ফরিদপুরের সালথায় সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১২ জন আহত
স্থানীয় এলাকার আধিপত্য বিস্তার এবং ওই ইউনিয়নের নিহত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মলয় বোস হত্যাকে কেন্দ্র করে তাদের এ বিরোধ
প্রথম নিউজ ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ রাজিব মোল্লা (২০) ও ইস্রাফিল শেখ (২৫) নামে দুজনকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এসময় ১৭টি বসতঘর ভাংচুর করা হয়েছে। সোমবার রাতে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নে সংঘর্ষ হয়। পাঁচ গ্রামের হাজার দেড়েক মানুষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জানা গেছে, সালথার আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খান সোহাগের সমর্থকদের সাথে ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: বকুল মাতুব্বরের সমর্থকদের বিরোধ চলে আসছিল। স্থানীয় এলাকার আধিপত্য বিস্তার এবং ওই ইউনিয়নের নিহত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মলয় বোস হত্যাকে কেন্দ্র করে তাদের এ বিরোধ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় ইফতার শেষে আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খান সোহাগের অনুসারী খোয়াড় গ্রামের জালাল শেখ ও রবিউল শেখের সাথে বকুল মাতুব্বরের অনুসারী আমিনুল মাতুব্বরের সমর্থক খবির শেখের কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে জানাজানি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয় গ্রুপের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র হাতে জড়ো হয়ে একে অপরের উপর হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে প্রতিবেশী সেনাটি, গবিন্দপুর, সিংহপ্রতাপ, গোয়ালপাড়া ও বাইলা গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অংশ নেয়। এসব গ্রামের লোকজন খোয়াড় গ্রামের সাথে জোট বেধে গ্রাম্য দল করেন বলে জানা যায়। এতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নেয়। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বাড়িঘর ভাঙচুর। পরে পুলিশ এসে শর্টগানের গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় রাজিব মোল্লা, ইস্রাফিল শেখ, বজলু মাতুব্বর, ফিরোজ মাতুব্বর, আহম্মদ মাতুব্বর ও জালাল শেখসহ উভয় গ্রুপের অনন্ত ১০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজিব মোল্লা, ইস্রাফিল শেখ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। রাজিব সিংহপ্রতাপ গ্রামের চুন্ন মোল্লার ছেলে ও ইস্রাফিল একই গ্রামের কাসেম শেখের ছেলে। বকুল মাতুব্বরের সমর্থক আমিনুল মাতুব্বর বলেন, সামান্য ঘটনা নিয়ে সামাদ মাতুব্বর তার দল নেতা ইউপি চেয়ারম্যান সোহাগকে বলে গোয়ালপাড়া, সেনাটী, গবিন্দপুর ও সিংহপ্রতাব থেকে শতশত লোক এনে আমার লোকজনের উপর হামলা চালায়। আমার দলের নিজাম শেখের তিনটি ও সত্তার মাতুব্বরের দুটি বসতঘর ভাঙচুর করে। পরে আমার লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ শুরু হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের সমর্থক সামাদ মাতুব্বর বলেন, গ্রাম্য দলপক্ষ নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে আমিনুল মাতুব্বর বালিয়া গ্রাম থেকে অনেক লোকজন এনে আমার লোকজনের উপর হামলা করে। এর ফলে মোহাম্মাদ ফকিরের দুটি, কুদ্দুস মাতুব্বরের তিনটি, মানিক মাতুব্বরের তিনটি, জালাল শেখে দুটি ও শুকুর মশালচীর দুটি বসতঘর ভাঙচুর করে তারা। সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো: সুমিনুর রহমান বলেন, গত এক বছরের মধ্যে এত বড় সংঘর্ষ সালথায় হয়নি। সংঘর্ষে কয়েক গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্র হাতে অংশ নেয়। থানা ও জেলা পুলিশ সংঘর্ষের মাঝে অবস্থান নিয়ে প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। পরে শর্টগানের ১৫টি গুলি ও দুটি সাউন্ড গ্রেনেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত। তবে ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দুই তরুণের গুলিবিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, এই রকম কথা আমি শুনিছে। ওই দুইজনের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews