২ জনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে, নজরদারিতে অনেকে

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গুদাম থেকে ৫৫ ভরি স্বর্ণ চুরির ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি।

২ জনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে, নজরদারিতে অনেকে

প্রথম নিউজ, অনলাইন: শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গুদাম থেকে ৫৫ ভরি স্বর্ণ চুরির ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার দেখায়নি পুলিশ। তবে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে কারা এর সঙ্গে  জড়িত। এ ছাড়া চুরি করা স্বর্ণ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে নাকি এখনো কারও হেফাজতে আছে এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। 

এদিকে সন্দেহভাজন হিসেবে যে ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিমানবন্দর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে তারা ইতিমধ্যে স্বর্ণ চুরি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন। এদের মধ্যে দু’জনের চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। আরও একাধিক কর্মকর্তাকে এই চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এই ৮ কাস্টমস কর্মকর্তা- কর্মচারীকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত আটক বা গ্রেপ্তার না দেখালেও রহস্য উদ্ঘাটনের আগ পর্যন্ত থানা হেফাজতে পুলিশের নজরদারিতে রাখা হবে। ইতিমধ্যে  গোডাউনের নিরাপত্তার দায়িত্বে কর্মরত এ, বি, সি ও ডি শিফটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুম রানা, সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকরাম শেখকে পুলিশ হেফাজতে পুলিশ এবং কাস্টমস কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন নন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।

এ ছাড়া রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার নামে চার সিপাহিকে ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন সিপাহির সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে। যেখানে জড়িত দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার নামও উঠে এসেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংশ্লিষ্ট সিপাহিসহ দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে বলে জানা গেছে। 

সূত্র জানায়, হেফাজতে থাকা ৮ কাস্টমস কর্মকর্তা এবং সিপাহিকে গ্রেপ্তার বা আটক না দেখানোয় তারা নিজস্ব কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করছেন। এতে করে তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সূত্র জানায়, এটা তদন্তের স্বার্থেই করা হচ্ছে। তাছাড়া এসব কর্মকর্তা ও সিপাহিকে এখন পর্যন্ত কিন্তু গ্রেপ্তার করা হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই চুরি যাওয়া স্বর্ণ উদ্ধার হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সন্দেহের তালিকার বাইরে কোনো কর্মকর্তার থাকার সুযোগ নেই। তিনি যত বড়ই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হোক না কেন? 

এই চুরির সঙ্গে যদি ঊর্ধ্বতন অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা তদন্তে উঠে আসে তাদেরকেও পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তদন্ত সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে বিমানবন্দর থানা পৃথক ৫টি তদন্ত টিম গঠন করেছে। কাস্টমসের পক্ষ থেকেও পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এসব টিম কখনো সমন্বিত কখনো পৃথকভাবে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রেখেছে। 

বিমানবন্দর থানা সূত্র জানায়, কাস্টমসের ৮ সদস্যকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এবং প্রত্যেকের বক্তব্য আলাদাভাবে ক্রসচেক করে দেখা হচ্ছে। তারা সঠিক তথ্য দিচ্ছে নাকি বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সেটাও গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। তাদের মধ্যে দু’জনের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে এটা পূর্ব পরিকল্পিত বলে মনে হয়েছে। হঠাৎ করে এক রাতের মধ্যে চুরি হয়েছে- এমনটা মনে হয়নি। ঘটনার সময় ৮ সদস্যের কে কোন ডিউটি পালন করেছেন সেটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঘটনাস্থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সিসি টিভি ভিডিও ফুটেজ সম্পর্কে তদন্ত সূত্র জানায়, আমরা ঘটনাস্থলের একাধিক সিসি টিভি ভিডিও ফুটেজ ইতিমধ্যে যাচাই-বাছাই করে দেখার চেষ্টা করছি। ভল্টের কাছে সিসি টিভি নষ্ট ছিল এটা এখন পর্যন্ত বলার সুযোগ নেই। ঘটনাস্থলে থাকা সবগুলো ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহে কাজ করছে তদন্ত টিম। ঘটনাস্থলের বিবরণ দিয়ে পুলিশ জানায়, ভেতরে একটি স্টিলের আলমিরার মতো দেখতে ভল্টের লকার ভাঙা পাওয়া যায়। এ সময় লকারের পাশেই একটি প্লাস্টিকের হাতলযুক্ত কুড়াল এবং চাপাতি পাওয়া যায়। 

সরজমিন বিমানবন্দরের টার্মিনালে গেলে সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। সেখানে কর্মরত সিভিল এভিয়েশনে কর্মরত মো. কামাল জানান, এই মুহূর্তে কাস্টমসের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডের কক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই। সেখানে স্বর্ণ চুরির ঘটনার পর থেকেই কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দর থানা পুলিশের নেতৃত্বে ৫টি তদন্ত টিম কাজ করছে। কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মিনহাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিমানবন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আটজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।  বাকি দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার কাছ থেকে চুরি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।  ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন, বিমানবন্দরের ভেতরের সব জায়গা সিসি টিভি ক্যামেরায় নজরদারিসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়। অথচ কাস্টমসের গুদামে সিসি টিভি না থাকাটা বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কাস্টম হাউসের নিজস্ব গুদামে যার-তার প্রবেশের সুযোগ নেই। চোর ঘরের নাকি ভেতরের কেউ সেটাই এখন তদন্তের বিষয়। 

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল হক মিঞা বলেন, এটা যেহেতু বড় একটি চুরির ঘটনা এবং আমার চাকরি জীবনে এতবড় ঘটনার সম্মুখীন কখনো হতে হয়নি। ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা তদন্ত করছি। আমাদের একাধিক টিমসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা এটা চুরি নাকি অন্য কিছু সেই রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে। এ ছাড়া হেফাজতে থাকা কাস্টমস কর্মকর্তা ও সিপাহিদেরকে নিয়মিত জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে রেখেছি। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী অন্য কোনো কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমরা কাউকেই সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছি না বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। 

এদিকে, কাস্টম হাউজের গুদামের ভল্ট থেকে চুরি যাওয়া ৫৫ কেজি সোনা মামলা বিমানবন্দর থানা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।