দেশত্যাগের সময় গ্রেফতার বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুমারখালী থানা পুলিশের প্রচেষ্টার বন্দরের কর্তব্যরত পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

দেশত্যাগের সময় গ্রেফতার বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান

প্রথম নিউজ, কুষ্টিয়া: প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের থেকে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করে দেশত্যাগের সময় বিমানবন্দর থেকে আনিসুর রহমান আনিস নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুমারখালী থানা পুলিশের প্রচেষ্টার বন্দরের কর্তব্যরত পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

আটক আনিসের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি গা ঢাকা দেন। বিগত পাঁচ মাস পালিয়ে থাকার পর তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে কুমারখালী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগরে অবস্থিত বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের আওতায় বিশ্বাস সঞ্চয় ঋণদান ও সমবায় সমিতি লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত ছিলেন তিনি।

কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একসময় কর্মরত অফিস সহায়ক মৃত ইব্রাহিম বিশ্বাসের ছেলে আনিসুর রহমান বিশ্বাস (আনিস) ২০০৬ সালে বিশ্বাস সঞ্চয় ঋণদান ও সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি এনজিও চালু করেন। এরপর বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা দেওয়ার আশ্বাসে সমিতির সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন। এনজিওর সদস্যরা লাখে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা মাসিক লভ্যাংশের আশায় লাখ লাখ টাকা লগ্নি করতে থাকেন বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে।

এভাবেই দেশের ৯টি জেলায় বিভিন্ন নামে ৫৮টি এনজিওর শাখা তৈরি করা হয়। ৫৮টি শাখায় প্রায় ১৫৩ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় এবং কর্মচারীদের নিকট থেকে একাধিক ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্প নেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার কথা বলে। এসব কর্মীদের দিয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে লগ্নি করানো হয়।

২০২৩ সালের শুরুতেই ধস নামে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে। সদস্যরা প্রতারণার বিষয়টি অনুমান করতে পেরে তাদের লগ্নিকৃত টাকা ফেরত চাইলে শুরু হয় নানা টালবাহানা। একাধিকবার সময় দিয়েও টাকা ফেরত না দিলে সদস্যদের চাপে আলাউদ্দিন নগরের বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের মূল অফিসে তালা ঝুলিয়ে তারা লাপাত্তা হয়ে যান।

এরপর থেকেই দেশত্যাগের চেষ্টা করতে থাকেন আনিস। সেসময় স্থানীয়রা পার্সপোর্ট কেড়ে নিলে পরবর্তীতে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। এছাড়াও আগের পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে বলে সাধারণ ডায়রি করে নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করে আনিস বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের গ্রাহক লিয়াকত আলী বিশ্বাস বলেন, আমার এবং আমার পরিবারের প্রায় এক কোটি টাকা নিয়েছে এই আনিস। আমি দ্রুত এর বিচার চাই।

বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের গ্রাহক সরোয়ার আলম বলেন, নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমার এবং আমার পরিবার থেকে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করাই আনিস ও তার ভাই আবু সাইদ। আমরা সবাই আমাদের কষ্টের জমানো টাকা ফেরত চাই।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিমানবন্দর থেকে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান আনিসকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। অভিযুক্ত আনিসের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।