নদী পারাপারে ভাড়া ৫ টাকা, তা দিয়েই চলে মাঝি বসিরের সংসার
মাঝি বসির হাওলাদারের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডে।
প্রথম নিউজ, মাদারীপুর: নাম বসির হাওলাদার, বয়স ২৪ বছর। জীবিকার তাগিদে হাতে তুলে নিয়েছেন নৌকার বৈঠা। সেই ভোর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত তার হাতে থাকে বৈঠা। এভাবেই নৌকা চালিয়ে ৫ জনের সংসার চালাচ্ছেন তিনি। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানান খরচ সামাল দিয়ে এখন আর খেয়া পারাপারের আয় দিয়ে সংসার টানতে পারছেন না বসির মাঝি। ঝুঁকি নিয়ে কোনো রকম চলছে তার সংসার। প্রতিদিন নৌকা চালিয়ে ৩ থেকে ৪শ টাকা হয়। তা দিয়েই অনেক কষ্ট করে চলে সংসার।
মাঝি বসির হাওলাদারের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডে। ঝাউদি ইউনিয়ন ও আলিনগর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী দুই পাড়ের বসবাসকারীরা নৌকায় আসা যাওয়া করে করায় দুই গ্রামের বাসিন্দাদের নদী পারের একমাত্র ভরসা তার নৌকা।
মাঝি বসির হাওলাদার বলেন, তার বয়স যখন সাত বছর তখন থেকেই তিনি নৌকা চালিয়ে তার বাবাকে সাহায্য সহযোগিতা করতেন।আগে তার বাবা এসকেন্দার হাওলাদার দীর্ঘ বছর ধরে নৌকা চালিয়েছিলেন। চোখে কম দেখার জন্য ঠিকঠাক মতো নৌকার চালাতে পারতো না। এজন্য সংসারের চাপ এসে পড়ে আমার মাথায়। আমি হোগলপাতিয়া আড়িয়াল খাঁ নদীতে লোকজন পারাপার করি। যখন নদীতে ঢেউ থাকে তখন আর নৌকা নিয়ে এপার থেকে ওপার অনেক ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয়। ২০১৮ সালে কিস্তি নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা কিনছেন। তা দিয়ে হরহামেশাই চলে পারাপার। আগে এই ঘাটে খেয়া পারাপারের ভাড়া ছিল দুই টাকা। সে বছর ভাড়া বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা হয়। এরপর গত ১৩ বছরে বাজারে সবকিছুর দাম বাড়লেও, খেয়া পারাপারের ভাড়া আর বাড়েনি। মাঝি বসিরের দাবি সরকারের কাছে নদীর দুপারে যাত্রী ছাউনিসহ লোকজন নামানো ওঠানোর ঘাঁটিয়াল করে দিলে সুবিধা হতো।
এলাকাবাসীরা জানান, আমাদের নদীর দুই পাড়ের সবাই এই নৌকার উপর নির্ভরশীল। মাঝে মাঝে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেলে নৌকা চালাতে হয় অনেক কষ্ট করে, তাছাড়া তো ওনার উপায় নেই। উনি চলবেন কি করে, খুবই অসহায়। শুধু বোঝেন,এই ইঞ্জিন নৌকা নিয়েই ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। নৌকা পারাপারের যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, নদীর দুই পারের এক পারেও নেই কোনো যাত্রী ছাউনি। অনেক সময় নৌকা ওপারে থাকলে বৃষ্টি এলে নদীর পারে ভিজতে ভিজতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
হোগলপাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মনির হোসেন বলেন, ১২ বছর ধরে দেখে আসছি বসির হাওলাদার নৌকা চালিয়ে দুপারের মানুষকে আনা-নেওয়া করেন। সত্যিই তার জীবনটা খুব কষ্টের। সবাই সবাই সাহায্য সহযোগিতা করলেও তাদেরকে কেউ সাহায্য করে না। সে যা প্রতিদিন পায় তা দিয়ে সংসার চলতে অনেক কষ্ট হয়। সমাজের উচ্চশালী লোকজনেরা একটু এগিয়ে আসে তাহলে সে টিকে থাকতে পারবে। মাদারীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মো. ইমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাঝেমধ্যে বিকেলবেলা নদীর পাড়ে ঘুরতে আসলে বসিরের নৌকা দিয়ে আমরা ঘুরেফিরে ৫০ টাকা, অনেক সময় ১০০ টাকা দেই। তার জীবনটা একটা সংগ্রামী।
স্থানীয় গ্রামবাসী মো.শাহ আলম বলেন, মাঝি আমাদের সম্পর্কে ভাতিজা হয়। তার বাবা চোখে কম দেখার পর থেকে সেই খালি নৌকা চালিয়ে সংসার চালান। বর্তমানে একটু কিস্তি নিয়ে ইঞ্জিন চালিত বোট কিনে পারাপার করে। সে অনেক ভালো ছেলে। মাঝেমধ্যে তার চলতে খুব কষ্ট হয়। দুই পারে নৌকা ভেরাতে অনেক কষ্ট হয়। দুই পারে যদি একটু জিও ব্যাগ দিয়ে বেঁধে দিত। তাহলে সে নৌকাটা সুন্দরভাবে ভেরাতে পারতো। ঝাউদি ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লোকমান বেপারী বলেন, বসির দীর্ঘ বছর ধরে এই আড়িয়াল খাঁ নদীতে লোকজন পারাপার করে। আমরা তাকে অবশ্যই সাহায্য সহযোগিতা করব।
আলিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদ পারভেজ বলেন, নদীর দু'পাশে যে যাত্রী ছাউনি নিয়ে বিষয়টা আমাদের কেউ অবগত করেনি। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ আবেদন করে তাহলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করব।