সরকারের ব্যাংক ঋণ সোয়া লাখ কোটি টাকা
টাকা ছাপিয়ে ঋণ দিলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে-ড. জাহিদ হোসেন
প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিদায়ি অর্থবছরে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা, যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার ৭৮৯ কোটি এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বেশি। অর্থবছরের প্রথম দিকে এই ঋণের অঙ্ক কম থাকলেও শেষের দিকে ঋণের চাপ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ২১ ও ২২ জুন দুই দিনেই ১৫ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের যে উৎস থেকে রাজস্ব বাড়ানো উচিত, সেখান থেকে আয় না হওয়ার কারণে ঘাটতি বাজেট মেটাতে শেষ দিকে ব্যাংকঋণ বাড়িয়েছে সরকার। এছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি নেতিবাচক ধারায় নেমেছে। বৈদেশিক ঋণ ছাড়েও গতি নেই। ফলে সরকার বাধ্য হয়েই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে।
৩১ মে পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক থেকে নিট ঋণের অঙ্ক ছিল ৯২ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। আর ২০ জুন তা বেড়ে এক লাখ ১২ হাজার ২৪১ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ জুনের প্রথম ২০ দিন সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের অঙ্ক ছিল ১৯ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। তবে ২২ জুন সরকারের নিট ঋণের অঙ্ক আরও বেড়ে এক লাখ ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকাতে পৌঁছায়। অর্থাৎ দুই দিনে সরকার ব্যাংক থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ১৫ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। পুরো টাকাই জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২৬ জুন ছিল গত অর্থবছরের শেষ দিন। কারণ ২৭ তারিখ থেকে শুরু হয় পবিত্র ঈদুল আজহার সরকারি ছুটি। ২৬ জুন পর্যন্ত অর্থাৎ, অর্থবছর শেষে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণের অঙ্ক দাঁড়ায় এক লাখ ২৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৮ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিয়েছে ২৫ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ি অর্থবছরে সরকারকে যত ঋণ দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে ৭৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা নতুন টাকা ছাপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিগত কয়েক বছরে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছে, তার মধ্যে বিদায়ি বছরে নেওয়া ঋণের অঙ্কই সর্বোচ্চ। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নিয়েছে মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তীব্র তারল্য সংকট থাকার কারণে। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের মুখে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ যত বাড়বে, মূল্যস্ফীতিও তত বাড়বে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ঋণের অর্থ টাকা ছাপিয়ে দিচ্ছে। এ বছর বাংলাদেশ ব্যাংককে ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নের সূত্র হিসাবে ব্যবহার করছে সরকার। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এত পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়নি।
খুবই সামান্য নেওয়া হতো। সেটা ক্যাশ না থাকার কারণে এক দিনের জন্য হতো। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়মিত ঋণ নেওয়া শুরু হয়েছে। এ ধারা চলতে থাকলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। বরং মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বিদায়ি অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৯৮ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর ঘাটতি বাজেট মেটাতে ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।