চাঁদাবাজি-সিন্ডিকেট নেই, বাজারে স্বস্তি

পণ্য নিয়ে যে সিন্ডিকেট ছিল, সেটা নেই। এ ছাড়া পরিবহনে চাঁদাবাজিও নেই। ফলে দাম কমিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। 

চাঁদাবাজি-সিন্ডিকেট নেই, বাজারে স্বস্তি

 প্রথম নিউজ, অনলাইন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ভিন্ন এক চিত্র দেখা যাচ্ছে দেশের কাঁচা বাজারে। ইতিমধ্যেই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে পণ্য সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। মাছ-মাংস ও সব ধরনের সবজির দাম আগের চেয়ে কমেছে। তবে পিয়াজ ও চালের দাম আগের অবস্থানে আছে। আর যেসব পণ্যের দাম কমেনি সেগুলো কমতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে বলে মনে করেন বিক্রেতারা। ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত শুক্রবার থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ার প্রভাবে যেসব সবজির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল, তা আবারো কমতে শুরু করেছে। তাদের মতে, পণ্য নিয়ে যে সিন্ডিকেট ছিল, সেটা নেই। এ ছাড়া পরিবহনে চাঁদাবাজিও নেই। ফলে দাম কমিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। 

পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিংয়ে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। এটা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মূলত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দায়ী ছিল। এখন সেটা ভেঙে পড়ায় আগের চেয়ে দাম অনেকটা কমে আসতে শুরু করেছে। নতুন প্রশাসনের অধীনে হয়তো এতটা প্রকট সিন্ডিকেট বজায় রাখতে পারবে না। তাই দাম আরও কমে আসবে। তবে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আগে যারা চাঁদাবাজি করতো তারা সামনে নেই। নতুন কেউ যেন আবার পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি শুরু করতে না পারে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

কাওরান বাজারে সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, যা দুদিন আগেও ছিল ৬০ টাকা। ঢেঁড়সের কেজিও ৫০ থেকে নেমে এসেছে ৪০ টাকায়। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে, যা ছিল ৫০ টাকা কেজি। এমনকি মরিচের ঝাঁজও কমতে শুরু করেছে, ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। দুদিন আগেও এর দাম ছিল ৬০ টাকার উপরে। প্রতি কেজি বেগুন যেখানে বাজারভেদে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে এখন এলাকাভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। ৮০ টাকায় উঠে যাওয়া ঝিঙ্গা এখন ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কমেছে আলুর দামও। প্রতি কেজি আলু ৭০ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। এ ছাড়া, পেঁপের দাম ১০ টাকা কমে ৪০ টাকা এবং  পটোল ও ঢেঁড়স কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

সবজি বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে পণ্য ঠিকমতো আসতেছে। এর আগে মাল কম থাকায় দাম কিছুটা বাড়ছিল। আলুর দাম কেজিতে আছিলো ৭০ টাকা। এখন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেছি।’ সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিসুর বলেন, শুক্রবার থেকেই আন্দোলনের কারণে ঢাকায় সবজির সরবরাহ কমে যায়। এজন্য দাম বেড়ে গিয়েছিল। এখন আবার সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।

সবজির পাশাপাশি ডিম ও মুরগির দামও কমে এসেছে অনেকটা। আন্দোলনের সময় ডিমের হালি ৬০ টাকায় গিয়ে  ঠেকেছিল। কিন্তু এখন তা ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। কাওরান বাজারের ডিম বিক্রেতা নাসির জানান, মঙ্গলবার থেকে ডিম সরবরাহ আবার ঠিক হয়েছে। তাই দাম আগের জায়গায় নেমে এসেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে ২১০ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। এখন এটি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। 

কাওরান বাজারে আউয়াল ব্রয়লার বাজারের বিক্রেতা জসীম বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় বর্তমানে মুরগির দাম কমেছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২০০ টাকা, যা এ সপ্তাহে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৫ টাকায়। সোনালী বা পাকিস্তানি কক ৩২০ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৭০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায়, পাকিস্তান ও দেশি ক্রস ৪০০ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০ টাকা থেকে কমে বর্তমানে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে মুরগির দাম আরও কমবে বলে জানান তিনি।

ওদিকে গত দুইদিনে বাড়েনি চালের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, আগের মতোই মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, আটাশ চাল ৫৮ টাকা, মোটা চাল ৫২ টাকা থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। মসুর ডাল ১২৫-১৪০ টাকা, ছোলার দাম ১১০-১১৫ টাকা, ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা ও ৫ লিটার ৮০০-৮১০ টাকা, চিনির কেজি ১৩০ টাকা। 

মাছ বিক্রেতারা জানান, অন্য দিনের চেয়ে গত দুইদিনে বিভিন্ন আড়তে সরবরাহ কমে গেছে। রুই, কাতলার কেজি ৩৫০-৭০০ টাকা, চাষের চিংড়ি ৫৫০-৭০০ টাকা, নদীর চিংড়ি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাচকি ও মলা মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, পাঙাশ, তেলাপিয়া ২০০-২৫০ টাকা, ইলিশের কেজি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে সরবরাহ এখন স্বাভাবিক রয়েছে। দামও অনেক ক্ষেত্রে কমতির দিকে। রাজধানীর কাওরান বাজারে তদারকি শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ভোক্তার ডিজি বলেন, বাজারের ‘হিডেন কস্ট’ সম্পর্কে আপনারাও জানেন যে, কোথায় এ ধরনের কস্ট ছিল। ব্যবসায়ীদের সেসব খরচ কমে গেলে বা দিতে বাধ্য না হলে পণ্যের সরবরাহ বা ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য প্রাপ্তিতে সমস্যা হবে না। দামও স্থির রাখা সম্ভব হবে।