হাসিনাই ‘নির্দেশদাতা’
জুলাইয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
সোমবার চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়; যেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে জেনোসাইড বা গণহত্যার কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। যদিও এত দিন শেখ হাসিনা ও অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে গণহত্যার অভিযোগও উচ্চারণ করে আসছিলেন চিফ প্রসিকিউটর।
এমনকি শেখ হাসিনার এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে গত ৯ মে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টেও ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে গত ৮ মে রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। পরদিন তাঁদের এই অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানায় জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিন তাঁরা মিন্টো রোডের প্রবেশ মুখে মঞ্চ বানিয়ে সেখানে সমাবেশও করেন।
সমাবেশ থেকে হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন। পরে তাঁরা মিন্টো রোড থেকে সরে এসে শাহবাগে অবস্থান নেন। এই আন্দোলন চলার মধ্যে ৯ মে দুপুরে চিফ প্রসিকিউটর তাঁর ফেসবুক আইডিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই ‘গণহত্যার’ তদন্ত রিপোর্ট আগামী সোমবার (গতকাল) চিফ প্রসিকিউটর বরাবর দাখিল করবে বলে আশা করছি।
তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অর্থাৎ ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে।’
সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার (গতকাল) এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর দুপুরে প্রসিকিউশন টিম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়। আগামী ২৪ জুন ট্রাইব্যুনালে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ রয়েছে।
শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘মাস্টারমাইন্ড’
গত বছর ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিলের পর ১৪ অক্টোবর থেকে মামলার তদন্ত শুরু হয়।
তদন্ত সম্পন্ন করতে ছয় মাস ২৮ দিন লেগেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান চিফ প্রসিকিউটর। শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘মাস্টারমাইন্ড’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে দেশব্যাপী সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যাকাণ্ড, গুলি করে আহত করা, লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার মতো যে অমানবিক কর্মকাণ্ড হয়েছে, এসবের প্রধান মাস্টারমাইন্ড, সর্বোচ্চ হুকুমদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।’ প্রতিবেদনের সঙ্গে তদন্তে পাওয়া তথ্য-প্রমাণাদি, আলামতও প্রসিকিউশনে দাখিল করা হয়েছে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন, তথ্য-প্রমাণাদি, আলামত সব কিছু বিশ্লেষণ করার পর যদি মনে হয় যথেষ্ট প্রমাণাদি পাওয়া গেছে, তাহলে সেগুলোর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হবে বিচারের জন্য। ফরমাল চার্জ দাখিলের পর বিচারের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে যাবে।’ দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর।
তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগের কথা জানাতে পারব। বাকিগুলো জানাব না।’
আন্দোলনকারীদের নিশ্চিহ্ন-নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তে উঠে আসা অপরাধের বর্ণনায় চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘প্রথম অভিযোগটি হচ্ছে—তিনি (শেখ হাসিনা) এই মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানি দিয়েছিলেন, প্ররোচনা দিয়েছিলেন। (গত বছর) ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা, রাজাকারের নাতি-পুত—এসব বলেছিলেন। এসব বলার মধ্য দিয়ে তাঁদের (আন্দোলনকারীদের) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি সহযোগী বাহিনী হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করে। কৃত এসব অপরাধ প্রতিহত না করে তিনি উসকানি দিয়েছেন, প্ররোচনা দিয়েছেন, সম্পৃক্ত থেকেছেন এবং ষড়যন্ত্র করেছেন।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বিতীয় অভিযোগটি হচ্ছে সরাসরি নির্দেশের। তদন্তে শেখ হাসিনার কিছু টেলিফোন কনভারসেশন (কথোপকথন) জব্দ করেছে তদন্ত সংস্থা। একাধিক কনভারসেশন রয়েছে। সেসব কনভারসেশনে সুস্পষ্টভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশে হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসিসহ মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয় নিরস্ত্র, নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর। তাঁদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন ও নির্মূল করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের প্রমাণ তদন্ত সংস্থা হাতে পাওয়ায় দ্বিতীয় অভিযোগটি আনা হয়েছে।’
বাকি তিনটি অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাকি তিনটি অভিযোগ সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। শেখ হাসিনার নির্দেশে অপরাধগুলো যেভাবে সংঘটিত হয়েছে, অর্থাৎ কিভাবে মানুষকে মারা হয়েছে, কিভাবে নৃশংসতা চালানো হয়েছে সে ব্যাপারে। এই অভিযোগগুলো বিস্তারিত আজ প্রকাশ করছি না।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় দেড় হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে গুলি করে আহত করা হয়েছে। নারীদের ওপর গোপনে বিশেষভাবে সহিংসতা চালানো হয়েছে। টার্গেট করে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর লাশ এবং জীবিত মানুষকে একত্র করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আহতদের হাসপাতালে নিতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পোস্টমর্টেম করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয়েছে।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের বলেছিলেন, এসব (গণ-অভ্যুত্থানে আহত) ভর্তি রোগীদের যেন চিকিৎসা দেওয়া না হয়। অনেক রোগী যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে যখন হাসপাতাল ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার বা চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ রকম তথ্য-প্রমাণাদি আমাদের তদন্ত সংস্থা পেয়েছে, যা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।’
আন্দোলন চলাকালে সরকারি স্থাপনায় নিজেদের লোক দিয়ে আগুন ধরিয়ে তার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানোর নির্দেশনাও শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। এসংক্রান্ত কথোপকথনের প্রমাণ তদন্ত সংস্থা পেয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
অপরাধ প্রমাণে বহুমাত্রিক ডিজিটাল অ্যাভিডেন্স ব্যবহার করা হবে
মামলায় কতজনকে সাক্ষী করা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে সেই তথ্য না জানালেও কারা সাক্ষ্য দিতে আসবেন তা জানান চিফ প্রসিকিউটর। তাজুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে যেসব চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়েছেন তাঁরা সরাসরি সাক্ষী হিসেবে আসবেন। যাঁরা আন্দোলনে আহত হয়েছেন, সাক্ষী হিসেবে তাঁদের নাম রয়েছে। শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যরাও এখানে (ট্রাইব্যুনালে) সাক্ষী হিসেবে আসবেন।’ আর মামলার প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন কলরেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ, অডিও ক্লিপ, আহত-নিহতদের শরীর থেকে সংগ্রহ করা গুলি, আন্দোলন দমনে ব্যবহৃত হেলিকপ্টার, ফ্লাইট শিডিউল, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নিজস্ব অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য-প্রমাণাদি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও তদন্তে নেমে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রচুর ডিজিটাল অ্যাভিডেন্স (প্রমাণাদি) সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে আমরা অজস্র ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। এগুলো অপরাধের জাজ্বল্যমান প্রমাণ। বিভিন্ন টেলিফোন কনভারসেশন, ওয়্যারলেস কনভারসেশন, বিভিন্ন সার্ভারে সংরক্ষিত ডাটাও (উপাত্ত) আছে। বহুমাত্রিক ডিজিটাল অ্যাভিডেন্স আমরা এই মামলা প্রমাণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করব। তার মধ্যে জাতিসংঘের প্রতিবেদনটিও আছে।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে এই অপরাধ প্রমাণের জন্য যা যা দরকার সেই ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ তদন্ত সংস্থা দাখিল করেছে। আমরা আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এবং বিচারে যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে, সেই বিষয়গুলো সামনে রেখে আমরা ফরমাল চার্জ তৈরি করে তা আদালতে দাখিল করব। এর পরই আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।’
রাজপথের চাপে বিচার করা সম্ভব হবে না
বিচারের দ্রুততা নিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশব্যাপী মানুষের মধ্যে চাহিদা আছে দ্রুত বিচার শুরু করার জন্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের যে বিচার, মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিচার, এটা কোনো সাধারণ বিচার নয়। রাজপথের চাপে বিচার করা সম্ভব হবে না। সেটা করতে গেলে বিচার সঠিকভাবে কখনো করা সম্ভব নয়। এটা একটা পেশাদারির জায়গা। আইনে এবং তদন্তে খুঁটিনাটি অনেক জটিল বিষয় আছে। চাপ দিলে এটা কখনো করা যাবে না। সুতরাং জাতির সন্তানদের আমরা আহবান জানাব, আমাদের ওপর আপনারা দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, আমাদের ওপর আস্থা রাখুন যাতে সঠিক বিচারটা হয়। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে যদি মামলাটা ফেইল করে তাহলে জাতির আকাঙ্ক্ষা কখনো পূরণ হবে না, ন্যায়বিচার করা হবে না। সে কারণে যতটুকু সময় প্রয়োজন ততটুকু সময় এই ট্রাইব্যুনালকে, প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থাকে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বিচারে কোনো রকম অনিয়ম, মানবাধিকার লঙ্ঘন না হোক। বিচারে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি না হোক, বিচার নিয়ে প্রশ্ন না উঠুক। বিচারটি সঠিক ও আইনসম্মত উপায়ে এমনভাবে হোক, যাতে আসামিপক্ষ কিংবা বাদীপক্ষ কেউই বলতে না পারে, বিচারটি সঠিক হয়নি। সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর। এটা আমাদের অঙ্গীকার।’
বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, গণহত্যা নয়
তদন্ত প্রতিবেদনে গণহত্যার অভিযোগ না থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘এখানে (তদন্ত প্রতিবেদনে) গণহত্যার কোনো চার্জ নেই। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার স্বীকৃত যে সংজ্ঞা, সেই সংজ্ঞার মধ্যে বাংলাদেশে যে অপরাধ হয়েছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ। গণহত্যার অপরাধ নয়।’
তাহলে এত দিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাশাপাশি গণহত্যার অভিযোগের কথা বলা হয়েছে কেন? এন প্রশ্নে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি একসঙ্গে অনেক লোক মারা হয়, তখন আমরা বলি গণহত্যা হয়েছে। এটা মাসকিলিং বা ম্যাসাকার (ধ্বংসযজ্ঞ) বলতে পারেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনে যে জেনোসাইড সেটা কিন্তু এটা নয়। অপরাধ হিসেবে জেনোসাইডের সংজ্ঞা আছে। সেটা (গণহত্যা) হওয়ার জন্য যে ধরনের ক্রাইটেরিয়া পূরণ করা দরকার, সেটা নেই। বাংলাদেশে মাস কিলিং হয়েছে। দেড় হাজারের ওপর মানুষকে মারা হয়েছে। এটা একটা ম্যাসাকার। এটা ব্যাপক হারে হত্যা। কিন্তু এটা গণহত্যা নয়।’
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গত বছর ১৭ অক্টোবর দুই মামলার বিষয়ে প্রথম শুনানি হয়। সেদিন প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ এই ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানাভুক্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এর আগে গত ২০ এপ্রিল প্রথম একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় তদন্ত সংস্থা। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় এ মামলা হয়েছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট পুলিশ সদস্যকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, তা প্রসিকিউশনে দাখিল করা তদন্ত সংস্থার দ্বিতীয় তদন্ত প্রতিবেদন।