ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করে এবার সেই পথেই হাটলেন বাইডেন, তীব্র সমালোচনা
বিবিসি জানিয়েছে, মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্পের সেই দেয়াল নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: অবৈধ অভিবাসী আটকাতে এবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পথেই হাটলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ট্রাম্প চেয়েছিলেন প্রতিবেশী মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করতে। নির্বাচনে জিততে মার্কিনিদের যে কটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাইডেন, তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করবেন না তিনি। ক্ষমতায় এসে সবার আগে তিনি এই দেয়াল নির্মাণ বন্ধ করেন। কিন্তু এবার তিনি সেই ট্রাম্পের পথেই হাটলেন। অভিবাসী সংকট সমাধানে ট্রাম্প যে সঠিক ছিলেন তাই যেনো মেনে নিলেন তিনি।
বিবিসি জানিয়েছে, মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্পের সেই দেয়াল নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। অভিবাসীদের ঢল আটকাতে টেক্সাসের স্টার কাউন্টিতে মেক্সিকো সীমান্তজুড়ে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল উঠবে। এই দেয়াল নির্মাণের জন্য ট্রাম্পকে ‘বর্ণবাদী’ আখ্যা দিয়েছিল ডেমোক্রেট দল। মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ ছিল ট্রাম্পের ‘সিগনেচার পলিসি’। সেই উদ্যোগের ঘোরতর বিরোধিতা করেছিল ডেমোক্রেটিক পার্টি।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মেক্সিকো সীমান্তে আর এক ফুট দেয়ালও নির্মাণ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাইডেন। কিন্তু যেভাবে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ বাড়ছে, তাতে নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের জন্য বিষয়টি খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
দেয়াল নির্মাণের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বাইডেন এখন নিজ দল এবং বিরোধী দল উভয় দিক থেকেই আক্রমণের স্বীকার হচ্ছেন। কারণ এই ডেমোক্রেটরা এতদিন এই দেয়ালের তীব্র বিরোধী ছিল। আর রিপাবলিকানরা বাইডেনকে ‘ভণ্ড’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। বাদ যাচ্ছে না মানবাধিকার সংগঠনগুলোও। তারা এতদিন দেয়াল ইস্যুতে ডেমোক্রেট সমর্থন দিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই একদম উল্টো পথে হাটতে শুরু করলেন বাইডেন।
এই খবরের পর বাইডেনকে আক্রমণ করতে ভোলেননি ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমিই ঠিক ছিলাম। জো বাইডেন কি এখন আমার এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষমা চাইবেন! বাইডেনকে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন অন্য রিপাবলিকানরাও। উত্তর ক্যারোলিনার রিপাবলিকান প্রতিনিধি রালফ নরম্যান বিবিসিকে বলেন, বাইডেন মনে করেননি যে দেয়াল কাজ করবে। তাহলে এখন কি পরিবর্তন হয়েছে?
বাইডেনকে টার্গেট করতে বাদ যায়নি ডেমোক্রেটরাও। রিপ্রেজেন্টেটিভ হেনরি কুয়েলার বিবিসিকে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে তার ভোটাররা এই ঘোষণায় খুশি হবেন। একবিংশ শতাব্দীর সমস্যার জন্য আমি এখনও ১৪ শতকের একটি সমাধানের বিরুদ্ধে। আমি সীমান্তে আরও সেনা সদস্য ও প্রযুক্তি দেখতে চাই। ডেমোক্রেট দলের আরেক কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ এটিকে একটি ‘নিষ্ঠুর নীতি’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বাইডেনকে আবারও উল্টো পথে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এ বছর এরইমধ্যে রিও গ্র্যান্ডে ভ্যালি এলাকা দিয়ে ২ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করেছে বলে সরকারি তথ্যে জানা গেছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি নগরী থেকে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যাওয়ার খবর এসেছে। নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, গত বছর থেকে সেখানে যে এক লাখের বেশি নতুন অভিবাসী এসেছে, তাদের আবাসনের জন্য আগামী তিন বছর ১২শ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হবে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ২২ লাখের বেশি অভিবাসীকে আটক করেছে।