কোরিয়ান এলএস ক্যাবলের বিরুদ্ধে অর্ধশত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

 কোরিয়ান এলএস ক্যাবলের বিরুদ্ধে অর্ধশত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

প্রথম নিউজ, ঢাকা : বাংলাদেশি অনেকগুলো কোম্পানিকে দিয়ে কাজ করিয়ে টাকা দিচ্ছে না দক্ষিণ কোরিয়ান বৈদ্যুতিক ক্যাবল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এলএস ক্যাবল অ্যান্ড সিস্টেম লিমিটেড। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পাওনা টাকা পরিশোধ না করে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। 

দেশীয় কোম্পানিগুলো বলছে, পাওনা টাকা চেয়েও হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে পাওনা টাকা ফিরে পেতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে কোম্পানিগুলো।

বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এলএস ক্যাবল অ্যান্ড সিস্টেম লিমিটেডের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলেন কোম্পানিটির লোকাল এজেন্ট বিএনএফ ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লায়ন প্রকৌশলী মো. মোস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, ‘এলএস ক্যাবল বাংলাদেশ বিভিন্ন সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সরবরাহ ও প্রতিস্থাপনের কাজ করে আসছে। এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করতে তারা বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিএনএফ ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের সঙ্গে তাদের লোকাল এজেন্ট এবং সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে চুক্তি সম্পাদন করে। কাজ শুরুর প্রথম দিকে তারা চুক্তির শর্ত মোতাবেক চলমান বিল উত্তোলন করে বিল পরিশোধ করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে তারা চলমান বিল পরিশোধ না করে তাদের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা করতে থাকে। পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য বিএনএফ ইঞ্জিনিয়ার্সের পক্ষ থেকে একাধিক ইনভয়েস জমা দিলেও তারা কোনো টাকা পরিশোধ করেনি। কোরিয়ান কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত চারটি চুক্তিতে আমাদের প্রায় ৪৮ কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে এলএস ক্যাবল অ্যান্ড সিস্টেম লিমিটেডের কাছে আটকে রয়েছে।

‘প্রায় ৪৮ কোটি টাকা পাওনা আটকে থাকার কারণে আমরা আর্থিক চাপে পড়েছি। আমাদের এই ক্যাবল স্থাপন কাজটি সম্পূর্ণ শ্রমিকনির্ভর কাজ। যথাসময়ে টাকা পরিশোধ না করতে পারায় বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। যার কারণে ব্যাংকসহ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা ঋণে পড়ে যাই। ইতোমধ্যে আমরা এলএস ক্যাবল অ্যান্ড সিস্টেম লিমিটেডকে একাধিকবার তাগাদা দিলে তারা আমাদের স্টাফসহ সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। এমনকি তাদের অফিসে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে।’

‘পাওনা টাকা না দিয়ে উপরন্তু এলএস ক্যাবল মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলছে, তারা সরকারের বিভিন্ন কোম্পানি ডেসকো, ডিপিডিসি, পিজিসিবি ইত্যাদি থেকে কোন বিল পায়নি, তাই তারাও বিএনএফ ইঞ্জিনিয়ার্সকে বিল পরিশোধ করতে পারছে না। তবে যোগাযোগ করলে সেসব সংস্থা থেকে জানা যায়, এলএস ক্যাবলের সমস্ত পাওনা টাকা ইনভয়েসের মাধ্যমে অনেক আগেই পরিশোধ করে দিয়েছেন।’

মূলত এলএস ক্যাবল লিমিটেডের বর্তমান ম্যানেজমেন্ট স্যাম ইউ, হং লী, সৌদীপ, ইমাম ও নাফিসের ব্যক্তিগত আর্থিক সুবিধা লাভ এবং কূটচালের মাধ্যমে বিএনএফ কর্তৃক সম্পাদিত কাজের টাকা পরিশোধ না করে দিনের পর দিন ঘুরানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।

পাওনা টাকা উদ্ধারে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিএনএফ ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের পক্ষ থেকে কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত এবং কোরিয়ান বিজনেস অথরিটি কোটকা প্রধানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এছাড়া এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। যেহেতু আমরা উক্ত ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত সাব-কন্ট্রাক্টর, তাই আমরা ডিপার্টমেন্ট প্রধান বরাবর চিঠির মাধ্যমে এলএস ক্যাবলের পরবর্তী কার্যক্রম পেমেন্ট পিজি ও অন্যান্য বিষয়ে আটকানোসহ সদয় সহযোগিতা কামনা করেছি।’

যেহেতু বিষয়টি এখনো আইনি প্রক্রিয়া পর্যায়ে রয়েছে। যা সুরাহা হতে দীর্ঘসময় লাগতে পারে। তাই তিনি পাওনা টাকা আদায়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আর কোনো দেশীয় কোম্পানি যেন এরকম প্রতারণার শিকার না হয় সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানান।