চলছে অভিযান, মাছ ধরা বন্ধ: এখনও চাল না পেয়ে হতাশ অনেক জেলে
প্রথম নিউজ, বরিশাল: ইলিশ সম্পদ রক্ষায় ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আর এ সময়ে যেহেতু দরিদ্র নিবন্ধিত জেলেরা ইলিশ শিকার করবেন না, তাই তাদের সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়ে থাকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে বিনামূল্যে চাল।
যদিও মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী, বেশিরভাগ জায়গায় চাল বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। আর কিছু জায়গায় শেষের দিকে। তবে নিষেধাজ্ঞার ৮ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও চাল না পেয়ে হতাশ হয়েছেন অনেকে জেলে।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের নিবন্ধিত জেলে সেলিম মাঝি বলেন, এমনেই বাজারে সবকিছুর দাম খালি বাড়তাছে। নিষেধাজ্ঞার আগের সময় যা মাছ ধরছি, তা বিক্রি কইর্যা সংসার চালাতে হিমশিম খাইতে হইছে। আর এখন তো মাছ ধরাই বন্ধ, তাই ইনকামও নাই। হাতে টাকা না থাহনে সবকিছু বাকিতে আনতে হইতাছে। সরকারি চাউলডা পাইলে অন্তত খাতায় টাকার চাপটা কমতো। কিন্তু এহন পর্যন্ত বরাদ্দের চাল পাইনি। তাই খুব খারাপ দিন কাটাইতে আছি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ইব্রাহিম বিশ্বাস জানান, হাতে না পাওয়ায় তার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও জেলেদের চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান মিলন জানিয়েছেন, তিনি চাল বরাদ্দ পেলেও তা চাহিদার থেকে কম। তাই সবাইকে এখনও দিতে পারেননি। যদিও বিভাগের সব জায়গার দৃশ্য এমন না। বরিশাল সদর উপজেলার বাসিন্দা ও নিবন্ধিত বা কার্ডধারী জেলে মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, তিনিসহ আশপাশের সব জেলেরাই সরকারি বরাদ্দের চাল পেয়েছেন। তাই তারা কেউই নদীতে যাচ্ছেন না, ডাল-ভাত খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
বরিশাল সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন জানান, তার আওতাধীন এলাকার বেশিরভাগ জায়গায় বরাদ্দের চাল দেওয়া হয়ে গেছে। জেলেরাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন। অবসরকালীন এ সময়টা তারা জাল ও নৌকা মেরামত করতে ব্যয় করছেন। আর জেলেদের বরাদ্দের চাল প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যারা পাননি তারা দুই-একদিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।
এদিকে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের ছয় জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা তিন লাখ ২২ হাজার ৮৪১। তাদের জন্য এবার মোট বরাদ্দ চালের পরিমাণ সাত হাজার ৬৯৬ টন। এ পর্যন্ত তাদের হিসাবে চাল পেয়েছেন ৫০ শতাংশের বেশি জেলে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, চাল বিতরণের বিষয়টি আমাদের না, এটি স্থানীয় সরকার বিভাগ ও খাদ্য বিভাগের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। আমরা শুধু চাহিদা আর তালিকা দিয়ে থাকি। তবে বিভাগে এ পর্যন্ত ৫০ শতাংশের অধিক জেলে চাল পাওয়ার খবর আছে আমাদের কাছে। তিনি আরও বলেন, বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় চাল না পাওয়ার যে তথ্য আপনারা বলছেন, সেখানে নানান কারণে বিলম্ব হতে পারে। তবে সব জেলেরা চাল পাবে।
অভিযান শুরুর আগে এ চাল দেওয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের থেকে সবকছিুই অনেকটা পরিপাটিভাবে করা হচ্ছে। আগে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও অনেকে চাল পেতেন না। কিন্তু এখন আর এমনটা হয় না। তবে জেলেরা যেহেতু নিষেধাজ্ঞার সময়টা বসা থাকেন, তাই এ সময়টাতে চাল বিতরণ করলে সঠিকভাবে যার যার হাতে পৌঁছে যায়। নয়তো তারাও নানা অভিযোগ করেন।
এদিকে নিবন্ধিত জেলেদের তালিকা নিয়েও নানান অভিযোগ আছে। সাধারণ জেলেদের অনেকেই বলছেন, তাদের এলাকায় অন্য পেশার সঙ্গে জড়িত এমন ব্যক্তি কার্ড পেলেও প্রকৃত জেলেরা পাচ্ছেন না। আবার কেউ পেশা পরিবর্তন করলেও তাদের জেলে কার্ড বাতিল হচ্ছে না। ফলে প্রকৃত অনেক জেলেই সরকারের দেওয়া সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের দাবি, প্রতিবছর জেলে কার্ড হালনাগাদ করার পাশাপাশি এর সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
যদিও এবারে কিছু কিছু জায়গায় বরাদ্দ কম থাকায় কার্ডধারীদের মাঝেই চাল বিতরণ নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।