এক স্পর্শে নিভলো ৩ প্রাণ!

আজ থেকে আমি একা হয়ে গেলাম। এক ধরাতেই আমার সকল জা লাশ হয়ে গেলো। আমি এখন কাকে নিয়ে থাকবো।’

এক স্পর্শে নিভলো ৩ প্রাণ!

প্রথম নিউজ, নারায়ণগঞ্জ: ‘এক সংসারে থাকতে গেলে কত ঝগড়াঝাঁটিই হয়। কিন্তু আমাদের মাঝে কখনো ঝগড়া হয়নি। আমরা সবাই একসঙ্গেই থাকতাম। একে অপরের বিপদ আপদে এগিয়ে আসতাম। আজ থেকে আমি একা হয়ে গেলাম। এক ধরাতেই আমার সকল জা লাশ হয়ে গেলো। আমি এখন কাকে নিয়ে থাকবো।’

এভাবেই আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্র চন্দ্র ঘোষের স্ত্রী যমুনা ঘোষ। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুরে দেওভোগের আখড়া এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন জা প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে একজন প্রথমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এরপর তাকে বাঁচাতে অন্য দুই জা ধরলে তারাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাদের হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় বড় জা যমুনা ঘোষ।

নিহতরা হলেন- রবীন্দ্র চন্দ্র ঘোষের ছোট ভাই রঞ্জিত ঘোষের স্ত্রী বিমলা রানী ঘোষ(৫২), তার ভাই নিখিল ঘোষের স্ত্রী বাসন্তী রানী ঘোষ (৪২) ও আরেক ভাই রুপক ঘোষের স্ত্রী মনি রানী ঘোষ (৩৮)।

যমুনা ঘোষ বলেন, ‘আমার বড় জা ও ভাসুর দেড় বছর আগে একসঙ্গেই মারা গেছেন। এরপর তাদের মধ্যে আমিই সবার বড় ছিলাম। আমরা সবাই একসঙ্গেই হাসিখুশিতে থাকতাম। আজ আমার তিন জায়ের সন্তানরা মা হারা হয়ে গেলো। তাদের আমি কী বুঝ দিবো জানি না।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃষ্টিতে ঘরের মেঝে পরিষ্কারের জন্য বিমলা রানী ঘরের গেট ধরেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। ঘরের অন্য দুই জা অসুস্থ ভেবে তাকে ধরতে গেলে তারাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতদের ভাসুর রবী চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানিরা। এরপর বাবাকে আর খুঁজে পাইনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনেক কষ্ট করে ছোট ভাইদের বাঁচিয়েছিলাম। আমাদের বাড়ি দখল করার চেষ্টা করেছিল। অনেক কষ্ট করে ছোট ভাইদের বড় করে বিয়ে করিয়েছি। আজ একদিনেই তাদের তিন বউ লাশ হয়ে গেলো। তাদের ছেলেমেয়েদের মা বলে ডাকার মতো কেউ রইল না। তিনি আরও বলেন, ‘গেটে তাদের লেগে থাকা অবস্থায় দেখতে পেয়ে আমার স্ত্রী যমুনা রানী ঘোষও বাঁচাতে গিয়েছিল। কিন্তু সে ভাগ্যগুণে বেঁচে যায়। ধরার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ তাকে বাড়ি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়।’

সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। আপাতত ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাদের মৃত্যু হয়।

নারায়ণগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইদুজ্জামান বলেন ‘কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।’

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom