সফরের প্রথম দিনেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন ডোনাল্ড লু
মোমেন ও লু'র মধ্যকার আনুষ্ঠানিক বৈঠক কাম ডিনারে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ঢাকা সফর শুরু করেছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। বহুল আলোচিত ওই ডিপ্লোমেট শনিবার সন্ধ্যায় ভারত হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান। ঢাকা সফরের প্রথম দিনেই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তিনি মন্ত্রীর ইস্কাটনস্থ সরকারি বাসভবনে (পররাষ্ট্র ভবন) যান। সেখানে প্রায় দেড় ঘন্টার বেশি সময় স্থায়ী হওয়া ভোজ-বৈঠক করেন তারা। সূত্র জানিয়েছে, মোমেন ও লু'র মধ্যকার আনুষ্ঠানিক বৈঠক কাম ডিনারে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে সুনির্দিষ্টভাবে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হয়নি।
কারণ বৈঠক শেষে মার্কিন প্রতিনিধিরা কোনো বাক্য বিনিময় ছাড়াই পররাষ্ট্র ভবন ত্যাগ করেন। তাছাড়া রাত ১১ টা অবধি গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা ভবন গেটে অপেক্ষায় থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা করেন, কিন্তু মন্ত্রী রাজি হননি। ধারণা করা হচ্ছে আজ সরকারের অন্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে মার্কিন অতিথির বৈঠকের পর উভয়ের তরফে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং হতে পারে।
স্মরণ করা যায়, ঢাকা আসার আগে দু’দিন নয়াদিল্লিতে কাটিয়েছেন মার্কিন সহকারী মন্ত্রী। সেখানে ভারত সরকার এবং দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন বিষয় সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার। দিল্লির সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, দিল্লিতে থাকাকালে ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন এশিয়া এক্সপার্ট ডোনাল্ড লু।
আজকের কর্মসূচী : এদিকে আজ (রোববার) প্রাতঃরাশ বৈঠক দিয়ে তার সফরের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। এরপর ব্যাক টু ব্যাক বৈঠক করবেন সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে। এরপর যাবেন সেগুনবাগিচায়। সেখানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে তার পূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। গুরুত্বপূর্ণ ওই অতিথির সম্মানে পররাষ্ট্র সচিব অফিসিয়াল লাঞ্চের আয়োজন করছেন। যেখানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মার্কিন সহকারী মন্ত্রীর দেখা হবে। এ ছাড়া রাতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের প্রভাবশালী ওই কর্মকর্তার মতবিনিময় হতে পারে। আলোচিত ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরটি নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পেশাদার কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
বিশেষ করে রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েনের প্রেক্ষাপটে ‘পারস্পরিক বোঝাপড়া’য় এটাকে ‘ক্রুশিয়াল ভিজিট’ বলছেন তারা। তাদের মতে, র্যাবের ওপর এক বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট যেসব বিষয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন মতপার্থক্য রয়েছে তা দূর করে আগামীর পথে পা বাড়াতে লু’র সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত দুই দেশের অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্কে গতি আনতে সফরটি ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ হওয়ার প্রত্যাশা করছে সেগুনবাগিচা। কর্মকর্তাদের দাবি, সদ্যসমাপ্ত মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচারের সফরটি ভালোই হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় ডোনাল্ড লু’র সফরও ফলপ্রসূ হবে। মার্কিন প্রতিনিধি আইলিন তার ঢাকা সফরে এটা স্পষ্ট করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরকারের মূলনীতি হচ্ছে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র। এ নিয়ে বাংলাদেশে যে সমস্যা বিদ্যমান এবং দীর্ঘদিন ধরে তা অস্বীকার করার যে ধারায় ছিল ঢাকা, তাতে খানিকটা হলেও পরিবর্তন এসেছে।
নির্বাচনের আগে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত হয়েছে বাংলাদেশ, যা এতদিন ধরে দুই দেশের সম্পর্কে বড় বাধা ছিল। বাইডেন দূত আইলিনের পর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র এই সফরকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, ব্যাক টু ব্যাক ওই সফরকে আমরা আমাদের যোগাযোগের অংশ হিসেবেই দেখছি। ডিসেম্বরে আশঙ্কা ছিল নতুন করে নিষেধাজ্ঞার, কিন্তু ২০২২ সাল জুড়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কারণে অনাকাক্সিক্ষত কোনো নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়নি দাবি করে সচিব বলেন, কিছু বিষয়ে এখনো আমাদের মতভিন্নতা রয়েছে।
তবে এটা সত্য যে, সম্পর্ক উন্নয়নে আমাদের উভয়ের আগ্রহ দৃশ্যমান। সচিব বলেন, সম্পর্কে যেসব বাধা রয়েছে তা নিরসনে উভয় পক্ষ আন্তরিক। এ বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সফর হচ্ছে এবং সামনে বাংলাদেশের তরফেও কিছু সফর হবে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সমস্যার জায়গাগুলো আমরা চিহ্নিত করছি এবং তা দূর করতে চেষ্টা করছি। লু’র সফরে যুক্তরাষ্ট্র তার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরবে জানিয়ে সচিব বলেন, বাংলাদেশও তার বিষয়গুলো তুলতে চেষ্টা করবে। সেগুনবাগিচার অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত যে আভাস মিলেছে তাতে ডোনাল্ড লু’র সফরে ওয়াশিংটনের তরফে মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণের তাগিদ আসতে পারে।
ঢাকায় তাদের মিশনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানাতে পারে। সেই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পাশাপাশি শ্রম অধিকার, দরপত্র প্রতিযোগিতায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে। এসব বিষয়ে সরকারের তরফে অবস্থান ব্যাখ্যা করার প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ডোনাল্ড লু’র রাজনৈতিক ওই সফরে বিরোধীদের তথ্য বা প্ররোচনায় যেন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞার চিন্তা না করে সেটাই চাইবে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ত: গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র্যাবের ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আইনি প্রক্রিয়া সহজতর করা তথা রাজনৈতিক সহায়তা চাইবে ঢাকা। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীকে ফেরত পাঠানোর দাবি রয়েছে বাংলাদেশের। আশা করা হচ্ছে, উপরোল্লিখিত বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য আমলে নিবেন এবং ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং বাস্তবসম্মত পরামর্শ রেখে যাবেন। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বৈশ্বিক শান্তি রক্ষা কার্যক্রম, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শনে বাংলাদেশের অবস্থানের স্বীকৃতি এবং সব ক্ষেত্রে মার্কিন সহায়তার বিষয়ে ইতিবাচক ফিডব্যাক আশা করে ঢাকা।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: