লবিস্ট দিয়েও দুঃশাসন আড়াল করতে পারেনি আ.লীগ : রিজভী
তিনি বলেন, ‘‘ গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রকাশিত মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেয়া হয়েছে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশে ‘আওয়ামী সরকারের অপকর্ম’ প্রকাশ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্ট-২০২১ এর ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘ গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রকাশিত মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেয়া হয়েছে। আইন-আদালত সরকারের কবজায়। দেশের নিরাপত্তা বাহিনী গুম, খুন ও বিচারবর্হিভূত হত্যা হত্যায় জড়িত। বিরোধী দল নিধনে তারা নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। বাক স্বাধীনতা সংকোচিত করে ফেলা হয়েছে।” ‘‘ আমরা বলতে চাই, এই রিপোর্টে বাংলাদেশে আওয়ামী সরকারের অপকর্ম প্রকাশ পেয়েছে। গুম, খুন, অপহরণ করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গণতন্ত্রকামী জনগনের পেছনের লেলিয়ে দিয়ে কিংবা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার হরণ করে দেশের জনগনের কাছে তাদের অপকর্ম আড়াল করতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশিত বাংলাদেশের মানবাধিকার রিপোর্টে দেখা যায়, কোনো অপকর্মই সরকার আড়াল করতে পারেনি, হাজার হাজার ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেও তাদের (সরকার) মরণঘাতি দুঃশাসনের বিভিষিকা আড়াল করা যায়নি।
রিজভী বলেন, ‘‘ বাস্তবতা হচ্ছে যে, দেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কবর রচনা করতেই নিশিরাতের সরকার দেশের আইন-আদালতকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে মাদার অফ ডেমোক্রেসি চার বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যাহত রেখেছে।এমনকি জনাব তারেক রহমানেরা সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমান যিনি রাজনীতির সাথে বিন্দুমাত্র জড়িত নন, তার বিরুদ্ধেও অসত্য ও কাল্পনিক মামলা দায়ের করে সেটি এখনো চালু রাখা হয়েছে। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে চলছে ধারাবাহিক মিথ্যাচার-অপপ্রচার ও কুতসা রটনা।” ‘‘ বেগম খালেদা জিয়া সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত এবং তাকে উন্নত চিকিসা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার সম্পর্কে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিভ্রান্ত নয়। অর্থাত এই সরকার যে দুর্বিনীত দুঃশাসন চালাচ্ছে, যে অনাচার চালাচ্ছে সেটিকে যতই ঢেকে রাখার চেষ্টা করুক আজকে সেগুলো উন্মেচিত হচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে। সেগুলোর কোনটাই লুকিয়ে রাখতে পারছেন না সরকার।” নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
‘মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে’ রিজভী বলেন, ‘‘ টলটলায়মান গদি যেকোনো সময়ে তাসের ঘরের মতো পড়ে যেতে পড়ে পারার সম্ভাবনায় আওয়ামী সরকার এখন বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।গতকালও প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে বলেছেন, মেগা প্রকল্প নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।” ‘‘ কিন্তু বাস্তবতা হলো বিভ্রান্তি নয়, অভিনব নজিরবিহীন দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত মেগা প্রকল্প নিয়ে সত্য কথাই আজ দেশে বিদেশে মানুষরা বলাবলি করছে। এই মেগা প্রকল্পের নামে লাখ লাখ কোটি ডলার যে লুটপাট হচ্ছে তা দক্ষিন এশিয়ার দেশ শ্রীলংকার মতোই ধাপে ধাপে দেউলিয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।” নরসিংদীর পলাশের ঘোড়াশালে পৌর বিএনপির আয়োজিত ইফতার পার্টির স্থান ক্ষমতাসীন দলের দখল করে নেয়া, স্থানীয় নেতা ফরহাদ হোসেনকে গ্রেফাতার এবং আওয়ামী সশ্বস্ত্র সন্ত্রাসীরা ঘোড়াশালের রাস্তা অবরোধে করে রাখার ঘটনার নিন্দা জানান রিজভী।
‘‘ এই সন্ত্রাসী আক্রমনের মুখেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল ম্ঈন খানের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা রাস্তার পাশে কো-অপারেটিভ স্কুল প্রাঙ্গনে ঘাসের ওপরে বসেই স্থানীয় মানুষজনকে নিয়ে ইফতার করেছেনন। এই সন্ত্রাসী পরিস্থিতি দেখে এলাকাবাসীরা বলাবলি করছিলো যে, সরকার কি এখন দেশের মানুষকেও ইফতার করতে দেবে না।” একই সঙ্গে ছাত্র দলেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মনির মাতব্বরকে গ্রেফাতারে নিন্দা জানিয়ে তার মুক্তির দাবিও জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহিন, মুনির হোসেন, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহিদুল কবির প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।