ট্রাম্পের রোষানলে নাসা, চাকরি হারালেন প্রধান বিজ্ঞানীসহ শীর্ষস্তরের অনেকে

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ডনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যভার গ্রহণের পর থেকে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে সরকারি কর্মীদের ছাঁটাই। এর মধ্যে নাসার প্রধান বিজ্ঞানীসহ মোট ২৩ জনকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আরও ছাঁটাই হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংস্থার এক মুখপাত্র। নাসার প্রধান বিজ্ঞানী ক্যাথরিন কেলভিন মূলত পরিবেশবিদ। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেন তিনি। বিয়াল্লিশ বছরের ক্যাথরিন ২০২২ সালে অর্থাৎ বাইডেন জমানায় নাসার সিনিয়র পরিবেশ বিজ্ঞানী হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন। জলবায়ু বদল সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি, সমাধানের রাস্তা বের করার ভার ন্যস্ত ছিল তার ওপর।
জাতিসংঘের পরিবেশ সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ এবং আলোচনা সভায় তার গুরুত্ব বাড়ছিল। গত মাসে চীনে আয়োজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল তাকে। ক্যাথরিন কেলভিন আচমকাই যেন পড়ে গেলেন ট্রাম্পের রোষানলে। প্রেসিডেন্টের পরামর্শক্রমে নাসা প্রশাসন তার চাকরি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে খবর।
‘নাসা ওয়াচ’-এ রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এই নতুন ছাঁটাইয়ের ফলে সংস্থাটিতে জলবায়ু গবেষণার কার্যক্রম কমে গিয়ে মহাকাশ অনুসন্ধানে বেশি গুরুত্ব দেয়া হতে পারে। ক্যাথরিন কেলভিন ২০২২ এর ১০ জানুয়ারি থেকে নাসার গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধান বিজ্ঞানী হিসাবে কেলভিন সংস্থার বৈজ্ঞানিক প্রোগ্রাম, বিজ্ঞান-সম্পর্কিত কৌশলগত পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কেলভিন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যানেজমেন্ট, সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডক্টরেট এবং মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ম্যাথমেটিক্সে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
২০০৮ সাল থেকে কেলভিন মেরিল্যান্ডের কলেজ পার্কে প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির জয়েন্ট গ্লোবাল চেঞ্জ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (জেজিসিআরআই) একজন ভূ-বিজ্ঞানী। তিনি জেজিসিআরআই-এর গ্লোবাল চেঞ্জ অ্যানালাইসিস মডেলে কাজ করেছেন, যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে মানব ও পৃথিবীর সিস্টেমের মধ্যে সম্পর্ক অন্বেষণ এবং বিশ্লেষণ করার একটি সিস্টেম। তিনি এনার্জি ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি এক্সাস্কেল আর্থ সিস্টেম মডেলেও কাজ করেছেন, যা পৃথিবীর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের অবস্থা বিশ্লেষণ করার একটি সিস্টেম। তার গবেষণা পরিবেশগত এবং আর্থ-সামাজিক পটভূমিতে ভূমি, পানি এবং শক্তি ব্যবহারের প্রভাবের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
তিনি ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস গবেষণা কমিটিতেও কাজ করেছেন। যদিও পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে ট্রাম্পের বিশেষ আগ্রহ নেই। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে বাইডেন আমলে বিশ্ব পরিবেশ সুরক্ষা স্বাক্ষরিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্যারিস চুক্তি বাতিল করতে দ্বিধা করেননি তিনি। তাই বিজ্ঞান ও গবেষণা খাতে ব্যয় সংকোচন চান ট্রাম্প। ফলে কোপ পড়ল বিজ্ঞানীদের চাকরিতে। এমনই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল
নাসার মুখপাত্র শেরিল ওয়ার্নার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আমাদের কর্মীবাহিনীকে যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য নাসা ধাপে ধাপে কর্মী ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা ‘রিডাকশন ইন ফোর্স’ (আরইএফ) নামে পরিচিত। কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ১০ মার্চ বিজ্ঞপ্তি পেয়েছেন।
সূত্র : ইকোনোমিক টাইমস