কয়লা সংকটে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ
মাত্র এক মাস আগে এ কেন্দ্রে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়।

প্রথম নিউজ, অনলাইন : কয়লা সংকটে বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। মাত্র এক মাস আগে এ কেন্দ্রে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেও সরবরাহ করা হয়। জানা গেছে, ডলার সংকটে কয়লা আনতে না পারায় এ ঘটনা ঘটেছে। ফলে উৎপাদন শুরুর এক মাস পার হওয়ার আগেই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করতে বাধ্য হলো কর্তৃপক্ষ। এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ উৎপাদন স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। কয়লা না পাওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রটি চালু করার সুযোগ নেই। তবে এ সময়ে রক্ষণাবেক্ষণ কাজে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে। সূত্র জানায়, গেল বছরের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়।
প্রতিদিন ৫৬০ থেকে ৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল কেন্দ্রটি। এর ৪৫০ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ এবং বাকিটা খুলনা এলাকায় সরবরাহ করছিল। ১৭ই ডিসেম্বর থেকে এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। তখন ২০২৩ সালের জুনে এ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। যা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (সিকিউরিটি ও প্রশাসন) ওয়ালি উল্লাহ বলেন, কয়লা শেষ হওয়ায় শনিবার সকাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কয়লা আসলে আবারো উৎপাদন শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ কয়লা আসবে, বা আসতে পারে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
বিআইএফপিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, কয়লা না থাকায় শনিবার সকাল থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কয়লা আমদানিতে ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার না দেয়ায় কয়লা আমদানি করা যাচ্ছিল না। তবে আমরা দ্রুত এ সংকট নিরসনের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, কয়লা সংকটে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি তিনি মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। যেটি শনিবার থেকে বন্ধ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে অফিসিয়াল কোনো চ্যানেলে বিষয়টি তাকে এখনো জানানো হয়নি বলে মন্তব্য করেন ডিজি। ২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০১২ সালের ২৯শে জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লি. এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়।
এই কোম্পানির অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়।
রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় এক হাজার ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ৫ই অক্টোবর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শুরু হয় জমি ভরাট ও সড়ক নির্মাণের কাজ। প্রায় ৯ বছর বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে গত ১৭ই ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: