শেখ হাসিনার পালানো ছাড়া বীরত্বের কিছু দেখিনি: রিজভী

 শেখ হাসিনার পালানো ছাড়া বীরত্বের কিছু দেখিনি: রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা : শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে পালানো ছাড়া বীরত্বের কিছু দেখিনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত রিকশাচালক মোহাম্মদ কামালের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তার বাসভবনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অর্থ সহায়তা দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আজকে স্বৈরাচার পালিয়ে গিয়ে কত কথাই তারা বলছেন। একদিন তার এক মন্ত্রী বলেছিলেন তার পিতার নাম ধরে তার কন্যা কখনো পালায় না আমরা তো শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে পালানো ছাড়া বীরত্বের কিছু দেখিনি। ৭৫ এর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচ বছর তিনি বিদেশে পালিয়ে ছিলেন। তিনি তার পরিবারের যে হত্যাকাণ্ড আর প্রতিবাদ করতে এক বছর পরেই কিংবা ৬ মাস পরে দেশে আসতে পারতেন কিন্তু তিনি আসেননি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি দেশে ফিরতে পেরেছিলেন দেশে ফিরেই তিনি ষড়যন্ত্র চক্রান্ত শুরু করেছিলেন। তিনি দেশে ফেরার ঠিক ১৩ দিনের মাথায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শাহাদাতবরণ করেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছেন তার আত্মীয়-স্বজনসহ। আজকে যারা এখন আড়ালে আবডালে শেখ হাসিনার জন্য অশ্রুপাত করছেন তাদের মনে রাখা উচিত তিনি হেলিকপ্টার দিয়ে নিজে পালিয়েছেন তার বোনকে নিয়ে তার আত্মীয়-স্বজন সব পালিয়েছেন আর আপনারা যারা নেতাকর্মী সামান্য একটি খুঁতখুরোর জন্য এই ১৭-১৮ বছর ধরে গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর যুবলীগ ছাত্রলীগের পোশাক পরে বা তাদের আশ্রয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ হয়ে কত যে নিপীড়ন নির্যাতন করেছেন কত যে রক্তাক্ত করেছেন তার কোনো শেষ নেই, আর আজকে তার জন্য মায়াকান্না করছেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই মুখপাত্র আরও বলেন, তাকে (শেখ হাসিনাকে) জিজ্ঞেস করুন আপনি আমাদের ফেলে গেলেন কেন? আপনার আত্মীয়-স্বজনরা কেন আমাদের সঙ্গে নিয়ে গেলো না। আমি আওয়ামী লীগের ওই সমস্ত নেতাকর্মী এখন যারা অন্ধকারে বসে তার জন্য মায়াকান্না করছেন তাদের বলি আপনাদের তো আপনার নেত্রীর সঙ্গে কথা হয় দেখলাম এক জেলার সাধারণ সম্পাদক তাদের নেত্রীর সাথে কথা বলছেন আপনারা কি বলতে পারলেন না আপনি আপনার আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে গেলেন বোনকে নিয়ে গেলেন আপনার পুত্র তো আগেই দেশের বাইরে থাকে আপনার কন্যা থাকে বিদেশে আপনার আরও যে আত্মীয়-স্বজন কোথায় সেই নিক্সন? কোথায় সেই হেলাল? কোথায় শেখ তন্ময়? কোথায় শেখ সেলিম? তারা তো কেউ বাংলাদেশে নেই আত্মীয়-স্বজনকে নিরাপদ করে আপনি চলে গেলেন জনগণের দুর্বার আন্দোলনের স্রোতে নেতাকর্মীদের ফেলে গেলেন কেন?

তিনি বলেন, পৃথিবীর যারা অসীম সাহসী নেতৃত্বে এবং দেশপ্রেমী হয় তারা নিজের দেশ রেখে নিজের নেতাকর্মীদের ফেলে রেখে যায় না। বেগম খালেদা জিয়া কি পেরেছে? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিনরা কত চেষ্টা করেছে পারেনি কিন্তু তখনও আপনাকে চেষ্টা করে তারা সফল হয়েছিল পরে তিনি শেখ হাসিনা অভিমান করে বললেন মইনুদ্দিনকে উনি গেলেন না কিন্তু আমি কেন যাব। উনি গেলেন না উনার অদম্য দেশপ্রেম উনি গেলেন না উনার এক গভীর ভালোবাসা জনগণের সে কারণে দীর্ঘ ৬-৭ বছর কারাগারের মধ্যে রোগে শোকে কাতর হওয়ার পরেও তার কণ্ঠ তার সাহস উদ্দম দেশের প্রতি ভালোবাসা এক অনবদ্য প্রেরণার অংশ হয়েছিল গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে।

রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো অবস্থায়ই না পেরেছে স্বৈরাচারীর এরশাদ না পেরেছে শেখ হাসিনা না পেরেছে মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিনরা। কিন্তু আপনি দেশের পরিস্থিতি এবং আপনার অন্যায় অবিচারের কথা ঠিকই জানতেন যে জনগণের স্রোত ধেঁয়ে আসবে। জনগণের ক্ষোভের যে প্রবাহ সেই প্রবাহে আমি এর আগেই বলেছিলাম আপনার রাজ সিংহাসন উল্টে যাবে ঠিকই উল্টে গেছে। পালিয়ে গেছেন তার বন্ধুপ্রতিম দেশে। আত্মীয়-স্বজনসহ এটাতো কাপুরুষের কাজ আওয়ামী নেতাকর্মীরা এটা কি দেখেন না নিজের আত্মীয়-স্বজন নিজের ছেলেমেয়েকে পার করে নিয়ে গেলেন অথচ নেতাকর্মীদের ফেলে চলে গেলেন।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলন যখন বিজয়ের মুহূর্তে ঠিক সেই সময় রিকশাচালক কামালসহ আটজন পৃথিবী থেকে চলে গেছে এরা গণতন্ত্রের বিজয়পুত্র। এরা গণতন্ত্রের এক অনন্য অসাধারণ সারথি এদের চালিত রথেই গণতন্ত্রের পতাকা উড়েছে।

এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ডা. জাহিদুল কবির, ডিইউজের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষারসহ রিকশাচালক কামালের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।