শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি, আধাঘণ্টা পর বক্তব্য পাল্টালেন চিফ প্রসিকিউটর

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি, আধাঘণ্টা পর বক্তব্য পাল্টালেন চিফ প্রসিকিউটর

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকারপ্রধানের পদ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধরতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিঢ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম রবিবার দুপুরে সাংবাদিককে এ তথ্য জানালেও আধাঘণ্টার মাথায় তিনি এ বক্তব্য থেকে সরে আসেন। ফলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ সংবাদ প্রচার-প্রকাশ করতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে।

চিফ প্রসিকিউটর প্রথমে কয়েকজন সাংবাদিককে বলেন, ‘ইন্টারপোলে অলরেডি একটা রেড নোটিশ জারি হয়ে গেছে।
’ তখন এক সাংবাদিক জানতে চান, কবে জারি হয়েছে। জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যখন আমরা আবেদন করেছি তার পরপরই। ইমেডিয়েটলি জারি হয়ে আছে। এটা তো আসলে বাইরে বলা হয় না।
যখন আমরা রিকোয়েস্টটা পাঠাই ফরমালি ইয়ের (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো-এনসিবি) মাধ্যমে, তখনই জারি হয়ে যায়।’

এরপর ইন্টারপোল, এনসিবির ওয়েবসাইটে গিয়ে রেড অ্যালার্ট জারির তথ্য নিশ্চিত হতে চান সাংবাদিকরা। কিন্তু ইন্টারপোল বা এনসিবির ওয়েবসাইটে এসংক্রান্ত কোনো পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন চিফ প্রসিকিউটর।

ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম এনসিবির কাজ ও দায়িত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘গত ১৭ অক্টোবর এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রধান আসামি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। বাংলাদেশ পুলিশের একটি শাখা আছে এনসিবি (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) নামে। তারা ইন্টারপোলের ব্যপারে, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা বা ইন্টারপোল রিলেটেড যত অ্যাক্টিভিটিস আছে, বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষ থেকে তারা (এনসিবি) সেটা মনিটর করেন, দেখভাল করেন এবং সে ব্যপারে তারা দায়িত্ব পালন করেন।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘গত ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের অফিস থেকে অমরা ফরমালি ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করার জন্য, তাদের (এনসিবির) যে স্বীকৃত ফরম আছে, সেটা ফিলাপ করে একটি ফরোয়ার্ডিং লেটারসহ আমরা এনসিবিকে পাঠিয়েছি। বাকি ফরমালিটিজটা (আনুষ্ঠানিকতা) করার দায়িত্ব এনসিবির।
সুতরাং ইন্টারপোলের রেড নোটিশটা ইন্টারপোল কর্তৃক জারি হয়েছে কি না, সেই বিষয়টা বলার দায়িত্ব হচ্ছে এনসিবির। বাস্তবিক অর্থে আমাদের পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজি) কার্যালয়ের। আমরা এই খবরটা ক্লিয়ারলি বলতে পারছি না যে, এটা জারি হয়েছে কি না বা ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে এটা (রেড অ্যালার্ট জারির তথ্য) অ্যাভেইলেবল আছে কি না। এটার আপডেট জানতে হলে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন অ্যাডিশনাল আইজি আছেন এনসিবির দায়িত্বে, তার কাছ থেকে এটার বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। আমরা যদি জানতে পারি ভবিষ্যতে বা পরবর্তীতে আমরা আপনাদের এটা জানাতে পারব।’

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হতে তিন মাস লাগতে পারে

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত কাজের অগ্রগতি জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই অন্তত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে তদন্ত, আমাদের তদন্ত সংস্থা যেটা বলেছেন, তারা মনে করেন যে, তিন মাসের মধ্যে হয়তো বা তারা শেষ করতে পারবে। এটা চূড়ান্ত কথা নয়, তারা আশা করছেন, হয়তো তারা তিন মাসের মধ্যে পারবেন।’

আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘সেটা (তদন্ত) আমাদের হাতে এসে পৌঁছালে তখন আমরা বলতে পারব আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়াটা কখন শুরু হবে। আইনে বলা আছে, তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর কবে থেকে বিচার শুরু হবে, কখন ফরমাল চার্জ দাখিল (আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল) হবে, কখন সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।’
 

শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরাতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘এটা রাষ্ট্রের ব্যপার। এই প্রশ্নের জবাব চিফ প্রসিকিউটরের অফিস দিতে পারবে না। আমাদের পক্ষ থেকে তথ্যাদি তাদের কাছে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে) দিয়েছি। ভারতের সাথে বহিঃসমর্পণ চুক্তি যেটা আছে, সেই চুক্তির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তটা সরকারকে নিতে হয়। সরকারের কাছে আমরা তথ্যাদি প্রেরণ করেছি, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে কখন কিভাবে চাইবে, ইতিমধ্যে চেয়েছেন কিনা সেটা সরকার বলতে পারবেন। এটা আমাদের জানা নেই এখন পর্যন্ত।’    

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লগ সরকার। সেদিন ক্ষমতার গদি ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেষ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক মিত্রদের বিরুদ্ধে গুম, খুন, আটক, নির‌্যাতন, হত্যা, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সারা দেশে মামলার দায়েরের হিড়িক পড়ে। অন্তবর্তী সরকার এসব অপরাধের বিচার  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিলে সেখানেও অভিযোগ জমা পড়ে।

প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৬৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে গুমের অভিযোগ রয়েছে ৩১টি।’ বেশিরভাগ অভিযোগে শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। এর মধ্যে গত ১৭ অক্টোবর প্রসিকিউশনের আবেদনে শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২৭ অক্টোবর সেনা ও পুলিশের সাবেক ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর শেখ হাসিনাকে ধরতে এনসিবির মাধ্যমে ইন্টারপোলকে চিঠি দেয় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।’