অভিন্ন কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনাদের
রাজধানীর সাত স্থানে সমাবেশ
প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে শনিবার রাজধানীর সাত স্থানে সমাবেশ করেছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা দল ও জোট। এ সময় তারা আলাদাভাবে সমাবেশ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে। একই দিন এ কর্মসূচি বিএনপিও পালন করবে। এদিন পৃথকভাবে সমাবেশ করে সাত দলের গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, চারদলীয় বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, এলডিপি, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি এবং ১৫ সংগঠনের সমমনা গণতান্ত্রিক জোট। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। ঢাকাসহ ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে পূর্বঘোষিত সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। বিএনপির নেতৃত্বে এসব দল, জোট ও সংগঠন গত ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। এ সমাবেশ তাদের পঞ্চম যুগপৎ কর্মসূচি।
গণতন্ত্র মঞ্চ : সরকারের পদত্যাগসহ ১৪ দফার দাবিতে ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে পদযাত্রা ও গণসংযোগের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে এ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ঢাকায় ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় মিরপুর ১২ নম্বরে গণতন্ত্র মঞ্চের পদযাত্রা শুরু হবে। সেখান থেকে পদযাত্রা ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন হয়ে মতিঝিলে গিয়ে শেষ করব। একই সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ জেলা ও বিভাগীয় পর্য়ায়েও এই কর্মসূচি করবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আপনাদের (সরকার) স্মার্টনেস মানে চাতুরি করা, ভোট চুরি করা। বাংলাদেশের মানুষ আর মিথ্যাচার মেনে নেবে না। বাংলাদেশের মানুষ দালাল নামিয়ে আন্দোলন ধ্বংস করার তৎপরতা বেশি দিন আর দেখবেন না। মানুষ জেগে উঠছে। গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর বলেন, এই সরকার বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সমপর্যায়ে নিয়ে গেছে। পাকিস্তান আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশও আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছে। এই সরকার বাংলাদেশকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে আইএমএফ-এর কাছে হাজির করেছে। আইএমএফ-এর পরামর্শে এদেশের কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষকে মারার জন্য বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। আবার চালাকি করে বলছে, দাম বাড়ানো হচ্ছে না, দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। এই ভাঁওতাবাজি ভন্ডদের প্রতারণা ধরতে হবে। ২০১৪ সালে ওদের ভন্ডামি ধরতে পারিনি, ২০১৮ সালেও ধরতে পারিনি, এবার আমরা ধরতে পেরেছি।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ। সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে বক্তব্য দেননি।
এলডিপি : লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেছেন, নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে সবকিছু। মনে হচ্ছে জ্বলন্ত চিতার ওপর আছে দেশের মানুষ। শনিবার বিকালে রাজধানীর পূর্ব পান্থপথের এফডিসিসংলগ্ন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপি আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করে এলডিপি। মিছিলটি মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে আরও অংশ নেন এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম, ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাডভোকেট এসএম মোরশেদ, অধ্যক্ষ স্যাকলায়েন, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপিকা মোছা. কারিমা খাতুন, কেন্দ্রীয় নেতা বিল্লাল হোসেন মিয়াজি, ইব্রাহিম মিয়া, অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম, অ্যাডভোকেট নিলু, কবির উদ্দিন, অধ্যক্ষ আবদুস সামাদ, ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সাহাদাত হোসেন মানিক, উত্তরের অবাক হোসেন রনি, পূর্বের মো. সোলায়মান, গণতান্ত্রিক যুবদলের আমান সোবহান, গণতান্ত্রিক ছাত্রদলের মেহেদী হাসান মাহবুব প্রমুখ।
১২ দলীয় জোট : শনিবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকসংলগ্ন রাস্তায় সমাবেশ করে ১২ দলীয় জোট। জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার পরিচালনায় সমাবেশ আরও বক্তব্য দেন লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির কারি মুহাম্মদ আবু তাহের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (জাফর) আহসান হাবীব লিংকন, জাগপার ইকবাল হোসেন, ইসলামী ঐক্য জোটের শওকত আমিন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নুরুল কবির পিন্টু প্রমুখ।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট : ১১ ফেব্রুয়াারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করে ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। শনিবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে এক সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাগপার একাংশের খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের (একাংশ) অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারি, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মাইনোরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মণ্ডল, ন্যাপ ভাসানীর অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, সাম্যবাদী দলের ডা. নুরুল ইসলাম, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা প্রমুখ।
সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট : শনিবার সকালে পুরানা পল্টন মোড়ে ‘সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট’-এর উদ্যোগে সমাবেশ হয়। জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জিয়া নাগরিক সংসদের অ্যাডভোকেট মাইনুদ্দিন মজুমদার, জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের সৈয়দ ওমর ফারুক, সংবিধান সংরক্ষণ পরিষদের অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আমির হোসেন বাদশা প্রমুখ।
গণফোরাম ও পিপলস পার্টি : শনিবার বিকালে আরামবাগে সমাবেশ করেছে গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। এ দুই দলও একই কর্মসূচি ঘোষণা করে। সমাবেশে বক্তব্য দেন গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, পিপলস পার্টির বাবুল সর্দার চাখারী, গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক, অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, আইয়ুব খান ফারুক, মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী, মির্জা হাসান, মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, নাছির হোসেন, পিপলস পার্টির রফিকুল ইসলাম রণো, আবদুল কাদের, আতিকুর রহমান লিটন, গোলাম মোস্তফা, নাজমা আক্তার, বিলকিস খন্দকার, কামাল আহমেদ, অ্যাডভোকেট জসিম আশ্রাফ প্রমুখ। এছাড়াও দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের (পূর্বপ্রান্তে) সামনে সমাবেশ করেছে চারদলীয় জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: