গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সমাবেশ, লংমার্চ, রোডমার্চ করার প্রস্তাব
বিএনপি’র বৈঠকে আলোচনা
প্রথম নিউজ, অনলাইন: দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দুর্নীতিবিরোধী প্রচার এবং চুক্তিসহ জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে ঢাকাসহ ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ এবং জাতীয় সংলাপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপি’র নেতারা। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশের যে অঞ্চলের উপর দিয়ে ট্রেন চলার কথা যেসব স্থানে বিক্ষোভ মিছিল এবং কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি দেয়ারও প্রস্তাব দেন তারা। পাশাপাশি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও কর্মসূচি হাতে নিতে বলা হয়। এসব ইস্যুতে লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ, পদযাত্রা, লংমার্চ, রোডমার্চসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তাব দেয়া হয়। চলতি সপ্তাহ কিংবা আগামী সপ্তাহে এই কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। কর্মসূচি ঠিক করতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করছে বিএনপি। এই বৈঠক শেষে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
গত শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দলটির অঙ্গ-সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রথম দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভার্চ্যুয়ালি লন্ডন থেকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অংশ নেন। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন।
এর বাইরে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের পর দ্বিতীয় দফায় যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দলটির অঙ্গ-সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা নিজেরা সম্ভাব্য কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে কেউ কেউ এক মাসের কর্মসূচি নিয়ে কর্ম-পরিকল্পনা ঠিক করার পরামর্শ দেন। তবে বেশির ভাগ নেতা ৩ মাসের কর্মসূচি রোডম্যাপ করার পরামর্শ দেন। তবে কতোদিনের কর্মসূচি দেয়া হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই এটা চূড়ান্ত হবে।
বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দুর্নীতিবিরোধী প্রচার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি ও সমঝোতা ইস্যু, সীমান্ত হত্যা, গ্যাস এবং পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এসব ইস্যুতে কয়েকজন নেতা সভা-সেমিনার করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বেশির ভাগ নেতাই বিভাগীয় সমাবেশ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ, পদযাত্রা, লংমার্চ এবং রোডমার্চ কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি’র একজন যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারতের সঙ্গে চুক্তি এবং দুর্নীতিবিরোধী প্রচারের বিরুদ্ধে কর্মসূচিতে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এই কর্মসূচি এখনো ঠিক হয়নি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি’র অঙ্গ-সংগঠনের দু’জন শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকে বলা হয়- ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিপক্ষে বিএনপি’র শক্ত অবস্থান নিতে হবে। এজন্য ভারতের সঙ্গে বিএনপি’র অবস্থান জনগণের সামনে পরিষ্কার করা উচিত বলেও কেউ কেউ নিজেদের পরামর্শ উত্থাপন করেন।
ওদিকে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি’র লিয়াজোঁ কমিটি। গত ১১ই জুলাই গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এনডিএম, ১২ই জুলাই এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বাংলাদেশ লেবার পার্টি এবং ১৩ই জুলাই গণ-অধিকার পরিষদের (নুর) সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। রোববার বিকালে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক হয়। এই বৈঠকে বিএনপি’র পক্ষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন। এসব বৈঠকে যুগপৎ দল ও জোটের নেতারা কর্মসূচির বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব ও পরামর্শ দেন। সেগুলো বিএনপি’র নেতারা নোট করেন। গত শনিবার বিএনপি’র বৈঠকে কর্মসূচির বিষয়ে যেসব প্রস্তাব নেতারা দিয়েছেন, যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটের নেতারাও ঠিক একই প্রস্তাব দেন বলে জানা গেছে। এসব প্রস্তাব ও পরামর্শ নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বিকালে গণ-অধিকার পরিষদ (কর্নেল মশিউজ্জামান) ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও দলকে যুগপৎ আন্দোলনে নেয়ার পরামর্শ: রোববার ১২ দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াত এবং ইসলামী দলসহ সরকারবিরোধী আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলগুলোকে যুগপৎ আন্দোলনে নেয়ার জন্য বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন শরিক দলের নেতারা। পাশাপাশি তারা রোডমার্চ, লংমার্চ, সমাবেশ এবং অবরোধসহ বেশকিছু কর্মসূচিরও পরামর্শ দেন। তবে কর্মসূচি এখনো ঠিক হয়নি। যুগপৎ দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষে আবারো তাদের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখনো কোনো কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়নি। এখন মতামত নেয়া হচ্ছে। সব মতামত নেয়ার পরে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। তবে খুব শিগগিরই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, কি করলে দেশের মানুষের সংকট সমাধানে আমরা আমাদের ভূমিকা পালন করতে পারি, সেটা নিয়ে আমরা বৈঠকে আলোচনা ও কথা বলেছি। এরমধ্যে বেশকিছু প্রস্তাব ও পরামর্শ দিয়েছেন নেতৃবৃন্দরা। সেগুলো আমরা নোট করেছি। এসব প্রস্তাব নিয়ে আবারো জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসে এটা চূড়ান্ত করবো। তার ভিত্তিতে পরবর্তী কর্মসূচি আমরা আপনাদের (সাংবাদিক) জানাবো।স্থায়ী কমিটির স
দস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এই অবৈধ সরকার অপসারণের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই চলমান আন্দোলনকে আরও গতি সৃষ্টি করার জন্য- সেই আন্দোলনকে সফল সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আলোচনা করেছি। কর্মসূচি কি হবে তা পরবর্তীতে ঠিক করা হবে।
এলডিপি’র মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম মানবজমিনকে বলেন, আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে ইসলামী দলসহ সরকারবিরোধী আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে যুগপতে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে কর্মসূচি এখনো ঠিক হয়নি।