প্রথম নিউজ, ঢাকা: প্রচলিত আইন অনুসারে, ভরণ-পোষণ হচ্ছে স্বামীর দায়িত্ব এবং স্ত্রীর অধিকার। বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য থাকা-খাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ, চিকিৎসা ও জীবন ধারণের জন্য অন্যান্য যে উপকরণ লাগে, স্ত্রী তা স্বামীর কাছ থেকে পাওয়ার অধিকার রাখেন। স্ত্রীর যদি নাবালক সন্তান থাকে তার ভরণ-পোষণের দায়দায়িত্ব তার স্বামীর ওপরই থাকে। কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হলে কিংবা স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে আলাদা হয়ে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করলে নাবালক সন্তানের ভরণ-পোষণ দিতে হয় বাবাকেই।
স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ বা স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক হওয়ার পর অধিকাংশ সময় এ ভরণ-পোষণ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। স্বামী স্বেচ্ছায় স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ দিতে চান না। দিতে চান না নাবালক সন্তানের ভরণ-পোষণও। উপায় না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন অসহায় স্ত্রী। করেন মামলা। কিন্তু ভরণ-পোষণের জন্য মামলা করে উল্টো ভোগান্তিতে পড়েন তারা। আইনের গ্যাঁড়াকলে দিনের পর দিন আদালতপাড়ায় ঘুরতে হয় তাদের।
স্বামীর কাছ থেকে ভরণ-পোষণ পাওয়া স্ত্রীর অধিকার। এ প্রাপ্য অধিকারের জন্য অনেক সময় নারীকে হয়রানির শিকার হতে হয়। স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদ বা পৃথকের সময় যদি একজন জজ ভরণ-পোষণের বিষয়টি নির্ধারণ করে দিতেন, তাহলে এমন হয়রানির শিকার হতে হতো না নারীকে।
ঢাকায় কলহের মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রম তিনটি পারিবারিক আদালতে পরিচালিত হয়।অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ছয় বছরে (২০১৬-২০২১ সাল) পারিবারিক আদালতে ৪৩ হাজার ৪৩৩টি মামলা হয়েছে। মামলার পর দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়ান অসহায় নারী। মামলাগুলোর মধ্যে বিচার করার পর্যাপ্ত উপাদান না থাকায় পাঁচ হাজার ৭৫৭ টি মামলা খারিজ হয়েছে। এক হাজার ৪৩৯টি মামলার ভুক্তভোগী পক্ষে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ভরণ-পোষণ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৬৫ শতাংশ। রায়ের পরও বিভিন্ন জটিলতায় ভুক্তভোগীর টাকা দিতে টালবাহানা করেন অনেকে। দিনের পর দিন আইনের গ্যাঁড়াকলে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হয় অসহায় নারীদের। সঙ্গে নাবালক সন্তানকেও। এতে হয়রানির শিকার হতে হয় নারী ও তার নাবালক সন্তানকে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, ২০১৬ সালে পারিবারিক মামলা হয়েছে সাত হাজার ১০৩টি। এর মধ্যে খারিজ হয়েছে এক হাজার ২৪০টি এবং রায় হয়েছে ৩৩৫টি মামলার। পরের বছর ২০১৭ সালে পারিবারিক মামলা হয়েছে সাত হাজার ৩৩০টি। এর মধ্যে খারিজ হয়েছে ৯৮১টি এবং রায় হয়েছে ২৯৪টি মামলার। ২০১৮ সালে পারিবারিক মামলা হয় হয়েছে সাত হাজার ৪৯২টি। এর মধ্যে খারিজ হয়েছে ৭৪১টি এবং রায় হয়েছে ১৯০টি মামলার। ২০১৯ সালে পারিবারিক মামলা হয়েছে নয় হাজার ৩৪৫টি। এর মধ্যে খারিজ হয়েছে এক হাজার ৩৯১টি এবং রায় হয়েছে ২৭৫টি মামলার। ২০২০ সালে পারিবারিক আইনে মামলা হয়েছে আট হাজার ৪৫২টি। এর মধ্যে খারিজ হয়েছে ৬৭৭টি মামলা এবং রায় হয়েছে ১৫৮টির।
স্বামীর কাছ থেকে ভরণ-পোষণ পাওয়া স্ত্রীর অধিকার। বিচ্ছেদের মামলায় নারী বকেয়া ভরণ-পোষণ দাবি করতে পারেন। কিন্তু সঠিক সাক্ষ্যের অভাবে তা থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাকে। বিচ্ছেদের পর শুধু ইদ্দতকালীন ভরণ-পোষণের আদেশ আসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে মিথ্যা মোকদ্দমা দায়েরের ঘটনাও ঘটে। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে পারিবারিক আইনে মামলা হয়েছে তিন হাজার ৭১১টি। এর মধ্যে খারিজ হয়েছে ৭২৭টি এবং রায় হয়েছে ১৪৭টির। দেখা যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক কলহের মামলা বেড়েই চলছে। পারিবারিক আইনটি অনেক পুরোনো হওয়ায় এ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না। আইনের গ্যাঁড়াকলে দিনের পর দিন মামলা ঘুরতে থাকে। এতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।
মারিয়া জাহান আফির সঙ্গে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কাপড় ব্যবসায়ী তোফায়েল হোসেন বাপ্পির দুই লাখ টাকা দেনমোহরে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মারিয়া বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এক লাখ টাকা নগদ ও ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র দেওয়া হয় তোফায়েলকে। বিয়ের পর তাদের সাংসারিক জীবন ভালোই চলছিল। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে তোফায়েল কাপড়ের ব্যবসার জন্য মারিয়ার কাছে তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এরপর থেকেই তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। তোফায়েলকে যৌতুকের টাকা আনতে ইন্ধন দেন তারা মা জেবুন্নেসা ও বোন জামিলা মিতু। যৌতুকের এ দাবিকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়।
দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তোফায়েল, তার মা উম্মে হানি ও বোন সখিনা মারধর করে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন আফিকে। এরপর আফির ঠাঁই হয় তার বাবার বাড়ি। এরই মাঝে ২০১৮ সালের শেষ দিকে আফির বাসায় তোফায়েল উপস্থিত হয়ে যৌতুকের টাকা চান। মারিয়া দিতে না পারায় তাকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন তিনি। এরপর তোফায়েল সেখান থেকে নিজের বাসায় চলে যান। কিছুদিন পর আফি স্বামীর কাছে নিজের ভরণ-পোষণের টাকা চান। কিন্তু তোফায়েল তা দিতে অস্বীকার করেন।
এর প্রতিকার চেয়ে ২০১৮ সালের শেষ দিকে ৫২ হাজার টাকা ভরণ-পোষণ বাবদ চেয়ে মামলা করেন আফি। মামলার প্রায় চার বছরেও কোনো সুরাহা পাননি তিনি। মামলা করে এখন উল্টো হতাশায় ভুগছেন তিনি। প্রতি ধার্য তারিখে আদালতে হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত আফি। প্রতিকারের আশায় লড়ছেন তিনি।
আদালত প্রাঙ্গণে মারিয়া জাহান আফি জাগো নিউজকে বলেন, ‘তোফায়েলের সঙ্গে আমার এখনো ছাড়াছাড়ি হয়নি। আমি বাপের বাড়ি থাকি। কিন্তু তিনি আমার ভরণ-পোষণে কোনো টাকা দেন না। ভরণ-পোষণের টাকার জন্য আমি আদালতে মামলা করেছি। মামলার পর আদালতে আসা-যাওয়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। মামলার কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। আমি এর সহজ সমাধান চাই। তোফায়েল এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, আফি আমার সঙ্গে সবসময় খারাপ আচরণ করে। সেজন্য আমি তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। ভরণ-পোষণের জন্য সে আদালতে মামলা করেছে। মামলার মাধ্যমে এর সমাধান হবে।
জান্নাতুন মাওয়া বসবাস করতেন রাজধানীর বংশালে। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি কাপড়ের ব্যবসায়ী জসিম হাওলাদারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর সাংসারিক জীবন ভালোই চলছিল দুজনের। পরের বছর হঠাৎ জান্নাতুনের কাছে জসিম যৌতুক হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। জান্নাতুনের পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় এ টাকা দিতে পারেনি। এতে সংসারে দেখা দেয় অশান্তি।
এর মধ্যে জান্নাতুনের গর্ভে আসে সন্তান। কিন্তু যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় তাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন জসিম। অসহায় জান্নাতুনের ঠাঁই তার গরিব বাবার কাছে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন জান্নাতুন। কন্যাসন্তানের নাম রাখা হয় আসমা জাহান রিতা। সেই অস্ত্রোপচারে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকার মতো। জান্নাতুনের পরিবার অনেক কষ্টে এই টাকা জোগাড় করে। জসিমের পরিবারের কাছে টাকা চাইলে তারা উল্টো জান্নাতুনের পরিবারকে হুমকি দেয়। কন্যাসন্তানকে দেখা তো দূরে থাক, তার কোনো খোঁজ-খবরও নিতেন না জসিম। জান্নাতুনের পরিবার বারবার অস্ত্রোপচার ও ভরণ-পোষণের টাকার জন্য জসিমের কাছে আকুতি জানায়। কিন্তু এতে তিনি কর্ণপাত করেননি। উল্টো হুমকি দিতে থাকেন।
