খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি হকিতে ২০, ফুটবলে ১২ বছর ধরে একই কমিটি 

খেলোয়াড়দের অভাব-অভিযোগ নিষ্পত্তি করে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই বিভিন্ন সময় অনেক খেলার খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সৃষ্টি

খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি হকিতে ২০, ফুটবলে ১২ বছর ধরে একই কমিটি 

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : খেলোয়াড়দের অভাব-অভিযোগ নিষ্পত্তি করে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই বিভিন্ন সময় অনেক খেলার খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সৃষ্টি। গত পরশু ৯ বছর পর ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের কাউন্সিল ও কমিটি পুনঃগঠিত হয়েছে। দেশের আরও দুই শীর্ষ খেলা ফুটবল ও হকির খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি চলছে যথাক্রমে ১২ ও ২০ বছরের অধিক মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই। খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির কর্মকাণ্ড ও হালনাগাদের ভিত্তিতে তিন শীর্ষ খেলাকে পেছনেই ফেলেছে দাবা। ইনডোর গেমসের এই খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি অত্যন্ত সক্রিয় এবং মেয়াদ শেষে কমিটি গঠন হয় ভোটাভুটির ভিত্তিতে। 

ক্রিকেট এখন অর্থ-বিত্ত যোগ হলেও ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের নির্দিষ্ট কার্যালয় নেই জন্মলগ্ন থেকেই। শফিকুল ইসলাম মানিকের উদ্যোগে ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি ৯৭ সালের দিকে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে অফিস কক্ষ পায়। হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ও হকি স্টেডিয়ামের আরেকপ্রান্তে। অনেক ফেডারেশন প্রশাসনিক কক্ষের অভাবে থাকলেও নিষ্ক্রিয় থাকা ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে মোটামুটি বড় কক্ষই রয়েছে। কক্ষের বিশালতা থাকলেও কর্মকান্ডের বিস্তার নেই। এক সময় পুল প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঝড় তোলা ফুটবল সমিতি এখন নামসর্বস্ব সংগঠন। ফুটবলে কিছু সময় পরপরই নানা সংকটের সৃষ্টি হয় কোনো সময়ই সমিতির কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না। ফিক্সিংয়ে নিষিদ্ধ আরামবাগের ফুটবলারদের বিষয়ে সর্বশেষ সমিতিতে একটি বৈঠক করেছিল এরপর আর দৃশ্যত কিছু নেই।


আমাদের কর্মকাণ্ড সেই ভাবে নেই এটা সত্যি। নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চেয়েছি বেশ কয়েকবারই। আগ্রহী কাউকে পাওয়া যায় না।
ইকবাল হোসেন
সাবেক দুই জাতীয় ফুটবলার ইকবাল হোসেন ও আরিফ খান যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক দশকের বেশি সময়। দুই জনই খেলা ছেড়ে ফেডারেশনের কর্মকর্তাও ছিলেন। মাঝে পাঁচ বছর আরিফ খান জয় ক্রীড়া উপমন্ত্রী ছিলেন তখন আরেক সাবেক অধিনায়ক হাসান আল মামুনকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করা হয়। খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির নিষ্ক্রিয়তা স্বীকার করে সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কর্মকাণ্ড সেই ভাবে নেই এটা সত্যি। নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চেয়েছি বেশ কয়েকবারই। আগ্রহী কাউকে পাওয়া যায় না।’

এরপরও আবার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেন, ‘সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আলোচনা করে একটি কার্যকর কিছু করব।’ এ রকম অনানুষ্ঠানিক সভা গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার হলেও কমিটি পুনঃগঠন হয়নি। সমিতির ওপরে খেলোয়াড় বানানে ভুল সেটিও চোখে পড়ে না সংশ্লিষ্টদের। 

ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতিতে সেভাবে ফুটবলারদের সেভাবে যাতায়াত না থাকলেও হকির সমিতিতে অনেকেই আসা-যাওয়া করেন। বিশেষ করে সংগঠনের সভাপতি রাসেল খান বাপ্পি সপ্তাহে কয়েক দিন সমিতিতে বসেন। হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাসেল খান বাপ্পি ও আরিফুল হক প্রিন্স। দীর্ঘ সময় ধরে থাকায় তারা দুই জনও সঠিকভাবে স্মরণ করতে পারলেন না কোন সালে তারা দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রিন্সের দেওয়া তথ্যমতে, ২০০৩ থেকে তারা আছেন অন্যদিকে সভাপতি বাপ্পি স্মৃতি হাতড়ে মনে করলেন, ‘কাঞ্চন ভাইয়ের কাছ থেকে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সেটা ১৯৯৯-২০০০ সালের দিকে’।  

তিন জনপ্রিয় খেলার তিন খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতিকে কার্যক্রমে পেছনে ফেলেছে ইনডোর গেমস দাবার খেলোয়াড় সমিতি। বছরজুড়ে ছোট-বড় নানা কর্মকান্ড করে তারা। জেলা পর্যায়েও তাদের কমিটির বিস্তার রয়েছে। দাবা ফেডারেশনে ভোটাভুটি না হলেও খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতিতে গত তিনবার নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনে দু’টি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ভিন্ন ভিন্ন ইশতিহার দেয়। 
হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক প্রিন্স তাদের কমিটি অনেক মেয়াদউত্তীর্ণ হলেও গতিশীল বলেই দাবি করেন, ‘কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও আমরা হকি খেলোয়াড়দের পাশে থাকি। অসহায় বা কেউ সমস্যায় পড়লে তাকে সাহায্য করি। বিশেষ করে করোনার সময় আমরা অনেক অনেক কাজ করেছি।’ ক্রিকেটের মতো হকিতেও দায়িত্ব নেওয়ার অনীহার বিষয়, ‘আমি ও বাপ্পি ভাই উভয়ই দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চেয়েছি। আমাদের পরবর্তী ব্যাচে যারা রয়েছে তাদের অনেকেই সরকারি চাকুরি করছে। তাদের পক্ষে দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়। দায়িত্ব গ্রহণকারীকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে দক্ষ এবং আর্থিক সক্ষমতাও থাকতে হয়’-বলেন প্রিন্স। বাপ্পি-প্রিন্স সুদীর্ঘ সময় খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি দলবদলের জন্য লড়াই করেছে। আবার অনেক সময় ফেডারেশনের নির্বাচনে কোনো পক্ষ খেলোয়াড়দের সংগঠনকে ব্যবহারও করতে দেখা গেছে। 

আউটডোর তিন জনপ্রিয় খেলার তিন খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতিকে কার্যক্রমে পেছনে ফেলেছে ইনডোর গেমস দাবার খেলোয়াড় সমিতি। বছরজুড়ে ছোট-বড় নানা কর্মকান্ড করে তারা। জেলা পর্যায়েও তাদের কমিটির বিস্তার রয়েছে। দাবা ফেডারেশনে ভোটাভুটি না হলেও খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতিতে গত তিনবার নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনে দু’টি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ভিন্ন ভিন্ন ইশতিহার দেয়।

খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি আন্তর্জাতিক মাস্টার দাবাড়ু আবু সুফিয়ান শাকিল বলেন, ‘আমাদের দাবায় খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি আশির দশকেই জন্ম। ৯৬ থেকে গতিশীল হয় তবে গত এক দশক যাবৎ উৎসবমুখর পরিবেশের মাধ্যমে নির্বাচন হয়। দুই প্যানেল থেকে দাবাড়ুরা নির্বাচিত হয়ে আসলেও পরবর্তীতে এক হয়ে কাজ করে। দাবা ফেডারেশনেরই কক্ষ সংকট সেখানে দাবা খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির অফিস নেই এরপরও আমাদের সংগঠনের নানা কার্যক্রম ঠিকই রয়েছে’।  

দাবার সমিতি সরকারিভাবে নিবন্ধিতও। আরো দুই ইনডোর গেমস টেবিল টেনিস ও ব্যাডমিন্টনে খেলোয়াড় সমিতি ছিল। সময় ও নেতৃত্বের বিবর্তনে সেগুলো সংগঠন হিসেবে সেভাবে পরিণত হতে পারেনি।