু কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টিতে ২ হাজার ১৩ হেক্টর বোরো ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত জেলায় ৩৬ শতাংশ ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। জয়পুরহাট পাঁচবিবি উপজেলার ফিসকাঘাট এলাকার আহসান হাবীব, ধরঞ্জি হাজীপাড়া এলাকার শহীদুল ইসলামলাই উপজেলার ও ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা বাজারের সাইফুল ইসলাম, কালাই উপজেলার মোলামগাড়ীহাটের মোহসিন আলী, আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালি এলাকার আলম ও সদর উপজেলার আদর্শপাড়ার রুহুল আমিনসহ একাধিক ধানচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি কালবৈশাখীর প্রভাবে পাকা এবং আধাপাকা ধানের গাছ জমিতে শুয়ে পড়েছে। কিছু কিছু নিচু জমিতে এখনও পানি জমে আছে। তাই ধান কেটে নিতে হচ্ছে চড়া দামে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি বিঘা ধান কাটা যেত ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এখন সেই ধান কাটতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। এখন প্রতি বিঘা ধান কেটে নিতে হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়।
কালাই উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের কৃষক শফির উদ্দিন, অজিমুদ্দিন, ফিতা মিয়া ও আনিছুর রহমান জানান, তাদের নিজের তেমন জমি না থাকায় বর্গা এবং এক বছরের জন্য জমি ভাড়া নিয়ে তারা নিজেরা পরিশ্রম করে মাত্র দুই আড়াই বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করেছেন। ধানের চারা রোপণ, সেচ, কীটনাশকসহ সব মিলে তাদের বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১১-১২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে জমির ভাড়া ৫ হাজার ধরলে খরচ পড়ে প্রায় ১৬-১৭ হাজার টাকা। এখন বাজারে মোটা ধানের বাজারদর মণ প্রতি ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত এবং চিকন ধানের বাজার দর মণ প্রতি ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা। এ অবস্থায় নিজের পারিশ্রমিকের মূল্য বাদ দিলে কোনো রকম চাষাবাদের খরচ আর ধান বিক্রির আয় প্রায় সমান হয়ে যাচ্ছে। সব চেয়ে বিপদে আছেন মধ্যবিত্ত কৃষকরা, যারা অল্প জমি থাকায় ভাড়াও দিতে পারেন না, আবার দিন মজুর ছাড়া নিজেরাও চাষাবাদ করতে পারেন না। আক্কেলপুর উপজেলার কোলা গ্রামের গফুর মিয়াসহ অনেক ধানচাষি জানান, এ মৌসুমে বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন হয়েছে বিঘা প্রতি ১৮-২০ মণ। প্রতি বিঘায় ধান বিক্রি করে কৃষকরা পাচ্ছেন ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। এ অবস্থায় শ্রমিকের মজুরি যোগ করলে হয় সমান সমান।
ফলে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে নেই কৃষকদের প্রাণচাঞ্চল্য, ধানের দর পতনে তাদের চোখে-মুখে রয়েছে বিষণ্ণতার ছাপ। পাঁচবিবি উপজেলার শাইলট্টি গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন, চানপাড়া গ্রামের হাকিম হোসেন জানান, সরকার এবার মণ প্রতি ১০০০ টাকা দরে ধান না কিনলে ও বাজারে ধানের দাম না বাড়লে অধিকাংশ কৃষক লোকসানের মুখে পড়বেন। নীলফামারী জেলার ডোমার থেকে আসা শ্রমিক মোসলেম উদ্দিন, মফিজুল ইসলাম এবং স্থানীয় শ্রমিক আবু সাইদ, খোকন ইসলাম জানান, জমির ধান শুয়ে পড়ায় এবং জমিতে পানি জমে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে ধান কাটা যাচ্ছে না। ৫ হাজার টাকা বিঘা দরে ধান কেটেও পড়তা হচ্ছে না।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ৩৬ শতাংশ জমির ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। তবে গত কয়েকদিন আগে কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টিতে প্রায় ২ হাজার ১৩ হেক্টর বোরো ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফসল উৎপাদনের ক্ষতি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ধানের দামের ব্যাপারে মার্কেটিং কর্মকর্তা দেখভাল করেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews