গুরু অপরাধে শুধুই তিরস্কার!

আলীমুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান থাকলেও অনুসন্ধান নেই মর্মে প্রতিবেদন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল দুদক।

গুরু অপরাধে শুধুই তিরস্কার!

প্রথম নিউজ, ডেস্ক:  দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলমান থাকলেও পদোন্নতি পেয়েছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান চৌধুরী। কারণ তার বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর পেছনে নামের বানানে ‘সামান্য ভুল।’ কম্পিউটারে থাকা তালিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় মো. আলীমুজ্জামান চৌধুরীর পরিবর্তে মো. আলীম উজ জামান চৌধুরী লিখে সার্চ দিয়েছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী। এতেই কাজ হয়েছিল। আলীমুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান থাকলেও অনুসন্ধান নেই মর্মে প্রতিবেদন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল দুদক।

২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি পাঠান দুদকের তৎকালীন সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পদোন্নতি পেয়েছিলেন মো. আলীমুজ্জামান চৌধুরী। অথচ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তার বিরুদ্ধে ৪০০ কোটি টাকা প্রকল্পে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছিল দুদকের তদন্ত দল। ভুল বানানে নাম খোঁজার কাজটি করেছিলেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মো. সেলিম হাওলাদার। গুরুদণ্ডের এমন অপরাধ করেও শুধু তিরস্কারেই পার পেয়ে গেলেন তিনি। গত ১১ মার্চ পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভ বা অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কারণে তাকে এ লঘুদণ্ড দেওয়া হয়। গত ৯ মার্চ এ বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়। এতে সই করেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।

আদেশে বলা হয়, ওই মিথ্যা/ভুল তথ্য উপস্থাপনের জন্য আলীমুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান চলমান থাকলেও অনুসন্ধান নেই মর্মে একটি প্রতিবেদন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই তথ্যের ভিত্তিতে তার পদোন্নতির বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। আরও বলা হয়, সেলিম হাওলাদারের অদক্ষতা ও দায়িত্বহীন কর্মের জন্য একজন কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ায় কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। অভিযুক্ত সেলিম ওই তথ্য অনিচ্ছাকৃতভাবে ও অজ্ঞাতসারে করেছেন মর্মে স্বীকার করে বক্তব্য প্রদান করেছেন। সার্বিক বিবেচনায় তার বিরুদ্ধে দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, ‘অদক্ষতা’র অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ কাজের জন্য ১১ মার্চ তিনি চাকরি থেকে পিআরএলে যাবেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে ‘তিরস্কার’ করা হয়। এ ‘তিরস্কার’ লঘুদণ্ড কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত।

দুদক জানায়, মৎস্য অধিদপ্তরের জলাশয় সংস্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আলীমুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান। অথচ কোনো অনুসন্ধান বা তদন্ত নেই মর্মে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন সেলিম। এর মধ্য দিয়ে তিনি দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ ও অদক্ষতার পরিচয় দেন। ফলে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয় ও এবং নোটিশ পাঠিয়ে জবাব চাওয়া হয়। গত ২৬ আগস্ট জবাব দেন সেলিম। দাবি করেন, অসৎ উদ্দেশ্যে নয়, করণিক ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে। পরদিন ব্যক্তিগত শুনানি হয়।

সেলিমের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম গত ৩১ জানুয়ারি কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেখানে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তি কম্পিউটারে রক্ষিত পেন্ডিং তালিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় মো. আলীমুজ্জামান চৌধুরীর পরিবর্তে মো. আলীম উজ জামান চৌধুরী লিখে কম্পিউটারে তল্লাশি করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আলীমুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ চলমান থাকলেও ভুল নামে কম্পিউটারে টাইপ করায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ চলমান নেই মর্মে রিপোর্ট প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে অফিস আদেশের বাইরে দুদকের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।