গণমাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার: মির্জা ফখরুল
প্রথম নিউজ, ঢাকা:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চেতনা ছিল গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক সমাজ। যেখানে মুক্ত বা স্বাধীন গণমাধ্যম থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী জোর করে ক্ষমতা দখলের পর থেকে সেই জায়গায় প্রথম আঘাত করেছে। সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার অনেকগুলো বন্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে বিরোধীমতের মুখপত্র দিনকাল বন্ধ করা হয়েছে। যারা বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারী সংবাদকর্মী তাদেরও অনেককে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে মিডিয়া সেল দেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় মতামত প্রচারের ব্যবস্থা করছে। আমি মনে করি বর্তমানে দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের যে অবস্থা তার প্রেক্ষিতে মিডিয়া সেল অনেকদূর এগিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের ১ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা নির্যাতনের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আহমেদ আযম খান, আবুল খায়ের ভুইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, আমান উল্লাহ আমান, মো. আবদুস সালাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মীর সরফত আলী সপু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মো. মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, মিডিয়া সেলের সদস্য অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, কাদের গণি চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, শাম্মি আখতার, আলী মাহমুদ, শায়রুল কবির খান, অন্যদলের মধ্যে জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) খন্দকার লুৎফর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, এনডিপির কারি আবু তাহের, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদাসহ বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনৈতিক ও কর্মকর্তাবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল বলেন, যারা গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত তারা সত্য কথা লেখা ও বলার জন্য কতোটা নিগৃহীত হচ্ছেন। কিছুদিন আগেই জামালপুরে একজন সংবাদকর্মীকে শাসকগোষ্ঠীর লোকজন পিটিয়ে হত্যা করেছে। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ধরনের খবর মিডিয়ায় খুব প্রচার হচ্ছে না। কিছুদিন আগে বাসায় খুনের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে মামলা আসামিকে গ্রেপ্তার না করে ওই বাসার কেয়ারটেকারকে তুলে নিয়ে যাওয়ার দশদিন নির্যাতনের পর মেরে ফেলা হয়েছে। এটাও কিন্তু গণমাধ্যমে খুব বেশি প্রকাশিত হয়নি। এটা একট বড় প্রমাণ হলো- পুলিশ কাস্টডিতে কিভাবে নির্যাতন করা হয়! এ ধরনের অনেক ঘটনা আছে। কদিন আগে নওগাঁয় এক মহিলা সুলতানাকে র্যাব তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর মৃত্যু হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার কত বছর হয়ে গেল। অথচ তার চার্জশিট দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, এসবের প্রধান সঙ্কট হলো দেশে গণতন্ত্র নেই। গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। একটা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। যা শাসকগোষ্ঠী ১৯৭২-৭৫ সালেও চেষ্টা করেছে। ১০ বছরে ভিন্ন রুপে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেটি কার্যকর হবে না। সেজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন। এটাই আমাদের বক্তব্য।
আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে নির্বাসিত আছেন। ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেখানে ভিন্নমত প্রকাশের কোনো উপায় নেই। এই প্রেক্ষিতে আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেছি। দশ দফা দাবিতে কর্মসূচি চলছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা ঘোষণা করেছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লক্ষ্যে সমমনা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলন করছি। আমরা বিএনপিকে ক্ষমতায় নিতে নয়, দেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছি।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে মিডিয়া সেল গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। আমি বিশ^াস করি জনগণের প্রকৃত খবর দেখা ও শোনার প্রকৃত যে অভাব রয়েছে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে মিডিয়া সেল সেটি পূরণ করবে।