উপায় না পেয়ে ২০১৮ সালের শেষ দিকে ঢাকার আদালতের দ্বারস্থ হন জান্নাতুন। মামলা করে তিনি অস্ত্রোপচারের খরচ ৩০ হাজার টাকা, কন্যাসন্তান সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত ভরণ-পোষণ বাবদ প্রতি মাসে ১০ হাজার এবং এককালীন আরও ৩০ হাজার টাকা চান জসিমের কাছে। মামলার পর সন্তানকে নিয়ে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন জান্নাতুন। তার আশা, আদালতের মাধ্যমে কন্যার অস্ত্রোপচার ও ভরণ-পোষণের টাকা পাবেন। পাবেন নিজের ভরণ-পোষণের টাকাও।
মামলার বিষয়ে জান্নাতুন বলেন, জসিমের সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার পরের বছরই তিনি যৌতুক চান। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় জসিম আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। এর মধ্যে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আমার কন্যাসন্তান হয়। আমার বাবা গরিব মানুষ। তিনি অস্ত্রোপচারের টাকা অনেক কষ্টে জোগাড় করেছেন, এখন আমার সন্তানের ভরণ-পোষণ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। জসিমের পরিবারের কাছে টাকা চাইলে তারা দিতে পারবে না বলে জানায়। আমি এর প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করেছি। হাজিরা দিতে আমাকে প্রায় সময় আদালতে আসতে হচ্ছে। শিশুসন্তান নিয়ে আদালতে আসা কষ্টকর। আমি এর সহজ প্রতিকার চাই।
মামলার বিবাদী জসিম বলেন, সন্তানের অস্ত্রোপচারের খরচ ও ভরণ-পোষণের জন্য জান্নাতুন পারিবারিক আদালতে আমার নামে মামলা করেছে। মামলার মাধ্যমে আমি এর সমাধান করবো। ন্যায়-অন্যায় আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে। মারিয়া ও জান্নাতুনের মতো অনেক ভুক্তভোগীকে ভরণ-পোষণ চেয়ে মামলা করে দিনের পর দিন আদালত পাড়ায় ঘুরে বেড়াতে হয়। কখনো নিজের জন্য আবার কখনো সন্তানের ভরণ-পোষণের জন্য মামলা করেন অসহায় নারী। আইনের গ্যাঁড়াকলে পড়ে হয়রানির শিকার হতে হয় অনেক নারীকে। তবু প্রাপ্য সেই ভরণ-পোষণের আশা ছাড়েন না ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের আশা একদিন না একদিন আদালতের মাধ্যমে এর প্রতিকার পাবেন।
ভরণ-পোষণ আদায়ে স্ত্রীর আইনগত যে অধিকার রয়েছে: যদি কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটেই যায় তাহলে বিবাহ-বিচ্ছেদের পরও স্ত্রী কিছুদিন ভরণ-পোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। যেদিন থেকে বিবাহ-বিচ্ছেদ কার্যকরী হয় সেদিন থেকে ৯০ দিন।
প্রথমত, ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভরণ-পোষণের জন্য স্ত্রীর মামলা করার অধিকার আছে। এটি একটি দেওয়ানি প্রতিকার। এ অধ্যাদেশে ভরণ-পোষণ, দেনমোহর, বিবাহ-বিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব বিষয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করার কথা বলা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৯ ধারায় বলা আছে, স্বামী ভরণ-পোষণ দিতে ব্যর্থ হলে স্ত্রী স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করতে পারবেন। চেয়ারম্যান সালিশি পরিষদ গঠন করে ভরণ-পোষণের পরিমাণ ঠিক করবেন এবং সার্টিফিকেট ইস্যু করবেন। স্বামী অথবা স্ত্রী নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটটি পুনঃবিবেচনার উদ্দেশ্যে সহকারী জজের কাছে আবেদন করতে পারবেন এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সহকারী জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। স্বামী এরপরও নির্ধারিত ভরণ-পোষণ না দিলে স্ত্রী বকেয়া ভূমি রাজস্বের আকারে তা আদায় করতে পারবেন।
তৃতীয়ত, মুসলিম বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী স্বামী দুই বছর ধরে ভরণ-পোষণ দিতে ব্যর্থ হলে বা অবহেলা করে ভরণ-পোষণ না দিয়ে থাকলে স্ত্রী বিবাহ-বিচ্ছেদের ডিক্রি পাওয়ার অধিকারী হবেন।
সন্তানের ভরণ-পোষণ দেওয়ার দায়িত্ব বাবার: ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ও ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সন্তানদের ভরণ-পোষণ দেওয়ার দায়িত্ব আইনগতভাবে বাবার। সাবালক হওয়া পর্যন্ত ছেলেকে এবং বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত মেয়েকে বাবা ভরণ-পোষণ দেবেন। কোনো অসুস্থ ও অক্ষম সন্তান থাকলে তাদের ভরণ-পোষণও দেবেন বাবা। সাবালকত্ব অর্জন করার পরও যদি সন্তান নিজ ভরণ-পোষণ জোগাতে ব্যর্থ হন, তবে আইনানুসারে ওই সন্তান বাবার কাছে ভরণ-পোষণ দাবি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাবা ভরণ-পোষণ দিতে বাধ্য নন। মা যদি সন্তানের জিম্মাদারও হন, তখনো বাবা ভরণ-পোষণ দেবেন।
ঢাকার আদালতে বেশিরভাগ পারিবারিক আইনের মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী মলয় কুমার সাহা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বামীর কাছ থেকে ভরণ-পোষণ পাওয়া স্ত্রীর অধিকার। এ প্রাপ্য অধিকারের জন্য অনেক সময় নারীকে হয়রানির শিকার হতে হয়। স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদ বা পৃথকের সময় যদি একজন জজ ভরণ-পোষণের বিষয়টি নির্ধারণ করে দিতেন, তাহলে এমন হয়রানির শিকার হতে হতো না নারীকে।’
আইনজীবী মলয় কুমার সাহা আরও বলেন, অনেক বাবা সন্তানের ভরণ-পোষণ দিতে চান না। এজন্য সন্তানের মা আদালতে মামলা করেন। মামলার পর সন্তানকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত হন তিনি। আদালতে এসে ভোগান্তির শিকার হতে হয় সেই নারীকে। একজন বিচারক যদি স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ বা তাদের আলাদা হওয়ার সময় সন্তানের ভরণ-পোষণ কী পরিমাণ দিতে হবে, তা ঠিক করে দেন, তাহলে কোনো নারী ও তার সন্তানকে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয় না।
হয়রানির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ সময় পারিবারিক আদালতের বিচারক থাকেন না। অনেক সময় একজন বিচারক দুটি আদালত পরিচালনা করেন। একজন বিচারক যখন দুটি আদালত পরিচালনা করেন, সেসময় তিনি সাক্ষ্য নিতে পারেন না। অথচ ভুক্তভোগী নারীকে প্রতি ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হতে হয়। সাক্ষ্য না দিয়ে আদালত থেকে চলে যেতে হয়। আবার অনেক সময় বিবাদীপক্ষ সময়ের আবেদন করে মামলা বিলম্বিত করে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম বলেন, ‘স্বামীর কাছ থকে ভরণ-পোষণ পাওয়া স্ত্রীর অধিকার। বিচ্ছেদের মামলায় নারী বকেয়া ভরণ-পোষণ দাবি করতে পারেন। কিন্তু সঠিক সাক্ষ্যের অভাবে তা থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাকে। বিচ্ছেদের পর শুধু ইদ্দতকালীন ভরণ-পোষণের আদেশ আসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে মিথ্যা মোকদ্দমা দায়েরের ঘটনাও ঘটে।’
আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, সন্তানের ভরণ-পোষণ দেওয়ার দায়দায়িত্ব বাবার। অনেক সময় বাবা এ দায়িত্ব পালন করতে চান না। ফলে সন্তানের মা আদালতে মামলা করেন। মামলা করে তাকে আসতে হয় আদালতে। আদালতে এসে তাকে শিকার হতে হয় ভোগান্তির। প্রত্যেক বাবারই দায়িত্ব সন্তানের ভরণ-পোষণ দেওয়া। তাহলে আর সন্তানের মাকে মামলা করতে হয় না। সন্তানকে নিয়ে আদালতপাড়ায় এসে ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় না। আইনজীবী খালেদ হোসেন বলেন, ‘১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনটি অনেক পুরোনো। এ আইনে মামলা কতো দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে তা উল্লেখ নেই। অনেক সময় বিবাদী আদালতে উপস্থিত হন না। এসব কারণে দিনের পর দিন পারিবারিক মামলাগুলো ঝুলে থাকে। ঝুলে থাকার কারণে হয়রানির শিকার হতে হয় নারীকে।’
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
news.google.com
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews
https://youtube.com/prothom