অসংখ্য আজিজ-বেনজীর তৈরি করেছে আ.লীগ: মির্জা ফখরুল
বুধবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই আওয়ামী লীগ একজন আজিজ বা একজন বেনজীর নয়; অসংখ্য আজিজ-বেনজীর তৈরি করেছে; যারা বাংলাদেশকে লুটে খাচ্ছে। যখন ছোট ছিলাম আমাদের মা কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে গিয়ে বলতেন, ‘ছেলে ঘুমালো, পাড়া ঘুমালো বর্গি এলো দেশে’। বর্গি কারা? বর্গি সেই সব লুটেরা যারা বার্মা থেকে আসতো। এসে লুট করে সব নিয়ে চলে যেতো। তখন বাংলাদেশের মানুষ ভয় পেত। আজ আওয়ামী লীগ বর্গিতে পরিণত হয়েছে। তাদের একমাত্র কাজ বাংলাদেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে সম্পদ গড়ে তোলা। বুধবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে সভার আয়োজন করে বিএনপি। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভায় বক্তাদের বক্তব্য শুনেন। এতে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনকে জোরদার করতে সবাইকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে আত্মত্যাগ, মায়ের যেই অশ্রুধারা তা কি বিফলে যাবে? এখন জেগে উঠার সময় এসেছে। আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সব ভয়-ভীতি তাচ্ছিল্য করে দেশমাতৃকার ডাকে, আমাদের মা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ও তার ডাকে, আমাদের নেতা তারেক রহমানের ডাকে আসুন সবাই বেরিয়ে পড়ি। এমন একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলি, ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের রাষ্ট্র, গণতন্ত্রের রাষ্ট্র নির্মাণ করতে সক্ষম হই।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাবেক পুলিশ প্রধানের হাজার হাজার দুর্নীতির চিত্র পত্রিকায় বেরিয়ে আসছে। তাকে আপনি লালন করেছেন। অনেকে আগে স্যাংশন দেওয়ার পরও তাকে পুলিশের আইজি বানিয়েছেন। একইভাবে সাবেক সেনাপ্রধানকে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে একমাত্র কারণে, তিনি বাংলাদেশে লুট করেছেন, চুরি করেছেন এবং নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ দায় কি শুধু তাদের? এ দায় এই সরকারের, যারা আজকে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন। সেজন্যই বলছি- আপনারা এখনই পদত্যাগ করুন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন দেন না কেন? একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছি। কখনো বলিনি, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দাও। আমরা একা নই, ৬৩টি বিরোধী রাজনৈতিক দল বাম-ডান সবাই একসঙ্গে সেই লড়াইটা লড়ছি। আমাদের অধিকার, ভোটের অধিকারের জন্য লড়ছি। সুষ্ঠু নির্বাচন দিন, জনগণ সিদ্ধান্ত নিক। তারা সেটা কোনোদিনই করবে না। কারণ তারা জানে যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে ১০ ভাগ আসনও পাবে না। এ সময় জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভিহিত করে তার যুগান্তকারী কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলটাকে ধরে রাখছেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে প্রবাসে ঠেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশটাকে দখল করে নিয়েছে। আমরা কি এই দখল মেনে নেব? জিয়াউর রহমান আমাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে শিখিয়ে গেছেন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, জিয়াউর রহমান যেভাবে দেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেভাবে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। সেজন্য আমরা গত দেড় যুগের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন করছি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেননি। সিপাহী-জনতার বিপ্লব তাকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। যখন তিনি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন তখন কোনো মন্ত্রিপরিষদ ছিল না, কোনো সংসদ ছিল না। আগেই তা বাতিল করেছে। দেশে তখন সর্বক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা ছিল। কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে ওই সময়ে দায়িত্ব নেওয়া অসম্ভব ছিল। তার সাহসিকতা, সততা, নিষ্ঠা দায়িত্ব নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। দায়িত্ব নিয়ে দেশ ও মানুষের সমস্যা চিহ্নিত করে একটার পর একটা সমাধান করেছেন।
দেশের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, আজ এ দেশ চোরের দেশ। সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান আর পুলিশের সাবেক প্রধান চোর। এটাই হলো দেশ। মুক্তিযুদ্ধের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করেছে আওয়ামী লীগ। হতাশা নয়, সরকার পরিবর্তন হবেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এত অন্যায়-অত্যাচারের পরও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৭-১৮ বছরে বিএনপিকে ন্যূনতম দুর্বল করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ব্যর্থ, জিয়াউর রহমান সফল, খালেদা জিয়া সফল। চলমান আন্দোলনে তারেক রহমান শতভাগ সফল। তবে এই সরকার শুধুমাত্র টিকে আছে বেনজীর, আজিজসহ দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসীদের কারণে। যদি গণেশ উলটে যায় কই যাবে (আওয়ামী লীগ নেতারা)?
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, অধ্যাপক মামুন আহমেদ প্রমুখ।