র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ইস্যু পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুষছেন স্বরাষ্ট্রকে
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয় ওয়াশিংটনস্থ দূতাবাস পূর্ব থেকে অবহিত না হওয়ার বিষয়টি বড় ব্যর্থতা।
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : র্যাবের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে সংসদীয় কমিটি দোষারোপ করছে দূতাবাসকে। অন্যদিকে দূতাবাসের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়ী করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বলছে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয় ওয়াশিংটনস্থ দূতাবাস পূর্ব থেকে অবহিত না হওয়ার বিষয়টি বড় ব্যর্থতা। পাশাপাশি অপপ্রচার মোকাবিলায় বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন মিশন তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ জন্য দায়ী করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কিছু উন্নয়ন সহযোগী দেশের আইন প্রণেতারা বাংলাদেশের কাছে ইনফোর্স ডিজাপিয়ারেন্স, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য না পাওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাসময়ে চিঠির জবাব দেয়া সম্ভব হয়নি। র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কোনো ফোরামে উত্থাপন না করে তারা এটা খুব গোপনীয়ভাবে করেছে বলে মন্তব্য করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে র্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কাটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চারটি ল’ ফার্মের সঙ্গে আলোচনা করছে সরকার। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে
আলোচনা শেষে সংসদীয় কমিটি তাদের সুপারিশে বলেছে-বাংলাদেশের প্রতি আমেরিকার অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষ্যে ভারত, জাপান, সৌদি আরবসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি লবিস্ট, পিআর, আইনজীবী নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণ করতে। এ ছাড়া আমেরিকা ছাড়া অন্য কোনো দেশ/সংস্থা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে কিনা, তা আগামী সভায় অবহিত করার সুপারিশ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রকাশিত ২৬তম বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক: সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও চ্যালেঞ্জসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্র সচিব শাব্বির আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০১২ সাল থেকে নিয়মিত চারটি ফ্রেমওয়ার্ক ও সংলাপের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানাবিধ বিষয়ে আলোচনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করে আসছে। ২০২১ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ছাড়া আমেরিকা কোভিড-১৯ মহামারিতে ৬.৫ মিলিয়ন পিপিই এবং ২৮ মিলিয়ন ডোজ কোডিড টিকা দিয়ে সহযোগিতা করা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সমপ্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রে সহায়তার বিষয়গুলো তিনি কমিটিতে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ হিসেবে র?্যাবের বর্তমান ও সাবেক কয়েজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা, শ্রম আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করে আসছিল। তিনি বলেন, সমপ্রতি র?্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উভয় দেশের সম্পর্কের মধ্যে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অসন্তোষের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে সেখানে আইনজীবী নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানাবিধ যোগাযোগ ও আলোচনা নিবিড় করার মাধ্যমে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নয় বরং মানবাধিকার রক্ষার জন্যই কাজ করছে, এই বার্তাটি দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে কোনো দ্বিপক্ষীয় সফর না হওয়ায় এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে উচ্চ পর্যায়ে সফর আয়োজনের জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী একটি চক্র বিপুল অর্থের বিনিময়ে লবিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভুল ও অসত্য তথ্য দিয়ে দেশের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার লক্ষ্যে দূতাবাসগুলো কাজ করে গেলেও সেভাবে সফলতা আসেনি। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সংসদীয় কমিটির দোষারোপ: নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদীয় কমিটি সরাসরি দোষারোপ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসকে। কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয় ওয়াশিংটনস্থ দূতাবাস পূর্ব থেকে অবহিত না হওয়ার বিষয়টিকে বড় ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন। আমেরিকা ও ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশে অবস্থিত মিশনগুলোকে আরও সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য তিনি পরামর্শ দেন। বাংলাদেশের প্রতি আমেরিকার অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষ্যে ভারত, জাপান, সৌদি আরবসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি লবিস্ট নিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা কমিটির সদস্যদের সরবরাহ করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন। লবিস্ট নিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি। আমেরিকা ছাড়া অন্য কোনো দেশ বা সংস্থা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অন্য কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে কিনা তা আগামী সভায় অবহিত করার কথা বলেন। এদিকে সংসদীয় কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট পার্টির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ মিশনে প্রদত্ত পত্রের জবাব যথাসময়ে কেন দেয়া হয়নি তা জানতে চান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে বিশ্ববাসীর কাছে বিতর্কিত করার জন্য দেশবিরোধী একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে বিভিন্ন দেশে লবিস্ট নিয়োগ করে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। এই অপপ্রচার মোকাবিলায় বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন মিশন তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তাই দেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার বন্ধে সরকারের পাশাপাশি সিভিল সোসাইটি ও জনপ্রতিনিধিদেরকেও কাজে লাগানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বলেন, কমিটির পক্ষ থেকে আশিয়ানভুক্ত দেশগুলো পর্যায়ক্রমে সফর করার কথা থাকলেও কোভিড-১৯ এর কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কমিটির পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাষ্ট্রদূত ও আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংলাপ/ডায়ালগের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান। কমিটির অপর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও তারা এই হাতিয়ারটি ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করে তাদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে। র?্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকেও তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা বলে মনে করেন। তাই সঠিক তথ্য সরবরাহপূর্বক কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দোষারোপ: র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশকিছু উন্নয়ন সহযোগী দেশের আইন প্রণেতারা বাংলাদেশের কাছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য না পাওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাসময়ে চিঠির জবাব দেয়া সম্ভব হয়নি। সমপ্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিডন্যাপ, ইনফোর্স ডিসপিয়ারেন্স, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি বিষয় নিরবচ্ছিন্নভাবে মনিটর করার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে তিনি মনে করেন। বলেন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোই লবিস্ট হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেই দেশের আইনপ্রণেতাদের সম্পর্কটা তেমন ঘনিষ্ঠ না হওয়ার কারণে অর্থের বিনিময়ে নিয়োজিত লবিস্ট ফার্মগুলো বেশি প্রভাব বিস্তার করে। পক্ষান্তরে সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার প্রশ্ন রয়েছে বিধায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদেশে অবস্থিত স্বাধীনতার পক্ষের প্রবাসী বাঙালিদের কাজে লাগানোর পাশাপাশি লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে তিনি কমিটিকে জানান।
একই ইস্যুতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ইতিপূর্বে তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কিছুটা অনীহা থাকলেও বর্তমানে এটা অনেকাংশে কেটে গেছে। আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তার অধীনস্থ দপ্তরগুলোর প্রধানদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে। র্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলার সুযোগ রয়েছে বিধায় সেখানকার চারটি ল’ ফার্মের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যে সব বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে সে ব্যাপারে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে এবং তারা তথ্য দিতে সম্মতিপত্র দিয়েছে বলে তিনি জানান। র?্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হবে বলে তিনি মনে করেন। তবে যথাসময়ে তথ্যগুলো পেলে এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশ/সংস্থাগুলোর কাছে উপস্থাপন করতে পারলে বাংলাদেশকে এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না বলে তিনি মনে করেন। বলেন, দেশের অভ্যন্তরে সরকার বিরোধী ও স্বাধীনতা বিপক্ষের শক্তিগুলো ক্রমাগতভাবে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার মতো দেশের গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসত্য তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। এ ধরনের অপপ্রচার মোকাবিলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশে অবস্থিত মিশনগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তবে সরকারের পক্ষে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি আমেরিকাতে বৈধ হলেও দেশের বাস্তবতায় এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তারপরেও দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি এ ব্যাপারে কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা উইংয়ের মহাপরিচালক ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে বাইডেন সরকার আসার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের সঙ্গে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক আলোচনার সুযোগ হয়নি। তাছাড়া র্যাববের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কোনো ফোরামে উত্থাপন না করে তারা এটা খুব গোপনীয়ভাবে করেছে।
একটি দুটি ভুল হতেই পারে: গতকাল সংসদ সচিবালয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চেষ্টায় বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রসঙ্গে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে র্যাবের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে এ ধরনের প্রেক্ষাপটে একটি দুটি ভুল হতেই পারে। মোটামুটি আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, র্যাব অনেক ভালো কাজ করছে। যদি কোনো ভুল করে থাকে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফ্যাক্ট অ্যান্ড ফিগার দেয়া হয়েছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ডিসেম্বরে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ঢাকা। ১৫ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে টেলিফোনেও আলাপ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে র্যাবের ভূমিকার কথা তুলে ধরে ওয়াশিংটনে চলতি মাসের শুরুতে ব্লিংকেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে কাজে লাগানোর বিষয়ে ফারুক খান বলেন, আমরা আগের বৈঠকে দুই দেশের যাদের কমন বন্ধু তাদের কাজে লাগানোর কথা বলেছিলাম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন ভারতের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কূটনৈতিক অন্যান্য তৎপরতাও চলছে জানিয়ে স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, এ ছাড়া অন্যান্য দেশের ইনফ্লুয়েন্সের জন্য আমরা ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেলে কথা বলছি। এদিকে বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও (ইইউ) চাপ রয়েছে। যে কারণে ইইউ’র জিএসপি সুবিধা কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ফারুক খান বলেন, শ্রমিকদের বিষয়ে যে প্রশ্নগুলো আসতে পারে তা আরও গভীরে গিয়ে দেখতে হবে। কারণ আগামীতে তারা হয়তো লেবার ইস্যু নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও আমরা অব্যাহত আলোচনা চালিয়ে যেতে বলেছি। সেখানে আমাদের জিএসপি সুবিধাগুলো আছে তা কিছুটা কমতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছি।
সূত্র: মানবজমিন
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews