মিরপুরে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং আশিক বাহিনী
এ বাহিনীর প্রধান আশিক স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিজেকে কথিত এক যুবলীগ নেতার ছেলে বলে পরিচয় দেয়।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : মিরপুরের পল্লবীর বাউনিয়াবাদ এলাকায় স্থানীয়দের কাছে আতঙ্কের নাম আশিক বাহিনী। এ বাহিনীর প্রধান আশিক স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিজেকে কথিত এক যুবলীগ নেতার ছেলে বলে পরিচয় দেয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী, তরুণ, চাকরিজীবী, বাড়িওয়ালাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে না পেলে প্রকাশ্যেই চালায় তাণ্ডব। চক্রের একাধিক সদস্যকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করলেও আশিকের নেতৃত্বে বেপরোয়া এই কিশোর গ্যাং। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিরপুরের বাউনিয়াবাদ এলাকার শাহীন নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে চক্রের সদস্যরা। এ সময় চাঁদার টাকা না পেয়ে প্রকাশ্যে তাকে চাপাতি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে কিশোর গ্যাং আশিক বাহিনীর সদস্যরা। প্রাণ বাঁচাতে একটি বাজারের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে পালানোর সময় মাটিতে পড়ে যায়।
গ্যাংয়ের প্রায় ১০ থেকে ১২ জন সদস্য মিলে ধারালো ছুরি দিয়ে তার পিঠে এবং ঘারে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। আহত ব্যবসায়ী শাহীন জানায়, ১০ থেকে ১২ জনের এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় পরে ঘাড়ে এবং কপালে আঘাত করে। এ সময় জীবন বাঁচাতে দৌড় দিলে তারা এলোমেলোভাবে কোপাতে থাকে। এর আগের কিশোর গ্যাংয়ের এই সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে চাঁদার টাকা দিয়েছেন এই ব্যবসায়ী।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। তিনি বলেন, ঘটনার দিন বাউনিয়াবাদের একটি কাঁচাবাজারের মধ্যে দিয়ে ওদের ভয়ে দৌড় দিলে উল্টে পড়ে যাই। এ সময় মাটিতে পড়া অবস্থায় গ্যাংয়ের দলনেতা আশিক একহাত দিয়ে আমার ঘাড় চেপে ধরে এবং অপর হাত দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। পরবর্তীতে পল্লবী থানায় মামলা করেন তিনি। এই ঘটনার পরপরই আত্মগোপনে চলে যায় কিশোর গ্যাংয়ের দলনেতা আশিক। দলের এক সদস্য লিমনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আশিককে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চলমান রয়েছে। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অনিক নামে স্থানীয় এক যুবককে ক্ষমতা প্রদর্শন করতে সুইচ গিয়ার, চাপাতি, রাম দা দিয়ে মুখে, গালে, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে বাধা প্রদান করে নিরীহ অনিককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বলে প্রচার করে। পুলিশ জানায়, গ্যাং লিডার আশিক স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হলেও পড়ালেখায় অনিয়মিত।
তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টিকটকে সরব দেখা যায়। সেখানেও গ্যাংয়ের সদস্যরা নানাভাবে ক্ষমতা প্রদর্শন করে স্থানীয়দের মনে ভীতি তৈরি করেন। কিশোর গ্যাংয়ের নেতা আশিকসহ অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মিরপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডিএমপি’র মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার মো. নাজমুল হাসান বলেন, কিশোর গ্যাং আশিক বাহিনীর বিরুদ্ধেও এর আগে বিভিন্ন অপরাধে ৩টি মামলা হয়েছে। সম্প্রতি ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আশিক বাহিনীর এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদেরকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি বলেন, এই চক্রের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: