আগুনে আশ্রয় হারিয়েছেন ১২ হাজার রোহিঙ্গা : ইউএনএইচসিআর

কক্সবাজারের কুতুপালং-বালুখালি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজার ঘর পুড়ে গেছে, আশ্রয় হারিয়েছে ১২ হাজার রোহিঙ্গা

আগুনে আশ্রয় হারিয়েছেন ১২ হাজার রোহিঙ্গা : ইউএনএইচসিআর
আগুনে আশ্রয় হারিয়েছেন ১২ হাজার রোহিঙ্গা : ইউএনএইচসিআর

প্রথম নিউজ, কক্সবাজার : কক্সবাজারের কুতুপালং-বালুখালি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজার ঘর পুড়ে গেছে, আশ্রয় হারিয়েছে ১২ হাজার রোহিঙ্গা। হাসপাতাল ও লার্নিং সেন্টার মিলিয়ে ৯০টিরও বেশি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

সোমবার (৬ মার্চ) ইউএনএইচসিআরের সহকারী কমিউনিকেশন অফিসার মোস্তফা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন জানান, জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএমের ব্যবস্থাপনার আওতাধীন এই ১১নং ক্যাম্পে এই আগুন জ্বলছিল প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে। অগ্নি-নির্বাপণে প্রশিক্ষণ পাওয়া রোহিঙ্গা সেফটি ইউনিট ভলান্টিয়ার, স্থানীয় দমকল ইউনিট ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ মিলে আনুমানিক বিকেল ৫টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ইউএনএইচসিআর থেকে দেওয়া ১৬টি (তিন চাকার) মোবাইল ফায়ার ফাইটিং ইউনিট ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছিল এবং সাহায্য করেছিল ঘিঞ্জি ও সহজে যাওয়া যায় না এমন জায়গাগুলোতে যেতে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ১১নং ক্যাম্পে ৩২ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাস। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১২ হাজার শরণার্থী ঘরছাড়া হয়েছে। প্রায় দুই হাজার ঘর আংশিক বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতাল ও লার্নিং সেন্টার মিলিয়ে ৯০টিরও বেশি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আগুন লাগার পর থেকেই শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের নেতৃত্বে মানবিক সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় ও সমন্বিত সহায়তা দেয়ার জন্য পরিকল্পনা শুরু করে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

সাইট ম্যানেজমেন্ট, শেল্টার এবং নন-ফুড আইটেম (এনএফআই) আক্রান্ত ও অনাক্রান্ত সকল ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা সেফটি ইউনিট ভলান্টিয়াররা আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়ে।

ইউএনএইচসিআরের দেওয়া সরঞ্জাম নিয়ে তারা যখন যেখানে সম্ভব “ফায়ার ব্রেক” তৈরি করছিল, যেন আগুনের ছড়িয়ে পড়া বন্ধ কিংবা স্তিমিত করা যায়। ইউএনএইচসিআরের সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে ১৬টি তিন চাকার ফায়ার ফাইটিং গাড়ি কাজে লাগানো হয়। 

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে, ইউএনএইচসিআর ১২নং ক্যাম্পের চিকিৎসা সেবার স্থাপনাগুলো খালি করে ফেলে। ইউএনএইচসিআর ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো আক্রান্ত ক্যাম্পে শেল্টার/এনএফআই সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রকৌশলী ও অন্যান্য সকল স্টাফ নিয়ে যেকোনো সময় কাজ শুরু করতে প্রস্তুত রয়েছে।

স্বাস্থ্য চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি বলেন, আগুন ও অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণ পরবর্তীতে তিনটি মোবাইল মেডিকেল টিম কাজ শুরু করে।
পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে ১১নং ক্যাম্প ও পার্শ্ববর্তী ১২নং ক্যাম্প থেকে মোট ৯০ জন কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার (রোহিঙ্গা শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবক) কাজ শুরু করেছে। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে, নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রেফার করা, রেফারেলের আগে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা (ফার্স্ট এইড) প্রদান করা, অগ্নিকাণ্ডের সময় ও এর পরে করণীয় কাজগুলো সবাইকে জানানো, সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড প্রদান, আক্রান্ত শরণার্থীদের তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়।

আগুনের ভয়াবহতায় মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড সাইকোসোশ্যাল সাপোর্ট (এমএইচপিএসএস) ওয়ার্কিং গ্রুপের ফোকাল পয়েন্টরা কাজ শুরু করেছে। যেন আক্রান্তদের সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড প্রদান এবং ব্যক্তিগত চাহিদার ওপর নির্ভর করে রেফারেলের কাজ সমন্বিত উপায়ে করা যায়। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) সংযোগী সংস্থাগুলো জরুরি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষার বিষয়ে তিনি জানান, আগুনে আক্রান্ত মানুষগুলোকে চিহ্নিত করতে ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে ইউএনএইচসিআর একটি ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করেছে। এর মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের সময় যদি কেউ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে, তাহলে সে বা তারা আবার পরিবারের সাথে একত্রিত হতে পারবে।

বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে প্রোটেকশন ইমার্জেন্সি রেসপন্স ইউনিট চালু করা হয়েছে। এই বহুমুখী দলটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা (ফার্স্ট এইড), সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ কাজে প্রশিক্ষিত এবং যেকোনো সময় কাজ শুরু করতে প্রস্তুত।

ইউএনএইচসিআর চলমান জরুরি কার্যক্রমে আইওএম ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলোকে যেকোনো সময় আরও সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: