ইউরো থেকে উয়েফার আয় কত, ব্যয় কত

ইউরো থেকে উয়েফার আয় কত, ব্যয় কত

প্রথম নিউজ, খেলা ডেস্ক : প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর উয়েফার ‘রাজকোষ’ ভরে উঠে। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে তারা বিপুল রাজস্ব আদায় করে। যার বেশিরভাগই আসে মিডিয়া স্বত্ব থেকে। এছাড়া স্পনসরশিপ, টিকেট, আতিথেয়তা ও লাইসেন্সিং বিক্রি করেও তারা এসব রাজস্ব পেয়ে থাকে। প্রাপ্ত অর্থের সিংহভাগই তারা ইউরোপিয়ান ফুটবলের উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ করে। যা উয়েফার হ্যাটট্রিক প্রোগ্রাম নামে পরিচিত।

২০০৪ সালের ইউরোতে এই প্রোগ্রাম চালুর পর থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ‘স্পোর্টস সলিডারিটি ফান্ড’ টুর্নামেন্টের আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ ইউরোপের ফুটবল ফেডারেশনকে খেলার উন্নয়নে বিনিয়োগ করে আসছে। যেভাবে আদায় হচ্ছে রাজস্ব-

মিডিয়া রাইটস

জনপ্রিয়তার বিচারে ইউরো অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা। যেখানে ফুটবলের সেরা খেলোয়াড়দের অনেকেই অংশ নিয়ে থাকেন। খেলার গুণগত মান, উন্নত প্রযুক্তি আর টানটান উত্তেজনার কারণের প্রতিযোগিতাটি বিশাল জনপ্রিয়তা আদায় করে নিয়েছে। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি দর্শক দেখে খেলা। দর্শক চাহিদা বাড়ায় তাই সম্প্রচার মাধ্যমগুলিও প্রচার করে, আর প্রসার বৃদ্ধির কারণে উয়েফা মিডিয়া স্বত্বও আদায় করে নিচ্ছে। মিডিয়া স্বত্ব বিক্রি করে ২০২০ সালে ১.১৩৫ বিলিয়ন ইউরো আদায় করে নিয়েছে। এবারের আসরে সেটা আরও ছাড়িয়ে যাবে বলেও প্রত্যাশা করছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

গ্লোবাল স্পন্সরশিপ

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা থাকায় বৈশ্বিকভাবেও স্পনসরশিপ আদায় করতে পারে উয়েফা। নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববাসির কাছে পরিচিত করতে অথবা দৃষ্টি কাড়ার জন্য নামিদামি এমনকি স্টার্টাপ প্রতিষ্ঠানও এসব প্রতিযোগিতায় পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। যেমন ডিজিটাল অর্থ লেনদেন প্রতিষ্ঠান আলিপে প্লাস, বুকিং ডট কম, কোকা-কোলা, ইউনিলিভারের মতো প্রতিষ্ঠান এবারের আসরে বিনিয়োগ করেছে। যা থেকে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব পাচ্ছে উয়েফা।

টিকেটিং, আতিথেয়তা এবং লাইসেন্সিং

ইউরোর এবারের আসরে টিকেটের চাহিদা ছিল আড়াই মিলিয়নেরও বেশি। দশটি জার্মান স্টেডিয়ামের প্রতিটিরই টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই টিকিটগুলির প্রত্যেকটির ব্যয়, পাশাপাশি আতিথেয়তা বিক্রয়, টুর্নামেন্টের চলমান ব্যয় কাটাতে সহায়তা করে।

অফিসিয়াল টুর্নামেন্ট পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে লাইসেন্সিং ফি বিক্রি করা আয়ের আরেকটি প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। স্টেডিয়ামে বা ঘরে যেখানেই তারা ম্যাচ দেখুক না কেন, সমর্থকরা টুর্নামেন্ট প্রোগ্রাম এবং স্টিকার অ্যালবাম থেকে শুরু করে পোশাক এবং স্মারক পর্যন্ত বিভিন্ন ব্র্যান্ডেড পণ্য কিনে ইউরো স্পিরিটকে আলিঙ্গন করতে পারে।

রাজস্ব কোথায় যায়? ইউরোতে খরচ করার পর উয়েফা তাদের রাজস্ব যতটা সম্ভব ফুটবলের উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ করে থাকে।

ফুটবল উন্নয়নে শক্তি জোগানো

২০০৪ সাল থেকে হ্যাটট্রিক প্রোগ্রামের মাধ্যমে ইউরোপের ৫৫টি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের উন্নয়ন প্রকল্পে ইউরোর মোট রাজস্বের দুই-তৃতীয়াংশ বিনিয়োগ করেছে। এই রাজস্বের সুবিধা একটি দেশের ফুটবলের জাতীয় দল থেকে শুরু করে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পেয়ে থাকে। ফেডারেশনগুলি তাদের তাদের স্থানীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার, অপেশাদার কোচদের প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন ক্যাম্পসহ বিভিন্ন সুযোগসুবিধাতে বিনিয়োগ করা হয়। এছাড়া একটি দেশের ফুটবলের অবকাঠামোর উন্নয়নেও এসব অর্থ ব্যবহার করা হয়।

গত ২০ বছরে ৮০০টিরও বেশি প্রকল্পের মাধ্যমে ৯৩৫ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করা হয়েছে ইউরোপের সব দেশজুড়ে।

প্রাইজমানি এবং ক্লাব সুবিধা

ইউরো থেকে বাণিজ্যিক আয় প্রাইজমানি এবং একটি ক্লাব বেনিফিট প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াাড়দের পুরস্কারের অর্থ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি দলগুলোও অংশগ্রহণ ও পুরস্কারের অর্থ পেয়ে থাকে। এছাড়া খেলোয়াড়দের ঐ সময় উয়েফার টুর্নামেন্টে খেলতে দেওয়া প্রতিটি খেলোয়াড় বাবদ ক্লাবগুলির মধ্যেও প্রদান করা হয় অর্থ।

ইউরো ২০২৪ সালের পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ ৩৩১ মিলিয়ন ইউরো। অংশগ্রহণকারি ২৪টি দলের মাঝে বিতরণ করা হবে ২২২ মিলিয়ন ইউরো। প্রতিটি দল পাবে ৯.২৫ মিলিয়ন ইউরো। গ্রুপ পর্বের ফলাফল এবং নকআউট পর্বের পারফরম্যান্স অনুযায়ী এই বরাদ্দ করা হবে। বিজয়ীরা পারফরম্যান্সের মাধ্যম ২৮.৫ মিলিয়ন ইউরো বোনাস আদায় করতে পারবেন।