দুই নেত্রীর ‘মারামারি’তে মহিলা লীগের মিছিল স্থগিত

জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ভবনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলীর সামনে এ ঘটনা ঘটে।

দুই নেত্রীর ‘মারামারি’তে মহিলা লীগের মিছিল স্থগিত

প্রথম নিউজ, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী তরফদারকে থাপ্পড় ও লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে আরেক নেত্রী খাদিজা সুলতানা কেয়ার বিরুদ্ধে। রোববার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ভবনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলীর সামনে এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এবং জেলা পরিষদ সদস্য মিনহাজুল ইসলাম আইয়ুবের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আহত আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাল্গুনী তরফদার বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে তাকে লাথি বা থাপ্পড় মারার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহিলা লীগের অভিযুক্ত নেত্রী খাদিজা সুলতানা কেয়া। উভয়ের মধ্যে শুধু বাগবিতণ্ডা হয়েছে বলে দাবি তার।

প্রত্যক্ষদর্শী মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী জেসমিন আরা লাকি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রংপুর সফরকে স্বাগত জানানো এবং দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদ জানাতে সোমবার মহিলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি মিছিল করার কথা ছিল। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করতে আমি, ফাল্গুনী আপা, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক তহমিনাসহ কয়েকজন জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে গিয়েছিলাম। পরে সেখানে কেয়া যান। মিছিল আয়োজন নিয়ে তিনি ফাল্গুনী আপার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। এ সময় হঠাৎ তিনি উত্তেজিত হয়ে ফাল্গুনী আপার কোমর ও পেটে লাথি মারেন। জাফর ভাই এগিয়ে গিয়ে কেয়াকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও তাকে উপেক্ষা করে ফাল্গুনীকে মারধর করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, কেয়ার হামলায় ফাল্গুনী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে সাবেক সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলামকে দেখানো হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর রাতে সোমবারের মিছিল কর্মসূচি স্থগিত করে মহিলা আওয়ামী লীগ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাল্গুনী তরফদার বলেন, কেয়া মিছিল আয়োজন নিয়ে জাফর ভাইয়ের কাছে টাকা চায়। ভাই তাকে আমার কথা বলে একসঙ্গে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেন। কিন্তু সে অপারগতা প্রকাশ করে আমাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে। আমি এর প্রতিবাদ করলে সে আমার গলা ধরে কোমর ও পেটে লাথি দেয়।

তবে অভিযুক্ত খাদিজা সুলতানা কেয়া বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুধু একটু তর্কাতর্কি হয়েছে। আমি তাকে লাথি মারিনি। তার গায়ে হাতও দেইনি। বরং সে জাফর চাচার সামনে আমাদের সাবেক সভাপতি নাজনিন আপার নাম ধরে তাকে ও আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমাকে লাথি দেখায়। আমি প্রতিবাদ করেছি মাত্র। তাকে আঘাত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওখানে উপস্থিত সবাই তার পক্ষের ছিল বলে আমার বিরুদ্ধে এখন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাফর আলীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এ ঘটনায় তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নেত্রী ফাল্গুনী তরফদার। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ হোসেন সোমবার সকালে বলেন, এখনো এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দীর্ঘদিন ধরে কুড়িগ্রাম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি নেই। ফাল্গুনী তরফদার সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আর খাদিজা সুলতানা কেয়া সেই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি একইসঙ্গে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।